বিটকয়েনে আগ্রাসী বিনিয়োগে ব্যাংকের সম্পদে ধস

মার্কিন ও ইউরোপের আর্থিক খাতে সংকট

0

বিটকয়েনসহ ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ব্যাংকগুলোর আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করেছে।

এসব মুদ্রার দাম আগে বাড়লেও করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। গত এক বছরে বিটকয়েনের দাম কমেছে সাড়ে তিন গুণ। প্রতিটি বিটকয়েনের দাম ৬৪ হাজার ডলার থেকে কমে ১৯ হাজার ডলারে নেমেছে। এতে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর সম্পদ কমে গেছে ভয়াবহভাবে। কোনো কোনো ব্যাংকের সম্পদ কমেছে ৫০ শতাংশ।

এ ছাড়া হাউজিং খাতে আগ্রাসী বিনিয়োগ ও মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ে। এসব মিলে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক দেউলিয়ার পথে বসেছে। সংকট যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য দুটি ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক বড় সংকটে আছে।

ইউরোপের কয়েকটি ব্যাংকও সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এগুলোকে উদ্ধার করতে অন্যান্য ব্যাংকসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও এগিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। এ দুটি ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রিসিভার নিয়োগ করেছে। ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকও তারল্য সংকটে পড়েছে।

একে উদ্ধার করতে সে দেশের ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে ৩ হাজার কোটি ডলার আমানতের জোগান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা দিয়ে ব্যাংকটি আপাতত রক্ষা পেয়েছে। এদিকে সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যাংক ক্রেডিট সুইচও আর্থিক সংকটে পড়েছে। একে উদ্ধার করতে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদেরকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।

জানা গেছে, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনে বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এর দাম লাগামহীন গতিতে বাড়ছে বলে ওইসব দেশের গ্রাহকদের কাছে এর চাহিদা বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো এসব মুদ্রায় বিনিয়োগ করেছে। অনেক বড় বড় লেনদেন এখন বিটকয়েনের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। অথচ বিটকয়েনের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। কোনো দেশ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা এর কোনো গ্যারান্টিও নেই। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে এর দাম কমতে শুরু করলে ব্যাংকগুলোর সম্পদও দ্রুত কমে যায়।

২০০৯ সালের জুলাইয়ে বিটকয়েনের দাম ছিল ১ ডলার। ২০১৩ সালের একই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ ডলার। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরও বেড়ে হয় ৭৩৫ ডলার। ২০১৯ সালের নভেম্বরে হয় ১১ হাজার ৩৭০ ডলার। করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চে তা কমে ৫ হাজার ডলারে নেমে আসে। ওই বছরের নভেম্বরে আবার বেড়ে ১৯ হাজার ডলারে ওঠে। ২০২১ সালের নভেম্বরে এর দাম আরও বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ৪০০ ডলারে।

বিটকয়েনের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় ব্যক্তি ও করপোরেট বিনিয়োগকারীরাও এর প্রতি ঝুঁকে পড়ে। তারা বিটকয়েনে বিনিয়োগ করতে থাকে। পাশাপাশি গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো এতে আগ্রাসী বিনিয়োগ করে। প্রথম থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিটকয়েনের দাম যখন তুঙ্গে ছিল তখন ব্যাংকগুলোও ব্যবসা করে ফুলেফেঁপে ওঠে। কিন্তু এরপর থেকেই এর দাম কমতে থাকে। গত বছরের জুনে এর দাম ১৯ হাজার ডলারে নেমে যায়। ডিসেম্বরে সাড়ে ১৬ হাজার ডলারে নামে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে সামান্য বাড়তে থাকে। গত ১৭ মার্চ তা বেড়ে ২৩ হাজার ডলারে উঠেছে।

বিটকয়েনের দাম কমার কারণে যেসব ব্যাংক এতে আগ্রাসী বিনিয়োগ করেছে তারা বড় সংকটে পড়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোও সংকটে পড়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট বা বিশ্ব আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রার দাম যেভাবে কমছে এতে আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। কেননা বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিটকয়েন ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিটকয়েন অন্যতম একটি উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরাও আন্তর্জাতিক লেনদেন করার জন্য বিটকয়েনে আগাম বুকিং দিয়ে রাখছেন। এ পরিস্থিতিতে বিটকয়েনের দরপতন আরও বাড়লে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন। ইতোমধ্যে এর দাম কমার কারণে অনেকে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন বা যে কোনো ডিজিটাল মুদ্রায় সব ধরনের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে এসব মুদ্রায় ডিজিটাল সম্পদ স্থানান্তর বা হস্তান্তর করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কেননা বাংলাদেশে বিটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More