‘ছোটবেলায় এমন কিছু নাই, যা ও হতে চাইত না। কখনো বলত আমি বিজ্ঞানী হব, কখনো প্রকৌশলী। আমরা এসব ওর পাগলামিই ভাবতাম।’ বললেন শাহিনা খন্দকার, শাহ্তাজের মা।
শাহ্তাজ। পুরো নাম শাহ্তাজ মুনিরা হাশেম। ছোটবেলায় এই ‘অনেক কিছু’ হতে চাওয়া মেয়েটি এখন মডেল। অভিনয়ও করছেন। সামনে আর কী কী করবেন? এই প্রশ্নটি তাঁকে কেন করা হচ্ছে? কারণ, শাহ্তাজ ছবি অাঁকেন, গান করেন। মডেলিং আর অভিনয় তো করছেনই। তবে শাহ্তাজ বললেন, ‘আমি সবকিছুই করি, কিন্তু কিছুই করি না।’
২৩ আগস্ট দুপুরে মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন শাহ্তাজ। বললেন, ‘আমার স্বপ্নগুলো খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়।’
এখন কী স্বপ্ন দেখছেন? শাহ্তাজ বললেন, পড়াশোনা শেষ করে তিনি জাপানে যাবেন। সেখানে অ্যানিমেশন ছবির ডাবিং করবেন তিনি।
শাহ্তাজকে এখন অনেকেই চেনেন। কীভাবে? একটি সংলাপ, ‘আমি যা দেখি, তুমি কি তা দেখ?’ গাজী টিভির বিজ্ঞাপনচিত্র। এই একটি বিজ্ঞাপনচিত্র সামনে নিয়ে এসেছে শাহ্তাজকে।
শাহ্তাজ পড়াশোনা করছেন। এবার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা দেবেন। কিন্তু টিভিতে তিনি কবে থেকে কাজ করছেন? শাহ্তাজ জানালেন, তাঁর শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ফেসবুকে আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি প্রথম হন। তাঁর ছবি দেওয়া হয় সেই পণ্যের ফেসবুক পেজে। তারপর ফটোশুট। বদলে যায় শাহ্তাজের সবকিছু। ফটোশুট শাহ্তাজের কাছে কেবলই ‘ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার’ পরিবর্তন করার সুযোগ। এই ফটোশুটই তাঁকে নিয়ে আসে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সামনে। তখন মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের জন্য নতুন মডেল খোঁজা হচ্ছে। শাহ্তাজকে পেয়ে সেই খোঁজাখুঁজি থেমে যায়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁকে নিয়ে একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরি করেন। এরপর তিনি কাজ করেছেন অন্য নির্মাতাদের সঙ্গেও। সব মিলিয়ে এখন শাহ্তাজের ১০টি বিজ্ঞাপনচিত্র দেখানো হচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলোতে।
আর অভিনয়? সে ফিরিস্তিও তুলে ধরেন শাহ্তাজ। এখন পর্যন্ত কয়েকটি নাটক ও টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন। প্রথমটির নাম আলপনা কাজল। এ বছর ভালোবাসা দিবসে ক্লোজআপের চিনিগুঁড়া প্রেম টেলিছবিতে তাহসানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এই টেলিছবিটি শাহ্তাজের আলাদা অবস্থান তৈরি করে। এর আগে ২০১৪ সালে ভালোবাসা দিবসে এসএ টিভিতে একটি অনুষ্ঠানে গান করেন শাহ্তাজ। কাজ করেছেন মিউজিক ভিডিওতে। গানের শিল্পী নন, মিউজিক ভিডিওর মডেল হয়েছেন তিনি। সালমান মুক্তাদিরের সঙ্গে তাঁর ফান ভিডিও যে ইউটিউবে কতবার শেয়ার হয়েছে, তা বলতে গিয়ে শাহ্তাজের হাসি যেন আর থামছে না।
শাহ্তাজ এত কিছু কীভাবে করছেন? বললেন, ‘আমি প্রথমে পরিস্থিতি বুঝে নিই। তারপর সেখানে নিজেকে দাঁড় করাই। ভাবি, আমি হলে এখন কী করতাম। তারপর তা-ই করি।’
এরই মধ্যে চলচ্চিত্রেও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন শাহ্তাজ। সবকিছুই ধীরে, জেনে, বুঝে, শুনে এগোতে চান তিনি। সুযোগ পেলেই কাজ করতে হবে—এটা মানতে চাননি। বললেন, ‘যে ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের পরিবর্তন আনবে, আমি সেই পরিবর্তনের অংশীদার হতে পারব, এমন ছবিতেই অভিনয় করব।’
এদিকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন মা। মেয়ের কথা শুনছেন। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে শাহ্তাজ সবার ছোট। আর এই মেয়েকে তিনি একটু বেশি আদর করেন। মা স্বপ্ন দেখছেন, তাঁর মেয়ে একদিন সফল হবে।
Prev Post
Next Post