মিথ্যা র্যাগিংকে নিয়ে জড়িত মারামারির ঘটনার প্রেক্ষিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোববার সকাল ১১টায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোশারফ হোসেন রাজু, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, মাহমুদুল হাসান, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী অসীম বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে প্রক্টর কারুমজ্জামান মানবকণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে র্যাগিং ও মারামারির বিষয়ে প্রমাণ পাওয়ায় ওই ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি তদন্তে একটি ৩ সদস্যদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের (১/২ সেমিস্টার ও ২৪তম ব্যাচ) কমপক্ষে ৫০ জন সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রী ও একই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (১/১ সেমিস্টার ও ২৫তম ব্যাচ) ২০-২৫ জুনিয়রদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল।
ওই সময় এক মেয়ে তানিয়া (ছদ্মনাম) শারীরিক অসুস্থতার কারণে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে তানিয়ার পরিচিত ব্যবসায় প্রশাসনের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান তারই বিভাগের কিছু সহপাঠী যোগে হয়ে ১/২ সেমিস্টারের ছাত্র রাকিব, মোশারফ ও মাহমুদুলকে মারধর করলে তারাও পাল্টা মার দেয়।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যদিবসের মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টার মধ্যেই ৫ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের কোনো যোগাযোগও করেননি প্রশাসনের কেউই।
শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে গণিত বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, সঠিক তদন্ত না করে অল্প সময়ের এ সিদ্ধান্ত আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ।
এদিকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও একটি অনলাইনের সংবাদকর্মী সৈয়দ নবীউল ইসলাম দিপু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের আড্ডাটিকে র্যাগ ও তাতে এক মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে বলে ১০টিরও অধিক সংবাদ প্রকাশ করেছে গত ৩ দিনে।
এ ব্যাপারে প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভাগের শিক্ষকেরা একটি প্রাথমিক তদন্ত করেছি। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনো ধরণের র্যাগের কথা প্রমাণিত হয়নি। আর যৌন নির্যাতনের তো প্রশ্নই আসে না।
তিনি আরও বলেন, যারা নোংরা নিউজের মাধ্যমে আমাদের বিভাগকে অপমানিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সম্মানহানি ও শিক্ষার্থী বহিষ্কারের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণিত বিভাগের ২৪ ও ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা।
পরে সেখানেই এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ২৫ তম ব্যাচের ছাত্রী সালওয়া রাফি বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা ভাইয়া-আপুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ওইখানে কোনো ধরণের র্যাগের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু কিছু অনলাইনের কুরুচিপূর্ণ সংবাদে আমরা হতবাক। আমরা এর তীব্র ও নিন্দা প্রতিবাদ জানাই।
এছাড়া ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে গণিত বিভাগের ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
Next Post