‘বাংলাদেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। বাংলাদেশ খারাপ থাকলে আমরা খারাপ থাকি।’ সোমবার বিধানসভায় ওই মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।[ads1]
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিজেপি’র রাজনৈতিক তৎপরতার নিন্দা করেন। মমতা সরাসরি রাজ্য বিজেপি সভাপতি ও খড়গপুরের বিধায়ক দিলীপ ঘোষকে কার্যত ধমক দিয়ে বলেন, ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেব কেন বলেছেন? ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ দুই দেশের সম্পর্কের প্রতীক। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কথা বলবেন না। দায়িত্বশীল আচরণ করুন। আমাদের সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’
মমতা বিজেপি সভাপতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দিলীপবাবু আপনি বিজেপি’র সভাপতি বলেই আপনাকে বলছি, আপনারা কেন মিছিল করে বললেন, ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ বন্ধ করে দেবেন? প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই অবস্থায় পার্টির উদ্দেশ্যসাধনে এমন কিছু আপনারা করবেন না, যাতে সেই সম্পর্কের ক্ষতি হয়। তাই নিজেদের দলীয় স্বার্থসিদ্ধির কথা বাদ দিন।’
বাংলাদেশের সঙ্গে বিরাজমান সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, “দুই দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, খাবার সব কিছুই এক। তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে আমরা এমন কোনও মন্তব্য করতে পারি না, যাতে ভালোবাসা নষ্ট হয়।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর পরপর আক্রমণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে কোলকাতায় এক প্রতিবাদ মিছিল হয়। সেখানে তিনি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে ঢাকা-কোলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কখনও এ ধরনের হুঙ্কার যেন আমরা না দিই! এতে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা বাড়ে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীরা যে একের পর এক পুরোহিতকে হত্যা করছে, সেটা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। পুরোহিত, ইমাম কারো মৃত্যুই মেনে নেয়া যায় না।’[ads2]
সন্ত্রাসবাদীরা সমাজকে ভাঙতে পারে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ওদের না আছে ধর্ম, না আছে বর্ণ, না আছে জাতি। তাই উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে হবে।’
বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষ অবশ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড় এবং কালিয়াচকের পুরোনো ঘটনার কথা তুলে ধরে রাজ্য সরকারকে কিছুটা কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে বিশেষ আমল না দিয়ে পাল্টা জবাবে সাফ জানিয়ে দেন, ‘সারাক্ষণ খাগড়াগড়ের ঘটনাকে যুক্ত করবেন না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটা বাদ দিন।’
একটি সূত্রে প্রকাশ, আগামী ১৮ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাবেন। সে সময়ই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হবে। এতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মমতা যে ভাবে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানে সদর্থক পদক্ষেপ করেছেন, তাতে কেন্দ্রীয় সরকার খুশি।[ads1]
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব তথা পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তা ভাস্কর খুলবে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার পর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ঘটনার সম্ভাব্য কারণ, পরিণতি এবং ভবিষ্যৎ সতর্কতা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত কথা হচ্ছে। পুরনো ঐতিহ্য অনুযায়ী এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলবে এটাই অবশ্য স্বাভাবিক।
প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে খুব শিগগিরি বৈঠক হতে চলেছে। তার আগে বিধানসভায় ফেলে বিজেপি বিধায়ক তথা সাবেক আরএসএস প্রচারক দিলীপ ঘোষকে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রঃ পার্সটুডে