স্বাস্থ্যে সরকারের ব্যয় কম

0

b012602761edd4e4ce31ee9a4846f5dc-2স্বাস্থ্য খাতে সরকারি খরচের অংশ কমছে। প্রতিবছর সরকার বিভিন্ন খাতে যত টাকা খরচ করে, স্বাস্থ্য খাতে ক্রমেই এর অংশীদারত্ব কমেছে। আবার খরচের হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এ খাতটি পিছিয়ে পড়ছে। তবে টাকার অঙ্কে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়েছে। মোটা দাগে বলা চলে, অন্য খাতের তুলনায় সরকারের ব্যয় স্বাস্থ্য খাতে কমছে।
গতকাল মঙ্গলবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ চিত্র উঠে এসেছে। বনানীর পিআরআই কার্যালয়ে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের রিসার্চ ফেলো কানিজ সিদ্দিকী। সেমিনার সঞ্চালনা করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
কানিজ সিদ্দিকী তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেছেন, সরকার চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিতে পারছে না। রাজনীতিবিদেরা স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বাড়ানোর চেয়ে ভবন নির্মাণেই বেশি আগ্রহ দেখান। যদিও গরিবদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকার অর্থ ব্যয় করে, তবু স্বাস্থ্যসেবা বেশ নিম্নমানের। অন্যদিকে মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসাসেবা ক্রমশ ব্যয়বহুল হচ্ছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জিডিপির অনুপাতে গত পাঁচ অর্থবছরেই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কমেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে জিডিপির দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল স্বাস্থ্য খাতে। পরের তিন অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে জিডিপির দশমিক ৮ শতাংশ হারে। তবে গত অর্থবছরে তা আরও কমে দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। তবে এ হার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে নেপালে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ১ দশমিক ০১ শতাংশ ও ভুটানে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ খরচ হয়।
এদিকে সরকারি মোট ব্যয়ে স্বাস্থ্য খাতের অংশ কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট সরকারি ব্যয়ের ৫ শতাংশ বা ১০ হাজার ৪১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাঁচ বছর আগে, ২০১০-১১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হয়েছিল মোট সরকারি ব্যয়ের ৬ দশমিক ২ শতাংশ বা ৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে খরচ বাড়লেও মোট ব্যয়ে প্রতিবছরই স্বাস্থ্য খাতের অনুপাত কমছে। ২০১১-১২, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট খরচের যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
আবার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা টাকা খরচেও পারফরম্যান্স ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের প্রায় ৯৬ শতাংশ খরচ হয়েছে। পরে প্রতিবছরই খরচের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। গত অর্থবছরে বরাদ্দের প্রায় ৮৭ শতাংশ খরচ করা সম্ভব হয়েছে।
আলোচনা: মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আগামী পাঁচ বছরে জিডিপির অনুপাতে বাড়তি ১ শতাংশ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে খরচের পরিকল্পনা করা উচিত। এর ফলে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির দেড় শতাংশের বেশি খরচ হবে, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সমপরিমাণ হবে।
সাদিক আহমেদ মনে করেন, গুণগত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে চিকিৎসকেরা যেতে চান না। কিন্তু ওই অঞ্চল থেকেও চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে, তাঁদের সেখানেই পদায়ন করা যেতে পারে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সংস্কার করা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, স্বাস্থ্য খাতটি একটি বিনিয়োগ পণ্য। এ খাতে বিনিয়োগ করলে জাতি এর সুফল পায়। তাঁর মতে, বর্তমানে ৪২টি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করে, কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কোনো রিপোর্টিং কাঠামো নেই। ভৌগোলিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোতে আরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি ছাড়া জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে না। তিনি মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে সেবা সম্প্রসারণ করতে মানসম্পন্ন সরকারি ব্যয় দরকার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More