বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করছে, সংকট সমাধানে বিসওয়াল-তারনকো বৈঠক হয়েছে বলে জানান মুখপাত্র ডোজাররিক

0

82823_411 (1)বাংলাদেশের চলমান প্রাণঘাতি রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিরক গতকাল বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে সংস্থার সদর দফতরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বুধবার জাতিসংঘের সহাকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের মধ্যে এক আলোচনায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। তবে সেই আলোচনার সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু ও অগ্রগতির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি ডুজাররিক। তিনি বলেন, তারানকো দেশাই আলোচনাটি জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের অংশ হিসাবে হলেও তাতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা স্টিফেন ডুজারিরক আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন। এ কারণে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করার জন্য সংস্থার সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। তারানকো বর্তমানে রাজনৈতিক বিষয়াদির (পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স) এর দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও তাকে এই দায়িত্ব (টাস্ক) দেওয়ার কারণ হলো, তিনি ইতিপূর্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে কাজ করার জন্য দেশটি সফর করেছিলেন।
এই বক্তব্যের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত তিনজন সাংবাদিক বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। এরমধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের জাতিসংঘ করেসপন্ডেন্টও ছিলেন। তাদের প্রশ্নে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ও নিশা দেশাইয়ের বৈঠকের সুনির্দিষ্ট আলোচনা ও অগ্রগতি, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর গুরুতর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং অবরূদ্ধ থাকা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ও উঠে আসে। তবে স্টিফেন ডুজাররিক এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোন জবাব না দিয়ে বলেন, পরিস্থিতির প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ নজর রয়েছে এবং বিষয়গুলিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তারানকো-দেশাই বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে এখনও বিস্তারিত তথ্য আসেনি, তথ্য আসার পর তা জানানো হবে।
বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জাতিসংঘ
এর আগে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। ডুজাররিক বলেন, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জাতিসংঘ। সঙ্কট উত্তরণে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দায়িত্ব দিয়েছেন সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোকে। দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। বুধবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিফ্রিংয়ে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের বৈঠকের প্রসঙ্গও উঠে আসে। জানানো হয়, স্থানীয় সময় বুধবার বিকালেই তাদের বৈঠক হওয়ার কথা। তবে তারা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। ওই বিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। তাতে উঠে আসে জনদুর্ভোগ। যানবাহনে আগুন দেয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ। ওই ব্রিফিংয়ের বাংলাদেশ অংশ প্রশ্ন-উত্তর আকারে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আমি মুশফিকুল ফজল। আমি বাংলাদেশ বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি জানেন যে, বাংলাদেশ অত্যন্ত সঙ্কটময় সময়ের মুখোমুখি। জনদুর্ভোগ চরমে। রাজপথে যানবাহন পুড়ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সীমা ছাড়িয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য লড়ছে জনগণ। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি। এটা ছিল একতরফা নির্বাচন। ওই নির্বাচনের আগে সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। কিন্তু কোন ফয়সালা না হওয়ায় তিনি ফিরে যান। এরপর একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। তাতে ভোট ছাড়াই ১৫৪টি আসনে বিজয়ী হন সরকারদলীয় সদস্যরা। এ অবস্থায় আমি আসলে জানতে চাই, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে জাতিসংঘ আসলে কি করছে? বাংলাদেশের এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আমি জানতে চাই, জাতিসংঘের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করাটাই কি যথেষ্ট বলে আপনি মনে করেন? নাকি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের আরও কিছু করা উচিত? অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আরও বেশি কিছু করা উচিত জাতিসংঘের? আপনাকে ধন্যবাদ।
উত্তর: আপনি ঠিক বলেছেন, পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স-এর ইনচার্জ সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ (লিয়াঁজো) রাখার দায়িত্ব দিয়েছেন মহাসচিব বান কি মুন। তিনি সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক উন্নয়নে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মহাসচিব বান কি মুন। আপনি জানেন যে, অনেক ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। আমি মনে করি, অবশ্যই অনেকবার যেমনটা আমরা বলেছি, বাংলাদেশে সহিংসতা ও প্রাণহানিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
অন্য এক সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান- বাংলাদেশ ও পশ্চিম সাহারা নিয়ে আপনি বলেছেন। আপনি বলেছেন, অস্কার তারানকো এ বিষয়ে এখনও কাজ করছেন। আমি শুনেছি, বুধবার বিকালেই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তারানকো। কি নিয়ে ওই বৈঠক এটা কি অনুমান করা ঠিক হবে? আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
উত্তর: আমি মনে করি এ নিয়ে কোন কিছু অনুমান করা ঠিক নয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More