রিয়ার মুখে নেই ফারিয়া!

0

4ce40da5be7a6ac5226e950e266fd8a7-বাংলাজুড়ে এবার রাজত্ব করার বাসনা রিয়া সেনের! যার শুরুটা যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘হিরো ৪২০’ দিয়ে। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন ভারতের একটি পত্রিকাকে। ছবিটিতে তার চরিত্র এবং এর ভারতীয় নায়ক-পরিচালক-প্রযোজক ও বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন সুচিত্রা সেনের এই নাতনি। যদিও পুরো সাক্ষাৎকার পড়লে এটুকু স্পষ্ট- সচেতনভাবেই রিয়া এড়িয়ে গেছেন ছবির প্রধান নায়িকাকে। দীর্ঘ এ আলাপে রিয়ার মুখে টু-শব্দটিও ছিল না ছবির প্রধান নায়িকা ফারিয়ার নামে। কিংবা বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার নামও। তবে তো পুরনো কথাই নতুন করে এলো, ‘রিয়া-ফারিয়ার দ্বন্দ্ব, চোখাচোখিও বন্ধ!’

সুক্ষ্ম বিচারে রিয়ার এ আলাপচারিতায় এটুকু পরিষ্কার, তার ছন্দহীন ক্যারিয়ার এবং কোণঠাসা টালিগঞ্জের জন্য বাংলাদেশের সিনেমার বাজার এখন খুব জরুরি। যার অন্যতম সিঁড়ি হতে পারে নির্মিতব্য ‘হিরো ৪২০’। বাকিটা জেনে নিন ‘এবেলা’র আরুণি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রিয়ার আলাপচারিতা থেকে।

36e0afe516b98d5de3cd7f48bdd1ab5d-হিরো ৪২০’ ছবিতে আপনার চরিত্রটা কেমন?
ধনী পরিবারের বিগড়ে যাওয়া মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। বেশ মজার চরিত্রটা!

প্রথমবার ওমের সঙ্গে কাজ করলেন। কেমন লাগল?
খুব ভাল লেগেছে! ও খুব সাদাসিধে এবং নম্র। মানুষ হিসেবেও খুব ভাল। অ্যাটিটিউড, ইগো, ট্যানট্রাম— এগুলোর একটাও ওর নেই। ওমের মধ্যে আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, ও নিজের কাজের প্রতি অত্যন্ত ফোকাস্‌ড। যদি এক কথায় জানতে চান, কেমন লাগল ওর সঙ্গে কাজ করে? শুধু বলব— গ্রেট!

আর সুজিত মণ্ডলের (পরিচালক) সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা?
আই লাভ হিম। জানেন আমরা দু’জনেই পাগল (হাসি)! আমরা প্রায়ই ঝগড়া করি। কিছুক্ষণ পর ফের আমাদের মধ্যে সব মিটমাট হয়ে যায়। কাজটা শুরুর আগে চিত্রনাট্য শোনাতে ও আমাদের বাড়িতেও এসেছিল। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই।

বলুন না!
‘হিরো ৪২০’ ছবিটা করতে গিয়ে ছবির হিরো, পরিচালক, প্রযোজক (হিমাংশু ধানুকা) এবং আমি— খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছি। ওঁরা প্রত্যেকেই খুব ভাল। কাজ ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে ওঁদের
সঙ্গে কথা হয়।

b7c5e0064d700d3c2359891c9bbb74a1--2কলকাতা কলিং’, ‘রোগা হওয়ার সহজ উপায়’ এবং হালের ‘হিরো ৪২০’— সবগুলোই তো বিভিন্ন জঁরের। নিজেকে পরখ করছেন?
আমি মনে করি, একজন অভিনেতার কখনও টাইপকাস্ট হওয়া উচিত নয়। বলিউডেও আমি বিভিন্ন রকমের ছবি করেছি। ‘স্টাইল’, ‘ঝঙ্কার বিট্‌স’, ‘কয়ামত’ বা ‘আপনা সপনা মানি মানি’। এগুলোর পর ‘নৌকাডুবি’তে অভিনয় করেছি। আবার মুম্বইয়ে ফিরে গিয়েছি। যাই হোক, প্রথম থেকেই বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করব, ঠিক করে রেখেছিলাম। আর একটা ব্যাপার জানেন তো, ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যেক অভিনেতাই কখনও না কখনও টাইপকাস্ট হয়েই যান! সেটা যাতে আমার সঙ্গে না হয়, সে জন্য আমাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর ঠিক সে কারণেই আমি সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) ‘জাতিস্মর’এ অভিনয় করেছিলাম। ছবিটায় আমার দু’দিনের কাজ ছিল। ভেবেছিলাম, সেটা আমার ইমেজ ব্রেক করতে সাহায্য করবে।

তারপর?
ইমেজ ব্রেক হয়েছিল! তার পরেই তো মৈনাকের (ভৌমিক) ছবিতে কাজ করি। ‘কলকাতা কলিং’ এবং ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’। এখন ‘হিরো ৪২০’ করছি। এটা পুরোপুরি কমার্শিয়াল ছবি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। বিভিন্ন জঁরের ছবি
করতে চাই!

হিরো…’ তো ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি। এর মাধ্যমে কি দু’দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কোনও লাভ হবে বলে মনে করেন?
ইট্‌স আ গ্রেট আইডিয়া! যৌথ প্রযোজনার ফলে বাংলা ছবির বাজারটা বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ— দু’টো বাজারই ব্যবহার করা যাচ্ছে। আরে, এদেশ আর ওদেশ— যাই হোক না কেন, দিনের শেষে আমরা তো সকলে বাঙালিই! আর বাংলাদেশের প্রতি আমার একটা দুর্বলতাও রয়েছে। আমার দিদিমা (সুচিত্রা সেন) বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে। বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গিয়েছি। আবার যেতে চাই (হাসি)! ওদেশের অনেক ছবির অফার পাচ্ছি। জানেন, দিদিমার নামে ওখানে একটি মিউজিয়ামও বানানো হচ্ছে! যাই হোক, আমার মনে হয় যৌথ প্রযোজনার ব্যাপারটা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে দারুণ একটা সিদ্ধান্ত!

0de938fb0c81eab6c0c5e184b43fc033-দিদিমার প্রসঙ্গ যখন এলই, একটা প্রশ্ন না করে পারছি না! দিদিমাকে মিস্‌ করেন?
প্রতিদিন…! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। প্রতি মুহূর্তে মিস্‌ করি। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। ‘হিরো ৪২০’ ছবিতে আমার প্রথমদিনের শ্যুটিং ছিল ‘টেকনিশিয়ান্‌স স্টুডিও’য়। কলটাইম ছিল ভোর ৫টায়। আমি ভিসা অফিস থেকে বেরিয়ে আসছি, এটাই ছিল দৃশ্য। সেই মতো সেট সাজানো হয়েছিল। এর পরই আমার সঙ্গে একটা মজার ঘটনা ঘটে। আমি কাচের দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসছি। হঠাৎ দরজায় দিদিমার একটি পোর্ট্রেটের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলাম। সেট’এ অনেকেই কথাটা জানেন। তাঁদের অনেকেরই মনে হয়েছিল, ওটা নাকি সৌভাগ্যের ইঙ্গিত! জানেন, এই কথাটা এখনও বাড়িতে কাউকে বলিনি। বলব ভেবেছি। কিন্তু বার বার ভুলে গিয়েছি। তাই ফের ভুলে যাওয়ার আগে ‘ওবেলা’কে জানিয়ে রাখলাম (হাসি)।

আপনি দিদিমার ঠিক কতটা কাছের ছিলেন?
খুব! হতে পারেন উনি একজন লেজেন্ড। কিন্তু আমাদের কাছে শুধু দিদিমাই ছিলেন। যিনি আমাদের প্রচণ্ড ভালবাসতেন। নিঃশর্ত ভালবাসা! উনি হয়তো আর নেই। কিন্তু ওঁর ভালবাসাটা রয়ে গিয়েছে।

মুম্বইয়ে কী কাজ করছেন?
একটা ছবির ব্যাপারে কথা চলছে। আগামিকাল (শুক্রবার) থেকে অন্য একটা কাজ শুরু হওয়ার কথা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনই এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলব না। আগে কাজটা হোক, তারপর না হয় কথা বলা যাবে। তবে শুধু হিন্দি নয়। দক্ষিণের ছবিও করতে চাই। তামিল, তেলুগু, মালয়ালি ছবিতে আগেও কাজ করেছি। ভাল চিত্রনাট্য পেলে আবার কাজ করব। ভাষাটা আমার কাছে কোনও বাধা নয়!

আচ্ছা ‘হিরো ৪২০’সেটে কি আপনার মা (মুনমুন সেন) যেতেন?
(একটু ভেবে) মা একদিনই সেট’এ গিয়েছিল। তখন শ্যুটিং হচ্ছিল হায়দরাবাদে। আসলে মা-ই তো সেট’এ আসতে চায় না। হিমাংশু বার বার করে মা’কে আমাদের সেট’এ আসতে বলেছিল। কিন্তু মা যায়নি। ব্যাঙ্ককে আউটডোরে যাওয়া তো দূরের কথা, কলকাতার শ্যুটিংয়েও মা আসেনি!

340499e95d4cf38c0118e0443428cf27--1শোনা যায়, আপনি নাকি একটু খামখেয়ালি স্বভাবের? একবার নাকি আইডি কার্ড না নিয়ে বিমানবন্দরে চেক-ইন করতে চলে গিয়েছিলেন?
(জোরে হেসে) হ্যাঁ, আমি একটু ক্যাবলা আছি বটে! (একটু থেমে) এই সব ব্যাপারগুলো আমার সঙ্গে হতেই থাকে। বাবা এই জন্য খুব রেগেও যায়! আমি প্রায় প্রতিদিনই আমার আই-কার্ডগুলো হারিয়ে ফেলি। প্যান কার্ড, আধার কার্ড কোথাও না কোথাও হারিয়ে যায়ই। বাড়ির সকলে আমার এই হারানোর ব্যাপারটা নিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছে। তবে আমার একার নয়, রাইমারও মাঝে মাঝে এটা-ওটা হারিয়ে যায়!

তাই?
হ্যাঁ। ও যখন ক্রেডিট কার্ড হারিয়ে ফেলে, বাড়িতে কাউকে বলে না জানেন! শুধু আমাকে এসে বলে। তারপর নিজেই ব্যাঙ্কে ফোন করে (হাসি)! আমাদের পরিবারে এই ব্যাপারগুলো চলতেই থাকে।

সেট্‌করার কোনও প্ল্যান?
আমি তো অলরেডি সেটল্‌ড (হাসি)। জোক্‌স অ্যাপার্ট, মনের মতো মানুষ খুঁজছি!

বিতর্ক এমন একটা বিষয় যা তারকাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। একাধিকবার আপনার নামও বিতর্কে জড়িয়েছে। রিয়া সেনের মতে, বিতর্ক এড়ানোর সেরা উপায় কী?
ইগনোর করা! জাস্ট ইগনোর করা। যারা আমার ব্যাপারে জেলাস, তারাই এগুলো নিয়ে লিখবে। চর্চা করবে। বিতর্ক বা গুজব মানে হল, যেটা সত্যি নয়! যদি সত্যি না-ই হয়, তাহলে বিষয়টা নিয়ে আমি মাথা ঘামাবই বা কেন! কী হয়েছে, কেন হয়েছে— এত কৈফিয়ত আমি কাউকে কেন দেব বলুন তো?

7b04a29d16dbf9c64376dcce32eed75c-ভবিষ্যতে আপনার কি রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে রয়েছে?
অনেকেই আমাকে এই প্রশ্নটা করেন। রাজনীতি বিষয়টা ঠিক কী, সে সম্পর্কে যতদিন যথেষ্ট ধারণা তৈরি না হচ্ছে, ততদিন রাজনীতি করাটা অর্থহীন। রাজনীতিতে অনেক মানুষের অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে হয়। মায়ের সঙ্গে বাঁকুড়ায় প্রচারে গিয়েছিলাম। ওখানকার মানুষের কাছ থেকে এত ভালবাসা পেয়েছি যে, আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছি! পরে মুম্বই ফিরে আমার সাধের বিছানাটায় বসে দেওয়ালের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম, ঘোর বাস্তব থেকে আমি কতটা দূরে থাকি। রাজনীতিতে অনেক মানুষকে কথা দিতে হয়। ভোটের সময় দেওয়া কথাগুলো পূরণ করতে পারব না এটা জেনেও আমি কেন রাজনীতিতে যোগ দেব বলুন তো?

মুনমুন সেনের রাজনৈতিক কেরিয়ার নিয়ে আপনার কী মূল্যায়ন?
মা বাঁকুড়ার জন্য যা করেছেন, তার জন্য আমি মা’কে সম্মান করি। ফ্যামিলি টাইমের অনেকটা অংশ মা রাজনীতি এবং বাঁকুড়ার মানুষকে দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনার কেমন লাগে?
শি ইজ দ্য স্ট্রংগেস্ট ওম্যান আই হ্যাভ এভার সিন। হ্যাট্‌স অফ!

প্রসঙ্গত, সদ্য শ্যুটিং শেষ হওয়া ‘হিরো ৪২০’ পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের সৈকত নাসির ও কলকাতার সুজিত মণ্ডল। প্রযোজনা-পরিবেশনায় বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও কলকাতার এসকে মুভিজ। ছবিতে আরও অভিনয় করছেন বাংলাদেশের শিমুল খান, ভারতের আশিষ বিদ্যার্থী, খরাজ মুখার্জি প্রমূখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More