বলিউড কয়েকছত্র এ আর রহমান

0

79dcc3a0f4ba523166107d5a61ce82fa-a-r-rahmanসংগীত পরিচালক কিংবা সুরকার মানেই পর্দার পেছনের মানুষ—তাঁর সৃষ্ট সুর সফল হলে সেই গান নিয়ে মাতামাতি হবে। কিন্তু সংগীত পরিচালক কিংবা সুরকার হয়েও যে রীতিমতো প্রথম সারির তারকা হওয়া যায়, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা যায়, তার প্রমাণ এ আর রহমান। ভারতের চলচ্চিত্র জগতে তিনি তারকাদের তারকা। নেপথ্যের মানুষ হয়েও এমন তারকাবাজি, এ আর রহমানের আগে কোনো ভারতীয় সংগীত পরিচালক করে দেখাতে পারেননি। অস্কার জেতার পর ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর হৃদয়ে সুরের মাধ্যমে নিজের জন্য পোক্ত আসন পেতে ফেলেছেন এ আর রহমান। তিনি হলিউডকে বাধ্য করেছেন বলিউড সম্পর্কে নাক সিঁটকানো মনোভাব ছাড়তে। তাঁকে দক্ষিণ ভারতের মানুষ ডাকে ‘দ্য মোৎ​সার্ট অব মাদ্রাজ’ নামে। রজনীকান্তের কাছাকাছি তাঁর জনপ্রিয়তা।
আজ ৬ জানুয়ারি সুরকার এ আর রহমানের জন্মদিন।
১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান এ আর রহমান জন্মেছিলেন এ এস দিলীপ কুমার নামে। বাবা তামিল সংগীত পরিচালক আর কে শেখর এবং মা গৃহবধূ কস্তুরি দেবী। বাবা সংগীত পরিচালক হলেও বাবার কাছ থেকে সংগীত শিক্ষা নেওয়ার খুব বেশি সুযোগ পাননি। কারণ, ১৯৭৬ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। পিতার চিকিৎসার জন্য টাকার অভাব, তার যন্ত্রণা, পরিচিত মানুষের তীব্র উদাসীনতা এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের উপেক্ষা দিলীপকে খুব কষ্ট দেয়। আরও কষ্ট দেয়, বিশেষত তাঁর পিতার মৃত্যুর দিনটি। ওই দিনেই তার বাবার সুরারোপিত প্রথম চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলেও তা তিনি দেখে যেতে পারেননি।

বাবা চলে যাওয়ার পর মাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠেছেন রহমান। বাবার দুটো কি-বোর্ড ভাড়া দিয়ে তখন সংসার চলত তাঁদের। ১১ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা দলের সঙ্গে কি-বোর্ড বাজাতে শুরু করেন রহমান। সেটা অবশ্য নেহাতই পেটের দায়ে। ভারতীয় একটি সংগীত মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ আর রহমান বলেছিলেন, ১১ বছর বয়স থেকেই অনেকে আমাকে চিনত। আমার কাজ ছিল, ফরমায়েশি ফিল্মি গান কি-বোর্ডে বাজানো।’
বাবা যাওয়ার আগে পেছনে রেখে যান তাঁর স্ত্রী কস্তুরি (এখন করিমা বেগম) এবং তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বোনেদের নাম কাঞ্চনা, তালাত ও ইশরাত। এই তিন বোন ও মায়ের সংসার চালানোর সব দায়িত্ব এসে পড়ে বালক দিলীপের ওপর। ১১ বছর বয়সে তিনি ইলিয়া রাজা সংগীত দলে যোগ দেন কিবোর্ড প্লেয়ার রূপে। ইতিমধ্যে তিনি গিটার বাজানো শেখেন। এভাবে এ আর রহমান চূড়ান্তভাবে গানের ভুবনে ঢোকেন। বিধবা মা’ই প্রেরণা দেন, যিনি চেয়েছিলেন ছেলে যেন প্রয়াত স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
গানের ভুবনে ঢোকার ফলে এ আর রহমানের আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তিনি খুব নামকরা দু’টি শিক্ষায়তন পদ্মশেষাদ্রী বাল ভবন এবং মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তবুও এমভি বিশ্বনাথন, রাজকোটি, রমেশ নাইডুর অর্কেস্ট্রায় কর্মরত থাকেন। এই অর্কেস্ট্রার সঙ্গে তিনি বিশ্ব ভ্রমণে যান এবং জাকির হোসেন ও কুন্নাকুডি বিদ্যানাথনের সঙ্গে বাজনায় অংশ নেন। তার প্রতিভায় অনেকে আকৃষ্ট হন এবং তাকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন। এখানেই ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল মিউজিকে একটি ডিগ্রি আয়ত্ত করার পর তিনি ভারতে ফিরে যান।
১৯৮৮ সালে তিনি ও তার পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দিলীপ হয়ে যান এ আর রহমান।
গানের জন্যই বেঁচে থাকা: ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আর রহমান বলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে গানের জন্য। আমি গানের জন্যই বেঁচে আছি এবং শেষ পর্যন্ত গানের জন্যই বেঁচে থাকব।’
এবার শুনুন গানের ভুবনে তারকা হয়ে যাওয়ার গল্পটা। তখন ১৯৯২ সাল। তামিল পরিচালক মণিরত্নম একটি কফির বিজ্ঞাপনের জিঙ্গলসে সুর দিয়ে মাতিয়ে দেওয়া ২৫ বছর বয়সী ছেলেটিকে সুযোগ দিলেন তার ‘রোজা’ ছবির সংগীত পরিচালনার। তামিল ভাষায় তৈরি ছবিটি হিন্দিতে ডাব করা হয়েছিল। দুই ভাষাতেই রোজা’র সব কটি গান দারুণ হিট হয়। এর পর থেকে আর পেছনে তাকানো নয়, তার দেওয়া সুর কখনো ফ্লপ করেনি। জীবনের প্রথম ছবির জন্যই পেয়েছিলেন রজত কমল (জাতীয় পুরস্কার), আজ পর্যন্ত এই রেকর্ড অন্য কোনো সংগীত পরিচালকের নেই।
‘রোজা’ ছবিটি এবং এর গান সারা ভারতে সুপারহিট হওয়ার পরও চেন্নাই ছেড়ে বলিউডে আসার কোনো পরিকল্পনা করেননি তিনি। হিন্দি ভাষাটা বিশেষ বুঝতেন না। তাই ওই ভাষার সুর করতেও চাইতেন না। কিন্তু রামগোপাল ভার্মাও নাছোড়বান্দা। ‘রঙ্গিলা’র জন্য তারও রহমানকেই চাই। অনেক টালবাহানার পর রাজি হলেন রহমান। আর তার ক্যারিয়ারের একটা নতুন দিকও শুরু হলো। ‘রঙ্গিলা’ ১৯৯৫ সালে সুপারহিট হলো। রহমানের হিন্দি ভীতিও কাটল। এর পরের মোড় আসে ১৯৯৭ সালে। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৫০ বছর উপলক্ষে ‘বন্দে মাতরম’-এ নতুন করে সুর দেন রহমান। ‘মা তুঝে সালাম’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন, মিউজিক ভিডিওতে দেখা যায় তাঁকে। সেখান থেকে তার ক্যারিয়ারের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হলিউডেও পৌঁছে যান এ আর রহমান। জয় করেন অস্কারও।
পারিবারিকভাবেই স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে খাদিজা, রহিমা এবং আমিন।
তাঁর জন্মদিনে জেনে নিন কিছু অজানা তথ্য
১) এ আর রহমান আসলে সুরকার নয়, কৈশোরে হতে চেয়েছিলেন ইলেকট্রনিকস অথবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এ আর রহমান তার স্মৃতিচারণায় বলেন, মিউজিকের জন্য ততটা পাগল ছিলাম না যতটা ছিলাম টেকনোলজির প্রতি। ঘটনাচক্রে মিউজিক ও টেকনোলজি উভয়ের সম্মিলন হয় সিনথেসাইজারের মাধ্যমে।
২) কানাডার মারখামের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে।
৩) আজ শুধু এ আর রহমানেরই জন্মদিন নয়, তাঁর ছেলে আমিনেরও জন্মদিন!
৪) শুধু ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ নয়, এ আর রহমান সুরকার করেছেন হলিউডের জনপ্রিয় মুভি ‘১২৭ আওয়ারস’ এবং ‘লর্ড অব ওয়ার’-এ।
৫) ২০০০ সালে এ আর রহমানেরই জিঙ্গেলে একটি ফরাসি বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল জিনেদিন জিদানকেও!

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More