মানুষের মনে বা ইন্টারনেট থেকে রকিবুল হারিয়ে গিয়েছে কি? তার সম্পর্কে মনে রেখেছি কি আমরা এমনি কিছু প্রস্ন খুঁজতে গিয়ে উইকিপিডিয়ায় রকিবুল হাসান লিখে সন্ধান করলে দুটো পাতা পাওয়া যায়। দুটো পাতার নামই রকিবুল হাসান, তবে নামের পাশে জায়গা নেওয়া সাল দুটি সকল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। দুই রকিবুলের পৃথক পরিচয় খুঁজতে গেলে ক্রিকেটপ্রেমীদের ভরসা এই জন্মসালই। অনেকে আবার একজনকে ‘একাত্তরের রকিবুল’ আর অপরজনকে ‘হারিয়ে যাওয়া রকিবুল’ বলে থাকেন। হ্যাঁ, হারিয়ে যাওয়া রকিবুল… সেই রকিবুল ২৯তম জন্মদিন পার করলেন ৮ অক্টোবর। নীরবে, নিভৃতে।
তাকে একজন ব্যাটসম্যান পরিচয় দেওয়ার আগে অনেকে বলেন, ‘সিডন্সের আবিষ্কার’। ব্যাট-বল হাতে ছোট্ট বাংলাদেশ যখন উত্থানের পণ করে উন্নতির সিঁড়িতে পা দিয়েছে, এদেশের ক্রিকেট তখন জেমি সিডন্সের হাতে। বর্তমানে দেশের ক্রিকেট কাঁপানো অর্ধেক ক্রিকেটারই বের হয়ে এসেছিলেন সিডন্সের যুগে। তাদেরই একজন ছিলেন রকিবুল হাসান। তবে, হঠাৎই কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের কোনোটিতেই অভিষেক স্মরণীয় ছিল না। তবে রকিবুল জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন ঠিকই। এতে সিডন্সের ‘রকিবুল প্রীতি’-কে কেউ কেউ কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে চান, তবে তার পারফরমেন্স নিয়ে শুরুর বছর দেড়েক কোনো সন্দেহ ছিল না। ব্যাট হাতে হুট করে খেই হারিয়ে ফেললেন, অনেক জেতা ম্যাচ হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে গেল তার ব্যর্থতায়। একসময় টানা দলীয় ব্যর্থতা, অতঃপর দলীয় ব্যর্থতায় ‘রকিবুল হটাও’ রব জোরালো হওয়ার আগেই বাদ পড়লেন দল থেকে; ২০১০ টি-২০ বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে। বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না, তাছাড়া গুরু সিডন্স যে তখনও দলের মূল কোচ! অভিমান আর ক্ষোভে অবসর নিয়ে নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, মাত্র ২২ বছর বয়সেই! সেই যে অবসর নিলেন, এরপর আর টি২০ ম্যাচ খেলাই হয়নি রকিবুলের। ওয়ানডে ও টেস্টে অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন, যদিও এর আগেই চুকিয়ে ফেলেছিলেন বোর্ডের সাথে চুক্তি। তবে সেই আলোচিত অবসরের পর রকিবুল কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। কবজির মোচড়ে ব্যাটের চটজলদি মুভমেন্টে বোলারকে ভড়কে দেওয়া, অফ ষ্ট্যাম্প ঘেঁষা বলকে স্বর্গীয় দক্ষতায় রিভার্স সুইপ কিংবা অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া দেখেও উইকেটের সাথে ঘর বাঁধা- রকিবুলের শিল্পতুল্য ব্যাটিং কোথায় যেন আটকে গেল।