বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ছে চার কারণে

0

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বোঝা আগামীতে বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যেই বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক চারটি কারণ শনাক্ত করেছে। এগুলো হচ্ছে- সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার উলে­খযোগ্য অবমূল্যায়ন, আন্তর্জাতিক বাজারে বৈদেশিক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, বৈশ্বিকভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সংকোচনমুখী নীতি অনুসরণ। এসব কারণে স্থানীয় মুদ্রায় বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। ফলে আগামী যেসব বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে হবে সেগুলোর চাপ বেড়ে যাবে।

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর জন্য রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, এসব পদক্ষেপের ফলে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার আয়-ব্যয়ের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে আসবে। একইসঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসবে।

বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের ও বৈশ্বিক সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি ৩ মাস পরপর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে টাকার মানে স্থিতিশীলতা রাখার কথা বলা হলেও গত এক বছরে টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে সেটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। উলটো আরও বলা হয়েছে, বৈশ্বিক ও দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মানে আরও অবনতি হবে। এতে পণ্যের দাম আরও বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। ফলে মানুষের জীবরযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে ১১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেননা গত এক বছরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ডলারের টাকা বেড়েছে ২১ টাকা। অর্থাৎ ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। ফলে বাড়তি দরে ডলার কিনে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এতে টাকার হিসাবে ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে।

এছাড়াও আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার ছিল গড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এর সঙ্গে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) যোগ করে সুদের হার নির্ধারিত হয়। আগে লাইবর রেট ছিল ১ শতাংশের নিচে। এ হিসাবে সুদের হার পড়ত ৪ থেকে ৫ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো সুদের হার বাড়ানোর ফলে বর্তমানে লাইবর রেট বেড়ে গেছে। এ রেট এখন সাড়ে ৩ শতাংশের উপরে রয়েছে। ফলে এখন সুদের হারও প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ডলার সংকটে বর্তমানে অনেক ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এতে ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি অর্জিত নাও হতে পারে। ফলে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ এর মধ্যেই সীমিত থাকতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যমান দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত হারে হবে না। চলমান অনিশ্চয়তার কারণে সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব আরও ঘনীভূত হবে। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া চলমান অনিশ্চয়তার কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও সার্বিকভাবে অনিশ্চয়তা কাটেনি। যুদ্ধের কারণে একদিকে করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নতুন অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে আরও আঘাত করেছে।

উৎসঃ   যুগান্তর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More