ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদে রাবি অধ্যাপকের প্রতীকী অনশন

0

দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নৈরাজ্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদে প্রতীকী অনশন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান। এ সময় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও দখলদারিত্বমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে অনশনে বসেন তিনি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিনি তার অনশন অব্যাহত রাখেন।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান জানান, দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর একের পর এক নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। এটা রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমি ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং উদ্বিগ্ন। এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো আমি নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। ওই দায়িত্ববোধ থেকে আজ আমি প্রতীকী অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের এসব নৈরাজ্য ও নিপীড়নের ফলে অভিভাবকদের মনে শঙ্কা কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পরিবেশে পড়ালেখা করতে পারছে না। আমাদের দেশের সরকার উন্নয়নের দিকে অনেক মনোযোগী। কিন্তু আমরা জানি, উন্নয়নের অন্যতম উপাদান শিক্ষা। ফলে শিক্ষাঙ্গন যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে উন্নয়নের ভিত্তি ভেঙে পড়বে। যেসব নেতাকর্মীরা শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তাদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে কৃষ্ণ রায় নামের এক হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হলকক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে ওই সমাবেশ করেন তারা।

এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ছাত্রলীগের অত্যাচারে হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে। সব হলেই নিয়মিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকার পরিবেশ নেই। আমার ছাত্র কৃষ্ণকে শিবির সন্দেহে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগ এখন গুণ্ডাতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা গুন্ডামির মাধ্যমে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চায়। তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না থামলে আমরা আরো কঠোর অবস্থানে যাব।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ক্যাম্পাস হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ জায়গা। কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব থেকে অনিরাপদ। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমার মেয়েরাও এ নির্যাতন থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। মেয়েদেরকেও নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করা হচ্ছে। আমরা ওপরে ট্রেন চালাচ্ছি। কর্ণফুলির নিচ দিয়ে ট্রেন চালাচ্ছি। পুরো বাংলাদেশকেই উন্নয়ন করে ফেলছি। কিন্তু আমার ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকতে পারছে না। এ কেমন উন্নয়ন?

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্ব র‌্যাংকিং নিয়ে চিন্তা করছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে পারছি না। কৃষ্ণ রায়ের ওপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে, প্রায় মৃত প্রায় অবস্থা তার। তার বাবা নেই। অসহায় পরিবার থেকে উঠা আসা। সে এই নির্যাতনের চিত্র ভুলবে কিভাবে? আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। না হলে আমাদের আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে উঠবে।’

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খানের সাথে প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে যোগ দেন বিক্ষোভ সমাবেশ থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দু’ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

উৎসঃ   নয়াদিগন্ত
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More