ভারতের লোকসভা ভোটের আগে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরানো নিয়ে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বিতর্ক আবার সামনে এসে পড়ল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার মন্তব্যে।
হিন্দুত্বের প্রচার নিয়ে পরিষদ বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নিচ্ছে। সেই উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে ২৩ আগস্ট শনিবার কলকাতায় প্রবীণ তোগাড়িয়া দাবি তুলেছেন, ১৯৫১ সালের পরে বাংলাদেশ থেকে যে সংখ্যালঘু মুসলিমরা ভারতে এসেছেন, তাদের ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশ তাদের না ফেরালে সামরিক অভিযানের হুমকিও দেন তিনি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তিনি ছেড়ে কথা বলেননি। তোগাড়িয়ার হুঙ্কার, “মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করা হবে।”
তোগাড়িয়ার এই মন্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ বলে মনে করছে তৃণমূল এবং বামেরা। এমনকি বিজেপিও সরাসরি তোগাড়িয়ার বক্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছে না। সিপিএম সাংসদ মহাম্মদ সেলিম বলেন, “প্রবীণ তোগাড়িয়ার মতো লোকেরা যে রাজনীতির ধারক-বাহক, সেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি, সংখ্যাতত্ত্বের কোনো জায়গা নেই। সামনেই পুজো এবং ঈদ। গ্রাম-বাংলা এবং শহরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গুলিয়ে দিতে চাইছে এই সব সাম্প্রদায়িক উন্মাদরা।”
তোগাড়িয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কেন ব্যবস্থা নিল না, সে প্রশ্নও তুলেছেন সেলিম। তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ অবশ্য মনে করেন, তোগাড়িয়ার মতো মানুষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়। তিনি বলেন, “এই সব সুড়সুড়ি দিয়ে বাংলায় কোনো লাভ হবে না।”
তোগাড়িয়ার মন্তব্য নিয়ে কিছুটা আতান্তরে পড়েন বিজেপি নেতৃত্বও। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ স্বীকার করেন, বিজেপির ঘোষিত নীতি অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো। কিন্তু তোগাড়িয়া এ দিন যে ভাষায় এবং ভঙ্গিতে বিষয়টি বলেছেন, তা নিয়ে রাহুলবাবুরা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন।
প্রসঙ্গ এড়াতে রাহুল বাবুর বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে অন্য কারো মন্তব্যের ওপর আমি মন্তব্য করবো না।” রাজ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্যের সতর্ক মন্তব্য, “আমাদের সীমান্ত সমস্যা মানুষ বোঝেন। কোনো সমস্যা থাকলে তা আমাদের মতো করে সমাধান করতে হবে।”
অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এখন সতর্ক। কারণ, এখানে ভোটারদের একটা বড় অংশ যেমন মুসলিম, তেমনই পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
এই অংশের মানুষের কথা ভেবেই ভোটের প্রচারে কড়া সুরে মোদির বক্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তার কথায় ভুল বার্তা যাচ্ছে বুঝে মোদিও ভোটের প্রচারের পরবর্তী পর্বে ওই বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তার পরে ভোটে তৃণমূল যে বিপুল সাফল্য পেয়েছিল, তার নেপথ্যে মমতার ওই কড়া অবস্থান অন্যতম কারণ বলে মানেন তৃণমূল ও বাম নেতাদের সূত্র: আনন্দবাজার।