সরকারের এক উপদেষ্টা দেশের বাইরে একটি ব্যাংকে অর্থ জমা রেখেছেন। এ তথ্যটি ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ মহলের কানে পৌঁছেছে। একইভাবে এক মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাড়ি কিনেছেন। মালয়েশিয়ায় আরো এক মন্ত্রী বাড়ি কিনেছেন। এ তথ্যও এখন আর সরকারের সর্বোচ্চ মহলে গোপন নেই। তবে কিভাবে এত টাকা দেশের বাইরে চলে গেল এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। যেমন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে দেশের অর্থ পাচার করেছেন। তার উৎস বেশ ভালোভাবে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই সূত্র ধরে দেশের টাকা বিদেশে পাচারের উৎস নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকারের কয়েকটি সংস্থা। একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে অর্থ পাচার প্রতিরোধ নিয়ে দেশের বাইরের বেশ কয়েকটি সংস্থার কাজ করছে। বিশেষ করে এশীয় প্রশান্ত এলাকার মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। এমন কি বাংলাদেশ কোন অবস্থানে রয়েছে এ নিয়ে একটি খসড়া রিপোর্টও তারা দিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, আগামী জুনে তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবেন। সে সময় বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি সেমিনার হওয়ার কথা রয়েছে। যে সেমিনারটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, অর্থ পাচারের প্রতিরোধে এশিয়া প্যাসিফিক যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে ধূসর তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। তবে বাংলাদেশের তৈরি আইন কানুন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট থাকলেও, প্রয়োগের ব্যাপারে তারা ততটুকু সন্তুষ্ট নয়। তবে তারা সেই সেমিনারে বাংলাদেশ প্রয়োগের দিক থেকে কিভাবে পিছিয়ে আছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তারও ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে বলে দাবি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের টাকা পাচারের ব্যাপারে বেশ তৎপর হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কিভাবে টাকা পাচার হয় তারও অনুসন্ধানে নামছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করছেন বলে বেশকিছু তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো মহলের চাপের মুখে এদের ধরা যাচ্ছে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান। তবে তিনি বলেছেন, এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। কারন, বিষয়টি সর্বোচ্চ মহলের নজরে এসেছে। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে।
জানা গেছে, টাকা পাচার করছেন এমন সন্দেহভাজন বেশ কয়েক ব্যক্তির নামের তালিকা করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে আরো অনুসন্ধান চালানো হবে। এবার এনবিআর বেশ কয়েকটি সংস্থাকে নিয়ে কাজ করবে। এর মধ্যে রয়েছে সিআইডি, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মূল কাজটি করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। যে কারণে সন্দেহজনক লেনদেনে ব্যাংকগুলোকে আরো তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যে কমিটি কাজ করছে সেই কমিটি এখন থেকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কার্যকরের বিষয়টি পরিবীক্ষণ করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, টাকা পাচারের বিষয়টি এখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পুরো টিম কাজ করছে। আর এই কাজটি এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এটি একটি সম্মিলিত প্রয়াস। যার যা ভূমিকা সে সেই ভূমিকা পালন করবে। জানা গেছে, আগামী জুনে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ নিয়ে যে আন্তর্জাতিক সেমিনার হবে সেখানে বিদেশের বেশ কিছু নামি দামি ব্যক্তি অংশগ্রহণ করবেন। আর সেই সেমিনারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে।
Prev Post
Next Post