ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাই: সোয়া ৯ কোটি টাকা উদ্ধার, আটক ৭

0

রাজধানীর উত্তরায় ফিল্মি স্টাইলে সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়ি থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ছিনতাই হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়ির গতি রোধ করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ছিনতাইকারীরা একটি কালো মাইক্রোবাসে দ্রুত পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তরা বিভাগের একটি দল অভিযানে  নেমে বিকাল ৪টার দিকে লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে মাইক্রোবাসটি জব্দ করে। গাড়িটি থেকে সোয়া ৯ কোটি টাকার তিনটি বাক্স উদ্ধার করা হয়। মাইক্রোবাসের চালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

ডিবি পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ, ভুক্তভোগীর জবানবন্দি ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা- তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জড়িতদের ধরতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ আরও জানায়, জব্দ মাইক্রোবাস থেকে তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০) বুথে টাকা রাখতে ঢাকা থেকে সাভার ইপিজেড যাচ্ছিল। তুরাগ থানার ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় টাকা বহনকারী কোম্পানির গাড়িটি গেলে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস সেটির গতিরোধ করে। কোনো কারণ ছাড়াই হর্ন বাজানো নিয়ে তারা ঝগড়া শুরু করে। কালো রঙের মাইক্রোবাসে ১০ থেকে ১২ জন ছিল। কয়েকজনের মুখে ম্যাস্কও ছিল। গতিরোধের পর গাড়িটি থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেরিয়ে আসে। পরিচয় জানতে চাওয়া মাত্র তারা অস্ত্র বের করে সবাইকে জিম্মি করে। কথা বললে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।

এ সময় টাকা বহনকারীর সবাইকে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে ছিনতাইকারীরা গাড়িটি থেকে টাকার চারটি ট্রাংক বের করে এবং কালো মাইক্রোবাসে তুলে দ্রুত চলে যায়। এরপর টাকা বহনকারী গাড়ির লোকজন বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়। ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে ছুটে যান ডিএমপির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে তারা বিষয়টি জানেন। ভুক্তভোগীরাও তুরাগ থানায় যান।

প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সকালে সড়ক ফাঁকা ছিল। লোকজনের আনাগোনাও ছিল কম। এ সময় একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস হঠাৎ আরেকটি মাইক্রোবাসের সামনে এসে দাঁড়ায়। কালো রঙের মাইক্রোবাসের সামনে ডিবি পুলিশ লেখা ছিল।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় চা দোকানি সবুজ জানান, ডিবি পুলিশের স্টিকার দেখে টাকা বহনকারী গাড়িটি উদ্বেগ ছাড়াই দাঁড়িয়ে যায়। তারা মনে করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি হয়তো তাদের কিছু জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু এরপর অন্য ঘটনা ঘটে। গাড়ি থেকে নামার পর তারা অশ্লীল ভাষায় চিৎকার করতে থাকে এবং সবাইকে গাড়িতে ঢোকার নির্দেশ দেয়। এরপর টাকার ট্রাংক নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, কালো রঙের গাড়িতে করে তারা চলে যাওয়ার পর টাকা বহনকারী গাড়ির লোকজন চিৎকার করতে থাকেন। তাদের চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসে। টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা জানাজানি হয়।

মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক অজয় কর সাংবাদিকদের জানান, টাকা বহনকারী গাড়িটি সাভার ইপিজেড যাওয়ার জন্য মিরপুর ডিওএইচএস অফিস থেকে বের হয়। দিয়াবাড়ি পার হওয়ার সময় গাড়িটি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। ১০ থেকে ১২ জন ছিনতাইকারী গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তারা চলে যায়। তিনি আরও জানান, ছিনতাই হওয়া টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। টাকা বহনের আগে পুলিশকে জানানো হয়েছিল কিনা- তা তিনি জানাতে পারেননি।

এ বিষয়ে উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, কোম্পানির গাড়িটিতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। ১১ নম্বর ব্রিজ হয়ে গাড়িটি সামনের দিকে এগিয়ে গেলে পেছন থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস ডান থেকে বামে যেতে চাপ দিয়ে হর্ন দেয় এবং গাড়িটির গতিরোধ করে। হর্ন দেওয়া নিয়ে তারা প্রথমে কোম্পানির গাড়িটির চালকের সঙ্গে ঝগড়া করে। এরপর মাইক্রোবাসের চালক কোম্পানির সুপারভাইজারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। কোম্পানির গাড়িটিতে কোম্পানির একজন ম্যানেজার ছিলেন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এবং গাড়িটি থেকে টাকার চারটি ট্রাংক নামায় এবং কালো রঙের একটি হায়েস মাইক্রোবাসে তুলে ছিনতাইকারীরা দ্রুত পালিয়ে  যায়।

ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা- জানতে চাইলে ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, ডাকাতির এত বড় ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা নেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে গেলে পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু এত টাকা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন জানান, টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। টাকা বহন ও এটিএম বুথে জমার দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের। এ টাকা বিমার আওতায় রয়েছে।

যেভাবে উদ্ধার হলো টাকা : সিসি টিভির ফুটেজ থেকে কালো রঙের মাইক্রোবাসটি দেখে ওয়াকিটকিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব নিরাপত্তা পোস্টে তথ্য দেওয়া হয়। এছাড়া আশপাশের জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদেরও বিষয়টি অবগত করা হয়। পরে ঢাকার খিলক্ষেতের লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে থেকে কালো রঙের মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। মাইক্রোবাসটি চালকসহ সাতজনকে আটক এবং ছিনতাই হওয়া তিনটি টাকার ট্রাংক উদ্ধার করা হয়। তিনটি ট্রাংক থেকে সোয়া ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি ট্রাংক উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, টাকা ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে টিমকে মাঠে নামানো হয়। টাকার তিনটি ট্রাংক উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত এবং ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More