রাজধানীর সবুজবাগ এবং খিলগাঁও থানার কিছু অংশ নিয়ে নন্দীপাড়া। এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ। মূলত দক্ষিণগাঁও ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ার পর এটি ভেঙে ৭৩ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়। নতুন এই ওয়ার্ডের অন্তত তিনটি এলাকায় পানির তীব্র সংকট চলছে এবং এতে এলাকার মানুষের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে।
নন্দীপাড়া এলাকায় রাজধানীর নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের বসবাস। এলাকাটি ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে এলেও এখানে পানির ও গ্যাসের তীব্র সংকট রয়েছে । পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে রান্নাবান্না বন্ধ থাকে দিনের বেশির ভাগ সময়। লোকজনকে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হয়। অথচ এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের।
নন্দীপাড়ার উত্তর রসুলবাগ, মধ্য নন্দীপাড়া এবং নন্দীপাড়া ছয় নম্বর রোডে তীব্র পানির সংকট পাওয়া গেছে।
ওয়াসা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্র জানায়, এখানে বিদ্যমান পাম্পগুলো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। নতুন পাম্প বসানো প্রয়োজন হলেও জায়গার অভাবে তা স্থাপন করতে পারছে না ওয়াসা।
৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আজিজুল হক। নন্দীপাড়া বড় বটতলায় তার কার্যালয়। তিনি জানান, উত্তর রসুলবাগ, মধ্য নন্দীপাড়া ও নন্দীপাড়া ছয় নম্বর রোডে দীর্ঘদিন ধরে পানির সমস্যা ভোগ করছে মানুষ। এই ওয়ার্ডে চারটি পানির পাম্প রয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় তা নিতান্তই কম। এখানে আরও দুটি পানির পাম্প দরকার। এ ব্যাপারে আমরা ওয়াসার সঙ্গে কথা বলেছি। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পাম্প বসানো যাচ্ছে না।
পানি সংকট থাকা তিনটি এলাকার মধ্যে উত্তর রসুলবাগ এলাকাটি নিম্নবিত্ত মানুষের বসবাস বেশি। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা রিকশাচালক ও গৃহকর্মীর কাজ করে থাকেন। এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ঘর ভাড়া রয়েছে এখানে।
সরেজমিনে গিয়ে ঢাকাটাইমসের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় উত্তর রসুলবাগের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের। তিনি পেশায় রিকশাচালক। তার স্ত্রী গৃহকর্মী। আব্দুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সকাল বেলায় আমাদের এখানে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে পানি পাওয়া যায় না। অনেক সময় পানির অভাবে গৃহস্থালি অনেক কাজ করা হয় না। অনেক সময় পানির অভাবে গোসল না করেই বাইরে চলে যাই।’
নন্দীপাড়া ছয় নম্বর সড়কে ভাড়া থাকেন গোলাম হোসেন। তিনি কিছুদিন আগে বিয়ে করে এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে সস্ত্রীক উঠেছেন এক রুমের সাবলেট বাসায়। সদ্য বিবাহিত এই যুবক পাঠাও যাত্রীপরিবহন সেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
গোলাম হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে পানির সমস্যায় ভুগছি। এমনও হয় যে পানির অভাবে রান্নাবান্না পর্যন্ত করতে পারি না। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেয়ে থাকি। প্রয়োজনীয় কাজটুকু করতে না পেরে অনেক সময় বাইরে বেরিয়ে যাই। আমার স্ত্রী তার ফুপাতবোনের বাসায় শেখের জায়গায় চলে যায়। সারাদিন সেখানে থাকে, আমি রাতে বাসায় আসার সময়ে তাকে নিয়ে আসি।’
পানি সংকটের পাশাপাশি এই এলাকায় গ্যাসের সমস্যাও দীর্ঘদিন ধরে। তবে অধিকাংশ গ্যাসের সংযোগ অবৈধ। বর্তমানে গ্যাসের নতুন কোনো সংযোগের অনুমোদন দিচ্ছে না তিতাস। কিন্তু অনেক নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। তারা নানাভাবে গ্যাস অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সংযোগ নিয়ে চুলা জ্বালাচ্ছে।’
দিনের অধিকাংশ সময়ে পানি-গ্যাস না পেয়ে অনেকে বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অনেকে বাড়িতে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করেন। তবে পানি সমস্যার বিকল্প কোনো পথ নেই নেই কারও।
এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, নন্দীপাড়া এলাকায় একটি পানির টিউবয়েল আছে। ওখানে লোক সংখ্যার তুলনায় আরেকটি টিউবয়েলের দরকার। কিন্তু জায়গার অভাবে টিউবয়েল করতে পারছি না। ওনারা যদি জায়গার ব্যবস্থা করে দেন, আমি তাহলে টিউবয়েল করে দিবো।
ঢাকাটাইমস