অধিনায়ক হলেই তো ভালো খেলেন মুশফিক

0

e2660f029805261c9ddb8851d7b3bdcd-Mushfiq---Copyদলের মূল ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। কিপিংও করেন। পুরো ম্যাচে এমনিতেই এক মুহূর্ত ‘অলস’ সময় কাটানোর উপায় নেই। তার ওপর আছে অধিনায়কত্বের দায়িত্বও। কত চাপ মুশফিকুর রহিমের ওপর! এই চাপ থেকে মুক্ত করতেই বিপিএলে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে অধিনায়কত্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন মুশফিক। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শহীদ আফ্রিদির হাতে।
এর আগে বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব থেকেও মুশফিককে ‘মুক্তি’ দেওয়া হয়েছিল। কারণ? চাপ বেশি হয়ে যাচ্ছে ২৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের ওপর।
আসলেই কী তাই? চাপে মুষড়ে পড়েন মুশফিক? পরিসংখ্যান তো বলছে উল্টো কথা। দলের নেতার বাড়তি দায়িত্বই যেন বেশি অনুপ্রাণিত করে মুশফিককে। অধিনায়ক হলেই বরং বেশি ভালো খেলেন মুশফিক।
অবশ্য ‘চাপ’ ব্যাপারটাকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। দলীয় চাপ ও ব্যক্তিগত চাপ। একজন অধিনায়কের যেমন দলের ভেতরের পরিবেশটা ঠিক রাখার দায়িত্ব থাকে, অনুপ্রাণিত করতে হয় খেলোয়াড়দের, তেমনি নিজের পারফরম্যান্স ঠিক রাখার চাপও থাকে। দলের ওপর কেমন প্রভাব রাখতে পেরেছেন মুশফিক, তাঁর চেয়ে বাংলাদেশ দলে মাশরাফি কিংবা সিলেট দলে আফ্রিদির প্রভাব বেশি কিনা – সেটি অন্য বিতর্ক। রেকর্ড মুশফিকের বিপক্ষেই কথা বলবে সেই বিতর্কে। মুশফিকের বদলি হিসেবে অধিনায়ক হয়েই যে বাংলাদেশ দলের খোলনলচে বদলে দিয়েছেন মাশরাফি। এই বছর যে দুর্দান্ত বাংলাদেশ দলকে দেখা গেছে, তাতে অধিনায়ক মাশরাফির অবদান অনেকটাই। বিপিএলেও মুশফিকের চেয়ে পারফরম্যান্সের বিচারে আফ্রিদিই অধিনায়ক হিসেবে বেশি সফল ছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ ম্যাচের মধ্যে দুটিকে দলকে জিতিয়েছেন আফ্রিদি। যেখানে মুশফিক অধিনায়ক থাকার সময়ে ৬ ম্যাচে দলটি জিতেছিল শুধু একটিতে!
তবে দলীয় পারফরম্যান্সকে একপাশে রেখে শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বিচার করলে দেখা যাবে, অধিনায়কত্বের ‘চাপ’টা বেশ ভালোই উপভোগ করেন মুশফিক। অধিনায়ক হলেই তাঁর ব্যাট আরও চওড়া হয়ে ওঠে।
এই বিপিএলের কথাই ধরুন। গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ে যাওয়া সিলেট সুপারস্টার্সের হয়ে ১০ ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন ‘আইকন’ খেলোয়াড় মুশফিক। ৯ ইনিংসে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাতে ২৬.১৬ গড়ে তাঁর রান ১৫৭, দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শুধু দিলশান মুনাবীরাই তাঁর চেয়ে বেশি রান করেছেন (৮ ম্যাচে ১৭৩)। মজার ব্যাপার, মুশফিকের ১৫৭ রানের ১৪৫-ই এসেছে প্রথম ছয় ম্যাচে, যে ছয় ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন তিনি। শেষ চার ম্যাচে শুধুই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। এক ম্যাচে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। বাকি ৩ ম্যাচে তাঁর রান – ৯, ১* ও ২!
এ তো গেল বিপিএলের কথা। বাংলাদেশের জার্সিতেও অধিনায়ক মুশফিকের পারফরম্যান্স ‘শুধুই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান’ মুশফিকের চেয়ে ভালো। টেস্টে তুলনা করাটা অনেক সহজ। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৪৮টি টেস্ট খেলেছেন মুশফিক, যার অর্ধেকে ছিলেন অধিনায়ক, বাকি ২৪ ম্যাচে ‘সাধারণ’ খেলোয়াড়। অধিনায়ক হিসেবে খেলা ২৪ ম্যাচে তাঁর রান ১৪৫৫। গড় ৩৮.২৮। সেঞ্চুরি ২টি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটাও এসেছে ‘অধিনায়ক’ মুশফিকের ব্যাট থেকে – ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র হওয়া গল টেস্টে ২০০।
মজার ব্যাপার, এই চল্লিশ ছোঁয়া গড়টাই ঝুপ করে ত্রিশের নিচে নেমে যায়, যখন তিনি অধিনায়ক হিসেবে খেলেন না। ‘সাধারণ’ খেলোয়াড় হিসেবে খেলা ২৪ টেস্টে মুশফিকের গড় মাত্র ২৭.১৫! ১১৯৫ রানের মধ্যে সেঞ্চুরি আছে মাত্র ১টি (ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ১০১)। অবশ্য এই ২৪ টেস্টের সবগুলোই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে। যখন এতটা পরিপক্ক হয়ে ওঠেননি, আজকের ভরসার ‘মুশি’ হয়ে উঠতে পারেননি।
টেস্টের মতো ব্যাটিং গড়ের এই বিপরীত অবস্থা সংক্ষিপ্ত সংস্করণেও। সবচেয়ে বেশি করে ব্যবধানটা চোখে পড়ে টি-টোয়েন্টিতে। চার-ছক্কার ক্রিকেটে ‘অধিনায়ক’ মুশফিকের গড় যেখানে ২৪.৫৮, সেখানে ‘শুধুই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান’ হিসেবে খেললে মুশফিকের ব্যাটিং গড় দাঁড়ায় মাত্র ১০.৭৮। অথচ খুব বেশি যে ম্যাচের তারতম্য আছে তা নয়। অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২৩টি, অধিনায়কত্ব ছাড়া ২০টি।

ওয়ানডেতে অবশ্য কিছুটা কমেছে পারফরম্যান্সের এই ব্যবধান। অবশ্য সেখানেও এগিয়ে অধিনায়ক মুশফিকের পরিসংখ্যান। অধিনায়কত্ব ছাড়া ১২১ ওয়ানডেতে মুশফিকের রান ৩০.৬৯ গড়ে ২৮৫৫। অধিনায়ক হিসেবে খেলা ৩৭ ওয়ানডেতে সেটি ৩৪.৩৫। রান করেছেন ১০৬৫।
কেউ কেউ থাকেন যাঁরা বাড়তি দায়িত্ব পেলে আরও উজ্জ্বল হয়ে ঝলসে ওঠেন। মুশফিকও হয়তো তাঁদেরই একজন। তবে অধিনায়ক হোন বা না হোন, বাড়তি ‘চাপ’টা নিয়েই না হয় ব্যাটিং করুন মুশফিক!

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More