বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় নিহত ৯

0

nihotবিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থকদের ওপর হামলা, ভোট জালিয়াতি, অনিয়ম এবং ব্যালট বাক্স-ব্যালট ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের টানা ভোটগ্রহণ চলে। ৬৩৯ ইউপিতে একযোগে অনুষ্ঠিত ভোটে নির্বাচনী সহিংসতায় ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব কারণে ৩৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে বিশাল কারচুপি হয়েছে দাবি করে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দেয়া হয়েছে। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ কিছু কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা স্বীকার করে সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার বিষয়টি স্বীকার করা হলেও তাদের দাবি, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণই ছিল।
দেশজুড়ে সহিংসতা: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটে বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে, যশোর সদরে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ৫ জন মারা গেছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলায় ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় ছাত্র সুজন মৃধা নিহত হন। নাটোরের লালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক। জামালপুরে কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে মোমেনা বেগম নিহত হন। এছাড়া যশোরে নির্বাচনে সহিংসতা চালানোর জন্য বুধবার রাতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত ২ জন গতকাল মারা যায়। সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন সহস্রাধিক ব্যক্তি। এছাড়া কেন্দ্র দখল, জালভোট ও প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
চট্টগ্রাম: জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার বাউরিয়া ইউনিয়নের বাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখলের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী জালাল উদ্দীন ও একই দলের বিদ্রোহী বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় নিহত ৯চেয়ারম্যান প্রার্থী জিল্লুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন পুলিশের এক কনস্টেবলসহ আরো দশজন। এদের মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতরা হলেন সানাউল্লাহ, জামাল ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
সন্দ্বীপ থানার ওসি আবদুস সালাম জানান, কেন্দ্র দখল নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের সংকটজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে হরিশপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হান্নান রানার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে জাতীয় পার্টি প্রার্থী আবদুস সালামের সমর্থকরা। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হান্নানের ভাই ও ছেলে গুলিবিদ্ধ হন।
সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলায় কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে অন্তত ১৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও প্রার্থীর সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের তিন উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে এই ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী।
কেরানীগঞ্জ: ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে চেয়রাম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের আয়নাল হোসেন ও বিএনপির নুরুল হক রিপন সমর্থকদের গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত শুভ কাজী মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা হালিম কাজী পেশায় অটোরিকশা চালক।
এ ঘটনার পরপরই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
যশোর: জেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশ-সন্ত্রাসী সংঘর্ষের সময় আবদুস সাত্তার বিশে (৭০) নামে এক ফেরিওয়ালা নিহত হয়েছেন।
জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে সন্ত্রাসী ওই কেন্দ্রের সামনে বোমাবাজির পর কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালায়। এরই মধ্যে আবদুস সাত্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত আবদুস সাত্তার বিশে সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে নির্বাচনের আগের রাতে যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের আন্দোলপোতায় বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে পাঁচজন আহত হন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে ইবাদুল ইসলাম ও সবুজ নামে দুই যুবক মারা যান।
যশোরের কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানান, বুধবার রাত ৮টার দিকে লেবুতলা ইউনিয়নের আন্দোলপোতা হাজি মতিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের এক পাশে রুবেল, ইবাদুল, রকি, মোস্তফা, সবুজসহ কয়েকজন বোমা বানাচ্ছিলেন। হঠাৎ বোমার বিস্ফোরণ ঘটলে ৫ জন আহত হন। পরে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইবাদুল ও সবুজ মারা যান।
এছাড়াও যশোরের চূড়ামনকাঠী ইউনিয়নের চূড়ামনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারার জেরে তিন সদস্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ বিন আকবরসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।
আটক করা হয়েছে কাশিমপুর ইউনিয়নের বিজয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইসরাত জাহান, উপশহর ইউনিয়নের শহীদ সরণি বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তৌহিদুল ইসলামকে ও গোয়ালদহ ইউনিয়নের কন্যাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রবিউল ইসলামকে। অনিয়ম ও জালভোটে সহযোগিতা করার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। এ জেলায় সহিংসতা ও কারচুপির অভিযোগে সদর উপজেলার অন্তত ৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
জামালপুর: জেলার মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুরচর কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাকিবুল ইসলাম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মেলান্দহ থানার ওসি নাসিমুল হক জানান, ওই কেন্দ্রের বাইরে মেম্বার প্রার্থী মোকছেদ আলী ও মর্জিনা বেগমের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় রাকিবুল মাটিতে পড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তখন পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলেও জানান ওসি। এদিকে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী আদ্রা ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম, মাহমুদপুর ইউনিয়নের নূরে আলম তালুকদার রুনু এবং নাংলা ইউনিয়নের নূরল হক নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোলা: সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ৪ নম্বর ও ৬ নম্বর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজানুর রহমান ও একই দলের বিদ্রোহী মিঠু চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ভোলা থানার ওসি খায়রুল কবির জানান, ইউনিয়নের ৬ নম্বর কেন্দ্রে ওই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের ২০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। ৪ নম্বর কেন্দ্রে ওই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ওই সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে মানবকণ্ঠের ভোলা প্রতিনিধি আফজাল হোসেন আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, নির্বাচনে প্রকাশ্যে জালভোট ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলে ভোলা সদরের পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দুই প্রার্থী। এরা হলেন বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সিরাজ উদ্দিন ও লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী স্মৃতি বেগম সুমি।
শেরপুর: জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কুরুয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে দখলে নিতে চেষ্টা করে। এ সময় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামানকে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেয় তারা।
এছাড়াও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, সুনামগঞ্জের ছাতক, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ ও বরুড়া, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট, রংপুরের পীরগঞ্জ, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, নাটোরের লালপুর, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জে সংঘর্ষের খবর দিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
নির্বাচন বর্জনের হুমকি বিএনপির: দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে পরবর্তী চার ধাপের নির্বাচন বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলটির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ হুঁশিয়ারি দেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাউদ্দীন ও সহ-প্রচার সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স।
সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মোহাম্মদ শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচন ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। এমন চলতে থাকলে সামনে যে চার ধাপের নির্বাচন আছে, তা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ভোটের আগের রাত ১২টার পর থেকেই সিল মারা শুরু হয়। শুধু মানুষের রক্ত ঝরে, প্রাণ যায়। এ নির্বাচনের মানে কী? এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ব্যাপক অ্যাকশন নিতে হবে। কেবল একজন এসপিকে ভর্ৎসনা করলে হবে না। বিএনপির এ নেতা বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির ক্ষমতা যে আছে, তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সিইসির ভূমিকাও দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কাছে তিনি অসহায়। কারণ তারা সবাই একাট্টা হয়ে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। তারা ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জালভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে জাতীয় পার্টিও। দলটির পক্ষে লিখিত অভিযোগে কুমিল্লার সব ক’টি ইউপির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি ক্ষমতাসীনদের: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার  কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ছয় হাজারেরও বেশি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২২টিতে সামান্য কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। এটি একদিক থেকে ত্রুটির আওতায়ই পড়ে না। তাই ইউপি নির্বাচনকে কোনোভাবেই ত্রুটিপূর্ণ বলার সুযোগ নেই। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বক্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, বিএনপি এখন কোনো কারণ ছাড়াই নালিশ করছে। তারা একটি নালিশি দলে পরিণত হয়েছে।
নির্বাচনী সহিংসতা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিশেষ করে মেম্বার নির্বাচনে সামাজিক দ্বন্দ্বের অনেকটা বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই ধাপে যাদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে জামালপুরে যার কথা বলা হচ্ছে উনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, নির্বাচনী সহিংসতায় নয়। তবে অন্য জায়গায় মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। তবে প্রশাসন তৎপর। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ স্থগিত ৩৩ কেন্দ্রে: প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৪০টি কেন্দ্র স্থগিত করা হলেও এই ধাপে নির্বাচনী সহিংসতার কারণে ৩৩ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। যশোর সদরে ইউপি নির্বাচন চলাকালে ভাতুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষে আবদুস সাত্তার নিহত হলে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ স্থগিত করে। এছাড়া ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে অবাধে সিল মারা, সিলযুক্ত ব্যালট পেপার জব্দ একং ভোটকেন্দ্রে বোমাবাজি ও গোলাগুলির ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয় চূড়ামনকাঠী ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, কাশিমপুর ইউনিয়নের বিজয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপশহর ইউনিয়নের ই-ব্লক শহীদ সরণি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গোয়ালদহ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র।
প্রথম ধাপের চেয়ে পরিস্থিতি ভালো; সন্তুষ্ট ইসি: ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গোলযোগ ও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন। ভোটারের উপস্থিতি নিয়েও সন্তুষ্ট ইসি কমিশনাররা। দ্বিতীয় ধাপের ৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সকাল থেকেই চার নির্বাচন কমিশনার বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এছাড়া ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। জেলা পর্যায় থেকে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপের এ পর্যায়ে পরিস্থিতি ভালো। প্রথম ধাপে ভোটের আগের রাতেই সিল মারার ঘটনা ঘটেছিল বেশ কিছু কেন্দ্রে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বড় কোনো অনিয়ম ঘটেনি। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বলেন, কিছু কিছু জায়গায় অনিয়ম হয়েছে। সহিংস কর্মকাণ্ডের খবরও কম আসছে। তবে প্রথম ধাপের চেয়ে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো। দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদেও ভোট সুষ্ঠুভাবে চলছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার  মো. আবু হাফিজও। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গণমাধ্যম, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান ভালোভাবে যাচ্ছে। আবু হাফিজ বলেন, যেখানে কোনো অনিয়মের তথ্য আসছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে মোট ৩৩ হাজার ২৯০ জন প্রার্থী রয়েছেন।  চেয়ারম্যান পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩ হাজার ১১৪ জন। এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৫৫৯ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে এক হাজার ৫৫৫ জন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৬ হাজার ৭৯৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৩ হাজার ৩৭৭ জন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More