অভিমানী মেসি

0

Messi[ads1]তীব্র, ঝাঁঝাল গন্ধ তখন মাঠ জুড়ে!‌ গ্যালারি জুড়ে!‌ ‘‌চিলি’‌র এই তীব্র ঝাঁঝ সহ্য হচ্ছিল না। কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না!‌ ডাগ আউটে বসে। চোখ জ্বালছিল, গলা-‌বুক জ্বলছিল। বলা ভালো সারা শরীরটাই জ্বলছিল!‌ আগুন, আগুন বেরোচ্ছিল যেন কান দিয়ে তার।
স্টেইন গান, এ কে ৪৭-‌র মতো ক্যামেরাগুলো তাক করেছিলেন ফটোগ্রাফাররা। অনেকক্ষণ ধরেই। সাটার নয়, যেন ট্রিগারে হাত রাখা!‌ এক বিন্দু আবেগ গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা শুধু। পড়লেই লেন্সবন্দী!‌ তারপর সগর্বে ঘোষণা করা যাবে, ‘‌এই তো ধরা পড়ে গেছেন।’‌ ‘‌কেউ, কেউ মাতব্বরী করে, কেউ, কেউ বড়াই করে, কেউ, কেউ তাচ্ছিল্যের সুরে বলবেন ভেবেছিলেন, ‘‌উহু, পালাবে কোথায়?‌ যতই তুমি ড্রিবল জানো, যতই তুমি পাসিং জানো, তোমার জাড়িজুড়ি টিকবে না আমাদের সামনে। তোমাকে বারবার বধিবে চিলি আর আমরা।’‌
ডাগ আউটে বসে তাচ্ছিল্যের সে সুর, মাতব্বরীর সেই কায়দা, বড়াইয়ের সেই ধরণ কী বুঝে ফেললেন?‌ শুনে ফেললেন?‌ ধরে ফেললেন?‌ হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ। তাই তো ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা, দিগন্তরেখা ছাপিয়ে যাওয়া হতাশা আর এক পৃথিবী অভিমান নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে ফেললেন। লিওনেল মেসি।
‘‌ছেলেটা ক্লাবের জার্সি গায়ে যতটা ভালো খেলে, দেশের জার্সি নয়।’‌ ‘‌যত কারুকার্য ক্লাবে, আসমানি-‌সাদা জার্সি গায়ে দেশকে কী দিয়েছ হে?‌’‌ ‘‌মানুষ ভালো, কিন্তু ব্যক্তিত্ব নেই। নেতৃত্বের গুণ নেই।’‌ চোখা-‌চোখা আক্রমণ, বাছাই করা শব্দ এফোঁড়-‌ওফোঁড় করে দিত। পাঞ্চিং ব্যাগ ভেবে, যে যখন পারত ঘুসি চালিয়ে যেত।[ads1]

‘‌উফ্’‌‌, না একবারও বলতে শোনা যায়নি তাকে। ‘‌আহ্‌, চুপ করবেন আপনারা?‌’‌, কখনো বলতে শোনা যায়নি তাকে। নীলকন্ঠ হয়ে গিলেছেন, শুধু গিলেছেন বিষ। উল্টে, হারলে বারবার নিজের সমালোচনা, নিজেই করেছেন। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর, টুর্নামেন্টের সেরা হওয়ায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুরস্কার নিতে গিয়েও বিরবির করে আওড়েছিলেন, ‘‌সেরা হয়েছ তো কী?‌ দেশের হয়ে জিততে পারোনি তো।’‌ কী তীব্র সমালোচনা!‌ নিজেই নিজের!‌ কে শুনছে, কে, কী ভাবছে এসবের পরোয়া না করেই করেছিলেন!‌ করার সাহস দেখিয়েছিলেন!‌ নিন্দুকরা কিন্তু সেই আত্মসমালোচনার মর্ম বোঝেনি। আর্জেন্টিনা কিন্তু সেই আত্মসমালোচনার কদর করেনি। বোঝেনি বলে, করেনি বলে এত, এত তাড়াতাড়ি বাগানের সেরা ফুলটা, দেশের সেরা শিল্পীকে হারিয়ে ফেলল আর্জেন্টিনা!‌ পরপর দু’‌বার কোপার ফাইনালে হার। তাঁর ফুটবল কেরিয়ারে তৃতীয়বার কোপার ফাইনালে হার। ২০১৪-‌র বিশ্বকাপ ফাইনালে হার। ট্রফির এত, এত কাছে এসে, এত, এত দূরে সরে যাওয়া। সহ্য হত কি কারও?‌ হলে হত। তাঁর হয়নি।

একই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে বারবার যেতে যেতে, একই কাঁটা বেছানো পথে বারবার হেঁটে, রক্ত ঝরিয়ে ক্লান্ত হয়ত হয়নি শরীর। কিন্তু মন?‌ তাঁর হদিস আদৌ কি কেউ রেখেছে?‌ তাঁর সেই মনের দগদগে ক্ষতটায় কোনও প্রলেপ লাগানোর উদ্যোগ কি কেউ নিয়েছে?‌ না, নেয়নি। উল্টে ক্ষতটা খুঁড়ে খুঁড়ে আরো দগদগে করেছে। তাই তো মাত্র ২৯-‌এ আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিতে বাধ্য হলেন মেসি। হারকে তিনি ভয় পান না। বিপক্ষকে তো নয়ই। তবে ঘৃণা করেন, কিছু স্বার্থপর মানুষকে। যাঁদের স্বার্থপরতায় চাপা পড়তে পড়তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে অপমৃত্যু ঘটল এক দেশপ্রেমিকের!‌ তাঁর দেশভক্তির। অবসাদ আর চূড়ান্ত অভিমানে মেসি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কী বললেন?‌ ‘‌জাতীয় দলের হয়ে আমার খেলা শেষ। আর খেলছি না। খেলব না। সিদ্ধান্তটা একান্তই আমার। এই সিদ্ধান্তটা নিজের জন্য নিয়েছি। আর যাঁরা, যাঁরা এটাই চেয়েছিলেন, তাঁদের জন্যও নিয়েছি। আমি সবরকমের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু না, পারলাম না দেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে।’‌ ২০০৫ থেকে দেশের সিনিয়র দলের হয়ে খেলছেন।[ads1]

১১৩ ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ৫৫টি গোল। দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ তথ্যগুলো বৃথা মনে হচ্ছিল ওই মুহূর্তে!‌ প্রথমে ইনস্টাগ্রামে নিজের সিদ্ধান্ত জানান মেসি। পরে দক্ষিণ আমেরিকার টেলিভিশন চ্যানেলে কান্নাভেজা গলায় মেসি বলেছেন, একই কথাগুলো। নিজেকে ওই সময় কিছুতেই সামলাতে পারছিলেন না মেসি। বারবার বুজে আসছিল গলা, ‘‌খুব, খুব কঠিন মুহূর্ত। এখন কোনও কিছুর ব্যাখ্যা দিতে চাই না।’‌ আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের টুইটারে পরে মেসি লিখেছেন, ‘‌ড্রেসিংরুমে বসে বসেই মনে হল, না, আর নয়। জাতীয় দলের সঙ্গে আমার চলার পথটা এখানেই শেষ। আর নয়।’‌ মাঠ ছাড়ার আগে, মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে, হয়ত হোটেলে ফিরেও খুব, খুব কেঁদেছেন তিনি। তার সেই আবেগ ধরেছেন বটে কিছু তুখর আলোকচিত্রী। কিন্তু তার মন?‌ সেই মনে কি আদৌ কোনো ফ্ল্যাশের ঝলক ফেলতে পারলেন আলোকচিত্রীরা?‌ আদৌ পারলেন তার আর্জেন্টিনীয় সমর্থকরা?‌
পারলে, এভাবে এক শিল্পীর বিদায় হতো না। পারলে, ফুটবলে শুধু রোবটরা পরে থাকত না!‌[ads2]Messi

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More