স্যার গারফিল্ড সোবার্স। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৬ বছর বয়সে একজন বোলার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তার অভিষেক হলেও পরে নিজেকে একজন গ্রেট ব্যাটসম্যান হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেন। অনেক কারণেই তিনি ক্রিকেট ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ছিলেন গ্রেট। আর বোলার হিসেবে অসাধারণ। টেস্টে তার ব্যাটিং গড় দেখলেও বোঝা যায়, রান করার ক্ষেত্রে কতটা ক্ষিপ্র ছিলেন তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যাটসম্যান, যিনি ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। প্রথম সেঞ্চুরির দিনেই তিনি অপরাজিত ৩৬৫ রান করেছিলেন। যা ব্রায়ান লারা ১৯৯৪ সালে ভেঙেছিলেন। গেল ৩১ আগস্ট ছিল সোবার্স ও ক্রিকেট ইতিহাসের জন্য স্মরণীয় একটি দিন। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে (১৯৬৮) প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম কোনো ক্রিকেটার হিসেবে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সোবার্স। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে গ্লামর্গানের বিপক্ষে এই কৃতিত্ব দেখান তিনি। ওই মৌসুমে নটিংহ্যামশায়ার পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম স্থানে ছিল। অধিনায়ক সোবার্স দ্রুত রান তোলার পণ নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। লক্ষ্য ছিল দ্রুত বেশি রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করা। তার বিপরীতে বল করছিলেন গ্লামর্গানের ম্যাক্লম নাস। তিনি মিডিয়াম পেসার হলেও সেদিন স্পিন বল করছিলেন। লক্ষ্য ছিল সোবার্সকে দ্রুত সাজঘরে ফেরানো। কিন্তু সুযোগ বুঝে নাসের পরিকল্পনা নাশ করে দিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেন সোবার্স। নাসের ছয়টি বলই তিনি ছক্কায় পরিণত করেন। শেষ বলটি তিনি স্টেডিয়ামের বাইরে পাঠিয়ে দেন। প্রথম দুটি বলে তিনি মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলটিকে সোজা ওভার বাউন্ডারি হাঁকান। চতুর্থ বলটি স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠান। পঞ্চম বলটি ফিল্ডার রজার্স ডেভিস তালুবন্দি করেন। কিন্তু নিজের শরীরের ভারসম্য বজার রাখতে না পেরে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে পড়ে যান। ফলে সেটিও ছক্কা হয়। শেষ বলটি তিনি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাঁকান। ফলে বলটি স্টেডিয়ামের বাইরে চলে যায়। সেই বলটি ১১ বছর বসয়ী এক বালক রাস্তায় কুড়িয়ে পায়। এরপর বেশ কয়েক বছর পর সোবার্সকে সে বলটি ফেরত দেয়। এ বিষয়ে সোবার্স বলেছিলেন, ‘আমি যদি আউটও হতাম আমার খারাপ লাগত না। আমার লক্ষ্য ছিল দ্রুত রান তোলা। তারপর ইনিংস ঘোষণা করা। নাসের পঞ্চম বলেও ছক্কা হওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নেই ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকানোর। তাই শেষ বলটি আমি বেশ শক্তি দিয়ে মেরেছিলাম। সেটাও ছক্কা হয়ে যায়।’ এরপর ১৯৮৫ সালে ভারতের রবি শাস্ত্রী প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকান। ২০০৭ বিশ্বকাপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে হার্সেল গিবস ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখান। এরপর যুবরাজ সিংও ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকান। সোবার্স ৩৮৩টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৮ হাজার ৩১৪ রান করেন। যার মধ্যে ৮৬টি সেঞ্চুরি ও ১২১ টি হাফসেঞ্চুরি ছিল। সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৩৬৫ রান। উইকেট নিয়েছিলেন ১০৪৩টি। সর্বোচ্চ ১০ উইকেটও নিয়েছিলেন একবার। ৪৯ রানে ৯ উইকেট নেওয়ারও কৃতিত্ব রয়েছে তার। ৫ উইকেট পেয়েছিলেন ৩৬ বার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৩টি টেস্ট খেলে ৫৭.৭৮ গড়ে ৮ হাজার ৩২ রান করেছিলেন। যার মধ্যে ২৬টি সেঞ্চুরি ও ৩০টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ৩৬৫। ৯৩ টেস্টে ৩৪.০৩ গড়ে উইকেট নিয়েছিলেন ২৩৫টি।