ছিটমহলে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

0

PMঢাকা: দীর্ঘদিন পর ছিটমহল নিয়ে সমস্যা সমাধনের সময় সেখানকার আইন শৃঙ্খলার যেন বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এই নির্দেশ দেন তিনি। সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, এসবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজ নিজ বিভাগের সমস্যা ও সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা। প্রধানমন্ত্রী  দেশের জনগণের জান-মাল রক্ষায় সন্ত্রাসীদের রুখতে দেশের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে যৌথ বাহিনীর মহড়া চালানোর নির্দেশ দেন। পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। দেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইভটিজিং ও এসিড সন্ত্রাস যখন শুরু হয় তখন কঠোর শাস্তি দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। ঠিক একইভাবে অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে, নইলে এ সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি হওয়াটা কূটনৈতিক সাফল্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছিটমহলের বাসিন্দারা অবস্থানগত পরিচয়ে বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন। তবে তাদের দীর্ঘ বছর ধরে থাকতে হয়েছে ভারতের ভেতরে। একই দশা ছিল ভারতের মানুষগুলোরও। তারাও এতকাল ধরে থাকছেন বাংলাদেশের ভেতরে। কিন্তু বাস্তবে তারা দেশহীন, নাগরিকত্বহীন।

বুধবার ভারতের রাজ্যসভায় সীমান্ত বিল সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়ায় শেষ হতে চলেছে তাদের নাগরিকত্বহীন জীবনের। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ছিটমহলবাসীকে নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দিলেন। প্রধানমন্ত্রী ছিটমহলের দিকে পুলিশ ও বিজিবিকে নজর দেয়ার তাগিদ দেন। ছিটমহলবাসী যাতে ভাল থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতেও বলেন তিনি।

সভায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিকেও এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সভায় আরো আলোচনা হয়, কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার রোহিঙ্গারা অন্য রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করে থাকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদেরকে কক্সবাজার থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হবে। অন্যত্র সরালে অপরাধ কমে আসবে।

আনসার বাহিনী বর্তমানে সহযোগি হিসেবে কাজ করছে। তাদেরকে রেগুলার বাহিনী করার কাজ চলছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য রেশন সুবিধা দেয়ার বিষয়টি অনেক আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি বলে সভায় জানানো হয়। সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন প্রধানমন্ত্রী।

সভা সূত্র জানায়, সভায় গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়া সম্পন্ন করায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান।

এসময় আইজিপি একেএম শহীদুল হক পুলিশের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপার কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, দেশের থানাগুলোর ভবন যে জায়গা নিয়ে করা হয়েছে সেটা পর্যাপ্ত নয়। থানার জায়গা বড় করা দরকার।

এসবির প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, পুলিশের গাড়ি দরকার। গাড়ির অভাবে পুলিশকে কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের আরো গাড়ির ব্যবস্থা হচ্ছে। টেন্ডার হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে জব্দ করা গাড়ি রাখার জন্য প্রতিটি শহরের আশপাশে ডাম্পিং স্থান তৈরির জন্য জায়গা চাওয়া হয় প্রধামন্ত্রীর কাছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের বিষয়গুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন বলে জানায় সূত্র। প্রধানমন্ত্রী পুলিশের জনবল নিয়োগের ফাইল গতিশীল করার নির্দেশও দেন। বর্তমান  মেয়াদেই তিনি ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেখতে চান বলেও উল্লেখ করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল হান্নান খান প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More