অধ্যাপকের বাসায় ‘যৌন হয়রানি’, ডিসিকে যা লিখলেন গৃহকর্মী

0

১০ বছর আগে বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করে চট্টগ্রামে সংসার শুরু করেন। মাও হেঁটেছেন একই পথে। তিনিও ফরিদপুরে আছেন স্বামীর ঘরে। বিচ্ছেদের পর বাবা-মা কেউই ছোট্ট মেয়েকে আশ্রয় দেয়নি। তাই নানির কাছেই বড় হচ্ছিল মেয়েটি। এখন ওই মেয়ের বয়স ১৩ বছর।

এরই মধ্যে নানি রাজশাহীতে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম কবিরের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে রেখে আসে ওই কিশোরীকে। সেই বাড়িতেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে সেই কিশোরী এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি। সেখান থেকেই গত ৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসককে চিঠি লেখে সে। চিঠিতে জেলা প্রশাসকের কাছে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ চায় মেয়েটি।

জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে ওই কিশোরী লেখে, তাদের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তখন সে ছোট ছিল। তারা উভয়েই এখন নতুন করে সংসার শুরু করেছে। মায়ের নতুন সংসার ফরিদপুর আর বাবার নতুন সংসার চট্টগ্রামে। তারা কেউ তাকে আশ্রয় দিতে রাজি না। ৫ মাস আগে তার নানি রাজশাহীতে গোলাম কবির নামে একজনের বাসায় কাজের জন্য রেখে আসে। সেখানে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।

ওই চিঠিতে সে আরও লেখে, তাকে প্রায় সময় গায়ে হাত দেয়। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নম্বর বেডে (পরে ওসিসি) ভর্তি রয়েছে। গোলাম কবির তাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল থেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মেয়েটি জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ জানায়।

এদিকে, চিঠিটি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে লিখেছেন, ‘জরুরি আলোচনা প্রয়োজন’।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোছা. হাসিনা মমতাজ আজ বুধবার বিকেলে আমাদের সময়কে বলেন, ‘মেয়েটিকে আমি সরাসরি দেখতে যেতে পারিনি। আমার অফিসের লোক পাঠিয়েছিলাম। তাতে জানা গেছে, সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছে। তার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মামার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু তারা কেউই মেয়েটির দায়িত্ব নিতে চায় না। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত গোলাম কবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তার বাসা মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকায়। তিনিও হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটিকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মেয়েটি আতঙ্কিত। সে কোনোভাবেই আর ওনার বাড়িতে যেতে চায় না।’

তবে মেয়েটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে আজ জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি এখন সচিব মহোদয়ের সঙ্গে ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’

রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নির্যাতনের বিষয়টি আমরা জেনেছি। কিন্তু থানায় এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। মেয়েটির নানির বাড়িতে পুলিশ দিয়ে খবর পাঠানো হয়েছে। যদি তার পক্ষে কোনো অভিভাবক না পাওয়া যায় তাহলের ওসিসির আইন কর্মকর্তাই মামলা করবেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত গোলাম কবির বলেন, ওই কিশোরী চার হাজার টাকা বেতনে গত পাঁচ মাস ধরে তার বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে থাকছে। সে বিভিন্ন সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবশেষ কয়েক দিন আগে তার শ্বাসকষ্ট হয়। এ কারণে তারাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু কিশোরী কীভাবে ওসিসিতে গেল, সেটা তাদের জানা নেই।

উৎসঃ   আমাদের সময়
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More