বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজের রাতে কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকার জনসন রোড ছাড়াও রূপগঞ্জ থানার ডেমরাসংলগ্ন চনপাড়া এলাকায় গেছেন। মাদকের বড় স্পট হিসেবে পরিচিত চনপাড়া বস্তি। প্রযুক্তি এবং স্থানীয় সূত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, কথা-কাটাকাটির জেরে ওই রাতে কয়েকজন মাদক কারবারি এক তরুণকে পিটিয়েছেন। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, ওই তরুণই ফারদিন।
পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত চনপাড়া এবং আশপাশের এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার চনপাড়া এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাসেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন (৩৫) নামের এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। তবে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ফারদিন হত্যার সঙ্গে সিটি শাহীনের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে তদন্তকারীরা বলছেন, ফারদিন হত্যার সঙ্গে তাঁর বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ডিবি পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যার মূল আসামিকে আমরা খুঁজছি। অভিযান অব্যাহত আছে। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ, মাদক, ছিনতাই, ব্যক্তিগত, সব বিষয়কে সামনে রেখেই আমরা তদন্ত করছি। ’
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রযুক্তি বিশ্লেষণে গত ৪ নভেম্বর রাতে ফারদিনের অবস্থান কেরানীগঞ্জ ও পুরান ঢাকার জনসন রোডে পাওয়া যায়। রাত ২টা ৩৫ মিনিটে ডেমরার চনপাড়া এলাকায়ও তাঁর অবস্থান দেখা গেছে। ফারদিনের বাসা ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায়। এ কারণে ধারণা করা হয়েছিল, বাসায় যাওয়ার পথে তিনি হয়তো সেখানে গিয়েছিলেন। গভীর রাত এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হওয়ায় জায়গাটিকে সন্দেহের আওতায় নেন তদন্তকারীরা। এরপর সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। চনপাড়া বস্তির ‘খালা’ নামে পরিচিত এক নারী পুলিশ সদস্যদের জানান, গভীর রাতে তাঁর ঘরের পেছনে একটি ছেলেকে কয়েকজন তরুণ মারধর করে। তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। এর পরই তদন্তকারী দল সেখানকার মাদক কারবারিদের ধরতে অভিযান শুরু করে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চনপাড়া বস্তিতে র্যাব-১-এর একটি দলের অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে ২৩ মামলার আসামি সিটি শাহীন নিহত হন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যার সঙ্গে এই অভিযানের কোনো সম্পর্ক নেই। সিটি শাহীন একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যা নিয়ে কাজ করছি না। ’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, মাদক সংগ্রহ করতে ফারদিন চনপাড়ায় গিয়েছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বস্তির পেছনের অংশে তাঁকে মারধর করে হত্যার পর শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পুরান ঢাকা থেকে চনপাড়ায় যেতে ফারদিন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছেন। তাঁর সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে ফারদিন হত্যায় বান্ধবী বুশরার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ফারদিনের বাবাকে মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ক্ষুব্ধ বাবা তদন্তকারীদের কথা শোনেননি। গতকাল পর্যন্ত তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুশরার সম্পৃক্ততা নেই। চনপাড়াকেন্দ্রিক কোনো ঘটনায় হত্যা করা হয় ফারদিনকে।
ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বলেন, ‘ফারদিনের তো চনপাড়ায় যাওয়ার কথা নয়। সে নেশা করত বলে আমাদের জানা নেই। মাদকের স্পটে সে কেন গিয়েছিল সেটা ভাবতে পারছি না। ’
গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন। সেদিন রাতে রামপুরায় বান্ধবী বুশরাকে পৌঁছে দেওয়ার পর তাঁর আর হদিস পাওয়া যায়নি। ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
উৎসঃ kalerkantho