চৌদ্দ বছর ধরে পরিত্যক্ত মিন্টো রোডের সেই বাড়িটি

0

houseপরিত্যক্ত অবস্থায় খালি পড়ে আছে বিরোধীদলীয় নেতার বাড়িটি। এখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের প্রতিপক্ষ পার্টির নেতার বসবাস করার কথা থাকলেও থাকা হয় না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের। তিনি না থাকলেও এখানে থাকে মালী ও সুইপারদের পরিবার।
এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে অনাদর অবহেলায় পড়ে আছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ রাজধানীর মিন্টো রোডের আলোচিত ২৯ নম্বরের লাল বাড়িটি। ১৯৯১ সালের বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মিন্টো রোডের এ বাড়িতে ওঠেন। টানা পাঁচ বছর কাটান সেখানে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া প্রধান বিরোধী দলের নেতা হলেও নিজে না থেকে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এখান থেকে চালাতেন। এরপর ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম জিয়া থাকেন এরশাদের দেয়া ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাড়িতে। আর প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা মিন্টো রোডের এ বাড়িতে না উঠে থাকেন ধানমণ্ডির সুধা সদনে।
বাড়িটি বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ থাকলেও ২০০১ সালের পর থেকেই আর কেউই এটি ব্যবহার না করায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় খালি পড়ে আছে। আর বর্তমান প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদও এ বাড়িতে থাকেন না। তিনি তার গুলাশানের নিজ বাসভবনেই বসে জাপা সংসদীয় দলের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় থেকে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতৃত্বে দিয়ে আসছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে মিন্টো রোডের বাড়িটিতে দেখা যায়, বিশাল খোলামেলা জায়গায় দোতলা বাড়িটির একেবারেই বেহাল অবস্থা। দূর থেকে     দেখলে মনে হয় না এটি কোনো ভিআইপির বাড়ি। প্রবেশমুখে ছোট্ট একটি গেট। চাইলে যে কেউ অনায়াসে আসা-যাওয়া করতে পারে। বাড়ির গায়েও নেই কোনো চিহ্ন। নেমপ্লেটের পরিবর্তে কংক্রিট দিয়ে হাতে লেখা ২৯। আশপাশে জিজ্ঞেস না করলে এটি যে বিরোধী দলের নেতার বাড়ি বোঝার উপায় নেই। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ভেতরে ময়লার স্তূপ। কোনো দরজা নেই। সামনে এগোতেই দেখা যায়, দুই তলা ভবনে ওঠার সিঁড়িতে শুয়ে আছে দু’একটি কুকুর। ঘুরে দেখা যায়, ভেতরে ধুলোবালিতে গাছপালা, দোতলা বাড়ি, বাড়ির বিশাল আঙিনা ও আশপাশের পরিবেশ নোংরা হয়ে উঠেছে। কুকুরের দৌড়াদৌড়ি। একপাশে কোনায় সবজি চাষ। ক্ষেত-খামার করে খায় এখানে বসবাসরত বাড়িটির কেয়ারটেকার, মালী ও সুইপার পরিবার।
ভেতরে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, এ বাড়িতে একজন প্লাম্বার, দুজন গার্ড, দুজন ঝাড়ুদার আছে। মোট ছয়টি পরিবার বাস করছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সব সুবিধা রয়েছে তাদের। তিনি জানান, এ বাসায় থেকেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তার মেয়ে পুতুলকে বিয়ে দিয়েছেন। তালাবদ্ধ দুই তলা বাড়িটির ভেতরের কক্ষগুলো সর্বশেষ কবে পরিষ্কার করেছিলেন তা বলতে পারেননি তিনি। বাড়ির পেছনে অবস্থিত একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকে এখানকার একটি সুইপার পরিবার। এ পরিবারের এক প্রতিনিধি বলেন, ৩০ বছর ধরে আমরা এখানে আছি। ১৪ বছর ধরে বিরোধী দলের বাড়িটি এভাবে বন্ধ অবস্থায় খালি পড়ে আছে। গণপূর্ত বিভাগ এটি দেখাশোনা ও সংস্কার কাজ করে থাকে। ১৫ দিন পরপর বাড়িটির সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না দেখা হয়। এখানকার মালী, সুইপাররা সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের দাবি করলেও বাড়িটির চেহারা ভিন্ন। বাড়ির দেয়ালে চারপাশে জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। ভবনের দরজায় সাধারণ তালা ঝোলানো হয়েছে। দেখলে মনে হয়, এখানে কেউ রাত কাটায়। সন্ধ্যা হলেই বাড়িটিতে নেমে আসে ভুতুড়ে পরিবেশ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিরোধী দলের নেতার জন্য বরাদ্দ এ বিশাল বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্ত অফিস থেকে নিয়মানুযায়ী একজন মালী ও একজন সুইপার থাকার কথা। কিন্তু দেখা গেছে তার বিপরীত চিত্র। ১৪ বছর ধরে খালি পড়ে থাকলেও এখানে গণপূর্ত অধিদফতরের স্থানীয় সার্কেলের সাইট সুপারভাইজারের নেতৃত্বে মালী ও সুইপারের তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে। বাড়িটির পেছনে রান্নাঘর দখল করে থাকছে একটি পরিবার। সুইপার পরিবারের বাসার পাশে টিনশেড বেশ কয়েকটি কক্ষ অন্যদের ভাড়া দেয়া হয়েছে। পুলিশের জন্য নির্ধারিত বাসাটিও ভাড়াটিয়াদের দখলে। এভাবে মালী ও সুইপার ছাড়া এখানে কেউ থাকার কথা না থাকলেও প্রায় ৫-৬টি পরিবারকে বসবাস করতে দেখা গেছে। তবে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এসব অবৈধ বসবাসরত পরিবার বিরোধী দলের নেতার বাড়ি থেকে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে। ১৪ বছর ধরে তাদের অবৈধ বসবাসের কারণে সরকারের বড় অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে। অপরদিকে বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এ বাড়িটি অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য মোটেই আগ্রহী হননি। তবে পার্টির অধিকাংশ নেতা তাদের নেত্রী রওশনকে এ বাড়িটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এমন কথা জানিয়েছেন জাপার কয়েক নেতা। তারা বলেন, মূলত দলের কার্যক্রম সঠিকভাবে মনিটরিং করতে সুবিধা হবে এ যুক্তিতে তারা রওশনকে এ পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বর্তমান হালহকিকত জেনে রওশনও এ বাড়ি ব্যবহার করতে আগ্রহী নন। হেয়ার রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা বা সার্কিট হাউস রোডের সুগন্ধায় রওশন এরশাদ উঠুক এমনটাও চান দলীয় সংসদীয় ফোরামের কিছু সদস্য। কিন্তু রওশন এরশাদ গুলশানের নিজ বাসভবনে থাকতে পছন্দ করেন।
এ ব্যাপারে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব ফখরুল ইমাম গতকাল শুক্রবার মানবকণ্ঠকে বলেন, বাড়িটি বেশ পুরনো। এছাড়া বাড়িটি সংস্কার করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। এজন্য রওশন এরশাদ সেখানে থাকবেন না। আগামীতে ওঠার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান ফখরুল ইমাম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More