যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মুসলিম নারী বিচারক ক্যারোলিন ওয়াকার ডিয়ালো

0

jozzমনোরমভাবে সাজানো হয় নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো হল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপদস্থ লোকদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। বিশাল এ আয়োজন ক্যারোলিন ওয়াকার ডিয়ালোকে কেন্দ্র করে। গত ১০ ডিসেম্বর (২০১৫) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি শপথ নেন নিউ ইয়র্কের কিংস কাউন্টির সপ্তম মিউনিসিপ্যাল ডিস্ট্রিক্ট সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে। বিশ্বের মুসলমানদের জন্য খুশির খবর হলো, ক্যারোলিন ওয়াকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মুসলমান নারী বিচারক। আর শপথ নেন পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে। আরেকটি ভালো খবর হলো, ওই আদালতের আরেক বিচারপতি তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। তার নাম ক্যাথি কিং।

ডিয়ালো ওই কাউন্টির জনগণের সরাসরি ভোটে বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন গত ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার (২০১৫)। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইমাম বরো হলে তার জাঁকজমকপূর্ণ শপথ অনুষ্ঠানে কুরআন থেকে পাঠ এবং মোনাজাত করেন। এতে তাদের অংশগ্রহণে খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এই নারী বিচারক। সংক্ষেপে অনেকে তাকে এখন বলছেন নগরীর সিভিল বিচারক।
ডিয়ালো আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভূত নারী। কৃষ্ণাঙ্গ ক্যারোলিন ব্রুকলিনের বাসিন্দা। বয়স প্রায় ৪০ বছর। তার জয়ের খবর শুনে রীতিমতো উৎসবে মেতে ওঠে সেখানকার মুসলিম অভিবাসীরা। ওই সময়েই ডিয়ালোর সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় ব্রুকলিনের একটি রেস্তোরাঁয়। তাকে এক নজর দেখা ও সংবর্ধনা জানাতে ভিড় করেন বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিবাসী। নির্বাচিত হয়েছেন বলে তিনি কাউন্টির জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ডিয়ালো বলেন, তাদের কারণেই আমি বিচারক হয়েছি। আর জনগণ বলেছে, ‘যোগ্যতা আছে বলেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন’। গণমাধ্যমকে ডিয়ালো বলেন, ‘প্রথম মুসলিম নারী বিচারক নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি দেশটির সংবিধান মেনে চলারও ওয়াদা করছি। বিচার জগতে আমাকে বিশাল বা গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এবং আমি আমার সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ ও বিনম্র।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমরা সবাইকে সমান ও মুক্ত বলে মনে না করি, তবে তা হবে মার্কিনিদের সারবত্তা বা পদার্থ হারিয়ে যাওয়ার শামিল।’ অনুষ্ঠানের ভিডিওটি তার পদে অধিষ্ঠিতকরণের বিষয়েও এ সংক্রান্ত নানা অনুকূল মন্তব্যের জন্ম দিয়েছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানেও আইন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সবার সম-অধিকারের কথার ওপর জোর দিয়ে অনেক কিছু বলেন ডিয়ালো। বলা যেতে পারে, ঘটা করে এই উদযাপন শুধু তার বিচারক হওয়া উপলক্ষে নয়, এই আয়োজন সবাইকে ভালো কিছু করার ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণা জোগাবে। ইতিহাস রচনাকারী এই বিচারক এ পর্যন্ত পৌঁছেছেন আইনের প্রতি নিষ্ঠা দিয়ে।
ডিয়ালোর জন্ম ব্যাপ্টিস্ট পরিবারে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনা তাকে মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই তার মাথায় এখন হিজাব উঠেছে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ২০০১ সালের ৯/১১-এর পর। ধর্মকে মনেপ্রাণে লালন করেন ঠিকই; তবে তার ব্যাপ্টিস্ট-মুসলিম মিশ্র পরিবারে নেই বিদ্বেষমূলক ছিটেফোঁটা মনোভাব। এটি লক্ষ করা গেছে বিচার বিভাগীয় অভিষিক্তকরণ অনুষ্ঠানেও।
ওয়াকার ডিয়ালোর নির্বাচনী প্রচারণায় মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদিরা কাজ করেছে। এতেই বোঝা যায়, সাদা-কালো-বাদামি বর্ণের কোনো ভেদাভেদ বা পার্থক্য নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশটির অসাম্প্রদায়িকতা এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে। এমন খারাপ সময়ে তার বিচারক হওয়া রীতিমতো আশাব্যঞ্জক। তা ছাড়া দেশটিতে মুসলিমবিরোধী একটা সিন্ডিকেটও জাতি-ধর্মে সমস্যা বাড়াচ্ছে। আর সেই দেশই স্বীকার করছে একজন মুসলিম নারীকে বিচারক (সিভিল কোর্টের) হিসেবে। এটি রীতিমতো একটি ঐতিহাসিক ঘটনাও।
বিচারক ক্যারোলিন ওয়াকারের মা ন্যান্সি ওয়াকার জনাকীর্ণ ওই অনুষ্ঠানে খুশির সাথে বলেছেন, আমার বিশ্বাসই হয়নি ডিয়ালো বিচারকের পদকে অলঙ্কৃত করবে। এ বিজয়ের খবর শুনে আমি অবর্ণনীয় উৎফুল্লতা অনুভব করেছি। এ দিকে ডিয়ালোর খালা অ্যানি পেরি বলেছেন, সে বিচারক নির্বাচিত হয়ে রীতিমতো ইতিহাস রচনা করল। নিউ ইয়র্ক মুসলিম ভোটার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা নাজি আল মোতাসের বলেছেন, ডিয়ালো নিরঙ্কুশ একজন প্রথম মুসলিম নারী বিচারক। তিনি যেমন বুদ্ধিমতী তেমনি জ্ঞানী। বিশেষ যতœবান দায়িত্বের প্রতি। তার ব্যক্তিত্বও সবার কাছে পছন্দের।
ডিয়ালো নিউ ইয়র্ক ল’ স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন। কমিউনিটি বোর্ড ৫, বোর্ড চেয়ার অব দ্য জজ ওয়াকার জুনিয়র কমিউনিটি কোয়ালিশন ইন করপোরেশন, বোর্ড মেম্বার ইস্ট নিউ ইয়র্ক রেস্টরেশন লোকাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অদিকন্তু, তিনি ৭৫তম প্রিসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের সদস্য। তার আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি নিউ ইয়র্ক শান্তি কমিশনে একজন প্রশিক্ষিত মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More