রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা, ক্ষতি পোষানো অসম্ভব, সাত মাসে প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ

0

99826_1ঢাকা: চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ২.০৬ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কম হয়েছে ৪.১৯ শতাংশ।
এ সময়ে রপ্তানি বাজারে ধাক্কা খেয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এ খাতের ওভেন ও নিটওয়্যার রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে জানুয়ারিতে রপ্তানি কিছুটা ইতিবাচক হলেও সার্বিক পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক নয়। এ ছাড়া আগামী মাসগুলোতে রপ্তানির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিক্রিয়া আরো স্পষ্ট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রপ্তানি খাতের বিশেষজ্ঞরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ওভেন রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ৫.০৯ শতাংশ। আর নিটওয়্যার খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২.৯৪ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত চামড়া, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, সিরামিক পণ্যসহ অধিকাংশ পণ্যেরই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে ওভেন পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে ৫.০৯ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬৫ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার। তবে রপ্তানি হয়েছে ৭২৬ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ডলারের পণ্য।
আর নিট পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে ২.৯৪ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। রপ্তানি হয়েছে ৭১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ ডলারের পণ্য। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ওভেন খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১.২২ শতাংশ এবং নিটওয়্যার খাতে রপ্তানি বেড়েছে ২.৬২ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) জন্য রপ্তানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১,৮৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১,৭৭৯ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কম হয়েছে ৪. ১৯ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২.০৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১,৭৪৩ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
এ ছাড়া ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮৮ কোটি ৫১ লাখ ১৫ হাজার ডলার, যা ওই মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.০১ শতাংশ কম। আর গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ৪.৭৭ শতাংশ বেশি।
আলোচিত সময়ে রপ্তানি কমেছে হিমায়িত খাদ্যে ৫ দশমিক ০৫ শতাংশ, প্রক্রিয়াজাত চামড়ায় ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল খাতে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সিরামিক পণ্যে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও পেট্রোলিয়াম বায়ো-প্রোডাক্টস ৬৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কৃষিতে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, কেমিক্যাল খাতে ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্লাস্টিকে ৩১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, পাট খাতে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ রপ্তানি।
তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান রপ্তানি আয় নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই। আমরা শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে এই আয় আমাদের প্রত্যাশিত নয়। এ জন্য প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জানুয়ারিতে রপ্তানি কিছুটা ইতিবাচক হলেও সার্বিক পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক নয়। এ ছাড়া আগামী মাসগুলোতে রপ্তানির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিক্রিয়া আরো স্পষ্ট হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বছরের শেষে গিয়ে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ অর্জন করতে হলে বাকি মাসগুলোতে ন্যূনতম ১৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন হবে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে এক রকম অসম্ভব বলে মনে হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More