চাঁদাবাজি মামলায় বরখাস্ত কনস্টেবল এবার মেয়ের বিয়েতে আনলেন হেলিকপ্টার

0

চট্টগ্রামের লালখান বাজারে মেয়ের বিয়েতে হেলিকপ্টার ভাড়া করে আনেন বরখাস্তকৃত কনস্টেবল মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

বন্দর নগরীর লালখান বাজারের সিআইডি গেট থেকে কাজীর দেউড়ির দূরত্ব সড়ক পথে ২ কিলোমিটারের মতো। আর এই ২ কিলোমিটার পথের জন্য মেয়ের বিয়েতে এবার ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার এনে আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের বরখাস্তকৃত কনস্টেবল মো. মহিবুল্লাহ।

মহিবুল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ শাপলা সিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগে কর্মরত ছিলেন। গত বছর ১৮ জানুয়ারি নগরীর পাহাড়তলী থানায় হওয়া চাঁদাবাজি মামলার মূল আসামি তিনি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই মামলায় পাহাড়তলী থানা পুলিশ মুহিবুল্লাহ ও তার ছেলেসহ আরও দুই জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে।

জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বিয়েতে হেলিকপ্টারে করে মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে আসেন কোতয়ালী থানাধীন অ্যাপোলো শপিং সেন্টারের টাইম স্কয়ার শপিং সেন্টারে। মেয়েকে লালখান বাজার মাদ্রাসার মাঠ থেকে এবং বরকে এনায়েত বাজার মোড় থেকে আউটার স্টেডিয়ামে নামানো হয়। বর এবং কনের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করে আনা হয় ঢাকা থেকে।

এ বিষয়ে জানতে মহিবুল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মনের আশা ছিল মেয়েকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে দেব। এটার স্পন্সর আমি নিজেই। কনেকে লালখান বাজার আর বরকে এনায়েত বাজার থেকে আউটার স্টেডিয়ামে নামানো হয়। হেলিকপ্টার আনা হয়েছে ঢাকা থেকে। হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়েছি ৬৫ হাজার টাকা।’

তবে বিসিএল (বাংলাদেশ কন্সট্রাকশন লিমিটেড) অ্যাভিয়েশনের চার সিটের এই হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার টাকা বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন বিসিএলের উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মহিবুল্লাহ শাপলা বলেন, ‘এই ভাড়া যে কেউ দিতে পারবে। রিকশাওয়ালাও বহন করতে পারবে। আমার এক ছেলে চট্টগ্রাম আদালতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী। আমি আর এফ হোল্ডিংয়ের পরিচালক প্রশাসন, ফরমান আলিশান হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এছাড়াও আমি তুষার তৃষা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আমার অনেক ব্যবসা আছে। পারিবারিকভাবে আমি সচ্ছল। কনস্টেবল, এসআই, ইন্সপেকটর, এএসপি পর্যন্ত ছোট চাকরি। যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে কিছুই হয় না। ওয়ারিশ সূত্রে আমি ধনী।’

তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মামলাটি ভুয়া বলে দাবি করেন।

এ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না বলেও হুমকি দেন তিনি।

সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী এতগুলো প্রতিষ্ঠানের পদে থাকতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করলে করেছি, অতীতেও করেছি। যাদের দেখার তারা দেখবে। আমার বিষয়ে ইন্সপেক্টর, ডিসি, কমিশনার জানেন। আমার সম্পর্কে আপনি আগে জানেন তার পরে ফোন দেন,’ বলেন পুলিশের বরখাস্তকৃত এই সদস্য।

‘আমি আইজিপির বিরুদ্ধে মামলা করা লোক। আমার ফেসবুক ওয়ালে যান দেখেন। আমার ট্যাক্স ফাইল দেখে যাইয়েন। আপনি হয়তো আমার সম্পর্কে জানেন না। আমার ১৫ বছরের ইতিহাস ঘেটে আসেন,’ বলেন মহিবুল্লাহ।

পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন ‘মহিবুল্লাহ ও তার ছেলেসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’

মামলার তথ্য অনুযায়ী মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কনস্টেবল মহিবুল্লাহ, তার ছেলে মো. ইয়াছিন আরাফাত তুষার (২৩), তাদের সহযোগী জাহিদ হোসেন (৩৯) ও রাশেদ হাসান (৩২) কে গ্রেপ্তার করেছিল পাহাড়তলী থানা পুলিশ। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নবী হোসেন পাহাড়তলী থানায় এই মামলা করেন। এরপর পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত কনস্টেবল মহিবুল্লাহকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) তারেক আহম্মেদ।

মামলা অনুযায়ী গত ১৬ জানুয়ারি নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকায় ট্রাফিক কনস্টেবল মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ তাদের বহনকারী প্রাইভেট কারটিকে থামানোর নির্দেশ দেন। গাড়ি থামলে কনস্টেবল মহিবুল্লাহ গাড়িতে উঠে মামলায় ফাঁসিয়ে দেবেন বলে ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে রাজি না হলে মামলার ভয়ে কনস্টেবল মহিবুল্লাহকে নগদ ৮ হাজার টাকা এবং বিকাশে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় গত ১৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের।

উৎসঃ   দ্য ডেইলি স্টার
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More