একবার এক দার্শনিক তাঁর ভক্তদের বলে ছিলেন, মানুষ কী আর শুধু রক্ত মাংসের হয় রে! আসলে মানুষ তো দোষ আর গুণ এই দুটো উপাদান দিয়ে তৈরি। আমাদের আইপিএলও তেমন। অনেকটা দোষ-গুণে থাকা একটা রক্তমাংসের মানুষের মতই আমাদের দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে ধনবান।
ইস্যু টাকা–আইপিএল নিয়ে যত আলোচনা হয় তার মধ্যে সবার আগে থাকা টাকার ব্যাপরটা। মাত্র ২৪০টা বলের খেলায় ওড়ে কোটি কোটি টাকা। ব্র্যান্ডভ্যালুর বিচারে অর্থের দিক থেকে বিশ্বের সেরা দশটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে আইপিএল অন্যতম। সেই টাকার ইস্যুতেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু প্রিয় অপ্রিয় জিনিস নিয়ে কথা হল মিস্টার আইপিএলের।
আয়না– তোমায় নিয়ে এতটাকা ওড়ে! ক্রিকেটার, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক, আয়োজক ভারতীয় বোর্ড আকাশছোঁয়া অর্থ উপার্জন করে। সেটা নিয়ে তোমার খুব গর্ব না!
আইপিএল– হ্যাঁ, সেটা অস্বীকার করব না। ভাবত পারছ মাত্র দেড় মাসে আমায় নিয়ে যত টাকা টার্নওভার হয় সেটা, সারা বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও হয় না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা দেশের হয়ে খেলে সারা বছর ধরে যা উপার্জন করে তার চেয়ে বেশি পায় আমার মাধ্যমে। এমন অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার আছে যাঁরা সারা জীবনেও এত টাকা উপার্জন করতে পারবে না, যেটা আমি এক মরসুমেই দিই। আর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটারদের কথা ভেবে দেখ। এই যে মনবিন্দর বিসলা, পল ভ্যালথাটি, মনদীপ সিং ওরা রঞ্জি খেলে ক`টাকায় বা পায়। কিন্তু দেখো একটা মরসুম আইপিএলে ভাল খেলেই ওরা রাতারাতি কত ধনবান হয়ে গেছে! আর ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোয় দু হাতে লাভ করছে। তাই তো নতুন দলের বিডিংয়ে কত আবেদন জমা পড়ল। সান রাইজার্স তো রেকর্ড দরে দল কিনল।
আয়না–(হেসে) কিন্তু এই টাকার ব্যাপারটা নিয়েই তো তোমায় কত সমালোচনা শুনতে হয়। বিশুদ্ধবাদীরা তো তোমায় একপ্রকার ব্রাত্যই করে রেখেছে। কুলীন ক্রিকেট সংসারে তো তোমার ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। এরপরেও বলবে টাকার ব্যাপরটা তোমায় গর্বিত করে! আইপিএল–হ্যাঁ। কেন জানো? আসলে টাকা কখনও সর্বানাশের কারণ হতে পারে না। ভারতীয় বোর্ড এখন এত আকাশছোঁয়া সম্পত্তির অধিকারী। ঠিকঠাক চললে ক বছর পর হয়তো আমার দৌলতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনবান ক্রীড়া সংস্থা হয়ে যাবে। এটা তো ভাল খবর। এই যে দেশে এতগুলো নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম হল, আরও হবে। মাঠের সংস্কার হচ্ছে, প্রাক্তন ক্রিকেটারদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। রাজ্য সংস্থাগুলো আগের চেয়ে অনেক টাকা পাচ্ছ, এসব তো আমাদের ভালোরই জন্য।
আয়না–এটা তো একটা দিক। কিন্তু টাকার ব্যাপরটা কি নোংরামোর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে না। তা ছাড়া নতুন ক্রিকেটারদের মাথাটাও কি খেয়ে ফেলছে না! আইপিএল– তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নটার উত্তর আগে দিই। জানো ক্রিকেটার হতে গেলে সবার আগে তাঁকে ভাল করে ম্যানেজ করতে শিখতে হয়। সেটা না পারলে তুমি ক্রিকেটার কেন সফল মানুষ হতে পারবে না। টাকার ব্যাপরটা মাথা না ঘুরিয়ে অনুপ্রেরক হিসাবে কাজে লাগালে তো ভালই। তবে প্রথম প্রশ্নটার জবাব আমি দিতে পারব না। কারণ আমি যে উত্তরটা দেব সেটা শুনলে গর্ভনিং কাউন্সিল আমায় শোকজ করবে।
ইস্যু গ্ল্যামার- প্রচার–মাত্র কটা দিন কুড়ি ওভারে এত ছোট একটা খেলার ফর্ম্যাটে খেলেই দেশজুড়ে মেলে প্রচার। নজর কাড়লেই সেই ক্রিকেটারের ওপর হামলে পড়ে সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন সংস্থারা। এই বিষয়টা নিয়ে আইপিএলকে প্রশ্ন করল আয়না।
আয়না– মাত্র কটা ইনিংস ভাল খেলেই বা ভাল বল করেই এত গ্ল্যামার, এত প্রচারের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় না ক্রিকেটারদের।
আইপিএল– না, না, কখনই না। এত বড় একটা মঞ্চে ভাল খেললে তো তাঁকে নিয়ে মাতামাতি হওয়া স্বাভাবিক। এই দেখো না বিসলার কথা। গতবার ফাইনালে ছেলেটা যে রেকম অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলল, তাতে কি ওকে নিয়ে মাতামাতি করাটা অন্যায়!
আয়না– তা নয়। কিন্তু অল্পতেই এত আলোয় আসা। নাইট পার্টি, ড্যান্স, চিয়ারলির্ডাস, পাঁচতারা হোটেলের খানা এসব তো তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে শত্রুর মত।
আইপিএল– ওসব প্রাচীন ধারণা। এখন বিশ্বায়ন আর মার্কেটিংয়ের যুগে তুমি কতটা ফোকাসড সেটাই আসল কথা। নাইট পার্টি হোক, চিয়ার লির্ডাস নাচুক তাতে আমার ফোকাস্ড সরে গেলে এখনকার দিনে তাঁর ভিক্ষা করা উচিত।
ইস্যু বিতর্ক–বিতর্কে বিদ্ধ আইপিএলকে খোঁচা দিল তাঁর সামনের আয়না
আয়না– আচ্ছা, তোমার কেচ্ছা কেলেঙ্কারি নিয়ে কিছু কথা বলবে না! এই যে পুকুর চুরি করা ললিত মোদী, শ্লীলতাহানী করা পমার্সব্যাচ, রেভ পার্টিতে ক্রিকেটারদের ধরা পড়া, মাঠে ঢুকে মালিকের দাদাগিরি, দল নিয়ে দলাদলি, এসব তো তোমায় কলঙ্কিত করছে।
আইপিএল– আরে যাকে নিয়ে প্রচার হয়, তাকে নিয়েই তো অপপ্রচার হয়। ওসব পার্ট অফ দ্য গেম.. আই জাস্ট ইনজয় ইট…
ইস্যু ক্রিকেট–
আয়না–কিন্তু সবই তো হল। তোমার মধ্যে ক্রিকেট কোথায়, ক্রিকেটাররা কী পায়? ক্রিকেটকে তুমি কী দিলে?
আইপিএল– আমার আসল ইউএসপি ক্রিকেট। অনেকগুলো ম্যাচ নিষ্পত্তি হয় শেষ ওভারে। এত উত্তেজনা আর কোথায় পাবে। ক্রিকেটের নিজের সৌন্দর্য বজায় রেখে আমি দিয়েছি ফর্মুলা ওয়ানের গতি, ফুটবলের মত প্রাণ, আর টেনিসের মত ফিটনেস ফান্ডা। আর ক্রিকেটাররা পেয়েছে অনেক কিছু। এই যে আজ সানি সিং, ইউসুফ আবদুল্লারা জাক কালিস, ক্রিস গেইলদের সঙ্গে-বিরুদ্ধে খেলছে। হোয়াটমোর,ব্রেট লি, আক্রমদের কাছে শিখছে। তার দাম নেই। আমি না থাকলে এসব হত। তাই বলি..
আয়না তাহলে তুমি খুশি তাই তো!
আইপিএল– উত্তরটা সবার সামনে হলে বলব হ্যাঁ দারুণ। আর লুকিয়ে হলে বলব, আমি খুশি, তবে সুখি নই।