দিকে দিকে বিজয় উৎসব যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশের প্রত্যয়

0

011701n2বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গতকাল বুধবার জাতি স্মরণ করল মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী মহান শহীদদের। পাকিস্তানের অপশাসনের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার অনন্য গৌরবে উদ্ভাসিত করায় কৃতজ্ঞ জাতি বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও।

এই অনন্য দিনটিকে কেন্দ্র করে উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠে গোটা জাতি। রাজধানীসহ জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ এমনকি বহির্বিশ্বে যেখানে যেখানে বাঙালি ছড়িয়ে আছে, সর্বত্র উদ্যাপিত হয়েছে বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জন্মের এই দিনটি।

বিজয় দিবসের প্রতিটি আয়োজনে ছিল যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। ছিল যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের জোরালো দাবি। এবারের উৎসবে নতুন করে উচ্চারিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ। আর তা না হলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও উঠেছে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার উদাত্ত আহ্বানও ছিল মঞ্চ থেকে মঞ্চে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও জঙ্গিবাদের বিস্তাররোধে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানানো হয় বিভিন্ন আয়োজনে।

বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় সকালে শেরে বাংলানগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। এরপর কর্মসূচি আবর্তিত হয় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘিরে। জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে সেখানে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূর্যোদয়ের পরপরই সেখানে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধ।

স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই সকাল ১০টার পর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শুরু হয় কুচকাওয়াজ।

এবারের বিজয় দিবসে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ছায়ানটের দেশের গান, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বানে গণজাগরণ মঞ্চসহ ‘বিজয় দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’র পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ মুহূর্ত স্মরণে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ‘কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ গাওয়ার আয়োজন।

বরাবরের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

বর্ণিল শোভাযাত্রা করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। শোভাযাত্রা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সাহানে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর ফাঁসি হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের, যাঁরা বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। তাঁদের ফাঁসির পর এবারের বিজয় দিবস কিছুটা ভিন্নমাত্রা পায়। সরকারি-বেসরকারি ভবনে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। রাজধানীর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় ও রং-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়। রাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় ছিল বর্ণিল আলোকসজ্জা। গণমাধ্যমগুলোতেও ছিল বিশেষ আয়োজন।

সাভার থেকে তানজিদ বসুনিয়া জানান, বিজয়ের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছিল উৎসবের কেন্দ্রে। দেশের সূর্যসন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের মূল বেদি।

আঁধার পেরিয়ে বিজয় দিবসের রক্তিম সূর্য পূর্ব আকাশে উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশাসিক্ত বেদিতে প্রথম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধার্ঘ্য দেন। শহীদদের স্মরণে এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এক মিনিটি নীরবতা পালন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, তিন বাহিনীর প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্থাপিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর ফলকটিতেও শ্রদ্ধা জানান দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান বিচারপতি, চিফ হুইপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সাত বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী বলেন, সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি হয়ে গেছে। বাকিদেরও সাজা দিয়ে দেশকে মানবতাবিরোধী অপরাধী মুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছেদের কথাও তিনি বলেন।

স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে হাতে লাল সবুজ পতাকা আর রং-বেরঙের ফুল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্য এবং সাধারণ মানুষের ঢল শুরু হয়।

সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে মঈন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিজয়ের ৪৪ বছরেও দেশে গণতন্ত্র নেই, সুশাসন নেই। অর্থনৈতিক মুক্তির কথা সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে বললেও বাস্তবিক অর্থে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। বিরোধী দল হয়ে আমরা সভা-সমাবেশের অধিকার পাই না। তাহলে কিসের বিজয় অর্জন করলাম?’

স্মৃতিসৌধের ভেতরে-বাইরে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্প ধারা, উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ৭১, জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, যুবদল, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কৃষক লীগ, কৃষক সমিতি, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু সংসদ, জাসাস, মহিলা পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা জানায় শহীদদের প্রতি।

স্মৃতিসৌধে আসা শিশুদের এক হাতে ছিল ফুল, অন্য হাতে জাতীয় পতাকা। পোশাকেও লাল-সবুজের বাহার। অন্যবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি মানুষ এসেছিল স্মৃতিসৌধে। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ স্মৃতিসৌধ চত্বরে অব্যবস্থাপনার কারণে তাঁরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বিকেল পর্যন্ত সেখানে চলে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব।

আসে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সম্মিলিত প্রাক্তন সৈনিক কল্যাণ সংস্থা, মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মাশরুম ফাউন্ডেশন, বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদ, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, সজাগ, অ্যাডাব, ছাত্রলীগ, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাকের পার্টি, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রদল, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাসা, সাভার উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদ, সাভার উপজেলা শিশু সুরক্ষা মনিটরিং কমিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, সচেতন নাগরিক কমিটি (সাভার), টিআইবি, বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ব্যাংক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, তৃণমূল গার্মেন্ট শিল্প শ্রমিক কর্মচারী ফাউন্ডেশন, কর্মজীবী নারী, জাতীয় শ্রমিক লীগ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, আদিবাসী বৌদ্ধ কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), গণফোরাম, বাংলা একাডেমি, শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, সমাজবাদী ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কর্মসংস্থান ব্যাংক, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় যুব শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা পার্টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালার নির্মূল কমিটি, গণতন্ত্রী পার্টি, খেলাঘর আসর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তিন বাহিনীর প্রধানরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আরো ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিকী ববি।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর এমন ২৭ জন সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিষু কান্ত চতুরবেদীর (অব.) নেতৃত্বে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্র বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অংশগ্রহণ করে। এবারের কুচকাওয়াজে নতুন সংযোজন সেনাবাহিনীর মহিলা কন্টিনজেন্ট।  কুচকাওয়াজে ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১২০ ফুট প্রস্থের একটি জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয়। বিজয় দিবস প্যারেড-২০১৫-এর অধিনায়ক ছিলেন ৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং এবং এরিয়া কমান্ডার, সাভার এরিয়া, মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

কুচকাওয়াজের যান্ত্রিক বহরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংবলিত সুসজ্জিত গাড়িবহর প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপাররা আকাশ থেকে অবতরণ করে কুচকাওয়াজকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন। বিভিন্ন যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পর শুরু হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে।

এবারের প্যারেড বিভিন্ন আঙ্গিকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন ও প্যারেডকে উপভোগ্য করতে সার্বিক সাজসজ্জায় নতুন মাত্রা আনা হয়। বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার সড়কগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় দিবসের চেতনাসংবলিত ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকীতে স্বাধীনতার মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৮টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশের জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মারক খাম, ডাটা কার্ড ও ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সিল ব্যবহার করে দশ টাকা মূল্যমানের পাঁচটি ও ৬০ টাকা দামের একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন।

সেনাবাহিনীপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ : আইএসপিআর জানায়, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বীর যোদ্ধাদের সমন্বয়ে ৬০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ভিষু কান্ত চতুরবেদীর নেতৃত্বে গতকাল ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। এ সময় তারা কুশলাদি বিনিময় করে। ভারতীয় প্রতিনিধিদলটি র‌্যাডিসন হোটেলে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনীপ্রধান তাদের স্বাগত জানান।

প্রতিনিধিদলটি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল বাংলাদেশে এসেছে। তারা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। আগামীকাল কাপ্তাই লেক ও নীলগিরি এবং ১৯ ডিসেম্বর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদলটি ২০ ডিসেম্বর দেশে ফিরে যাবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সেনাবাহিনী, সদরঘাট এলাকায় নৌবাহিনী এবং মিরপুর-২ নম্বর স্টেডিয়ামে বিমানবাহিনীর বাদক দল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাদ্য পরিবেশন করে। সেনা সদরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বাদক দল বাদ্য পরিবেশন করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More