মিতু হত্যার জট খুলবে এসএমএস আর মাইক্রোবাসে?

0

[ads1]Mituচট্টগ্রাম : দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু শনিবার রাতে এক ক্ষুদে বার্তায় (এসএমএস) জানতে পারেন রোববার ৭টা ২০ মিনিটে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। ঠিক একই ম্যাসেজ এসেছে ‘ইকুইটি সেন্ট্রিয়াম ভবনে’ অবস্থান করা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সকল অভিভাবকদের কাছে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ সেদিনই বাংলামেইলকে জানিয়েছিল এমন কোনও ‘এসএমএস’ তারা পাঠাননি। তাই প্রশ্ন উঠছে, কোথা থেকে এসেছিল সেই এসএমএস?[ads1]

এদিকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার দৃশ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে। দুর্বৃত্তরা যখন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করছিল, তখন জিইসি মোড়ের দিকে কিছুটা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল একটি কালো মাইক্রোবাস। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার ১০ সেকেন্ডের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে মাইক্রোবাসটি। পাঁচ সেকেন্ডের মত ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চলা শুরু করে মাইক্রোবাসটি। পরে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যায়। কালো কাঁচের এ মাইক্রোবাসটির চালকের আসনের পাশের জানালাটা খোলা ছিল। অন্যসব জানালা বন্ধ দেখা গেছে।

পালিয়ে যাচ্ছে ঘাতক, ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে পেছনে মাইক্রোবাস[ads1]

ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের স্কুল শাখার উপাধ্যক্ষ সৌমিত কুমার দাশ বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে স্কুল শুরু হয়। আগেভাগে স্কুল শুরু হবে এমন নির্দেশনা দিয়ে স্কুল থেকে কোনও এসএমএস পাঠানো হয়নি। কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ অনুসরণ করে। প্রথমত, অ্যাডমিন প্যানেল এসএমএসটা তৈরি করে। তারপর সেটা তার দেখার পর আইটি সেক্টরে দেওয়া হয়। তাই কর্তৃপক্ষের অগোচরে অভিভাবকদের কাছে এসএমএস যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তবে পুলিশ সুপারের স্ত্রী নিহত হওয়ার দিন বাবুল অাক্তারের বাসায় নিয়মিত যাতায়ত থাকা সিএমপির একটি থানার সেকেন্ড অফিসারের এক স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মাহির আক্তার নগরীর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওই স্কুলে আমার ছেলেও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আগে স্কুল শুরুর সময় সকাল ৮টা হলেও শনিবার রাতে ভাবি আমাকে ফোন করে জানান তাকে স্কুল থেকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। রোববারে স্কুলে অ্যাসেম্বলি হবে। তাই মাহিরকে সাতটা ২০ মিনিটে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। স্কুলের গাড়িও একটু এগিয়ে সকাল ৬টা ৫০ এর দিকে জিইসি’র মেরিডিয়ান রেস্টুরেন্টের সামনে আসবে। তাই ভাবি ছেলেকে গাড়ি তুলে দিতে সাড়ে ৬টার দিকে বাসা থেকে বের হন।’[ads1]

মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা[ads2]

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল পড়ুয়া কয়েক শিক্ষার্থী ইকুইটি সেন্ট্রিয়াম ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। মাহমুদা খানম মিতুর মৃত্যুর দিন বাবুল আক্তারের বাসায় আসা এরকম এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকও তার কাছে স্কুলের সময় পরিবর্তনের এসএমএস আসার কথা জানান। স্কুলের সময় পরিবর্তনের ওই এসএমএসটি শুধু ‘ইকুইটি সেন্ট্রিয়াম ভবনে’ অবস্থান করা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে এসেছিল। এছাড়া মাহমুদা খানমের কাছে শনিবার রাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের বরাতে এসএমএস যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাহমুদার কাছে এসএমএস যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসএমএসটা কারা পাঠিয়েছিল সেটা তদন্ত করা হবে। প্রযুক্তিগতভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টির জন্য এসএমএস ওই ভবনের বাসিন্দাদের কাছেই শুধু পাঠানো হয়েছিল।’[ads1]

গলির মুখে সন্তানের হাত ধরে মাহমুদা অাক্তার মিতু[ads1]

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬টা ৩২ মিনিট। এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু তার সন্তান মাহিরের হাত ধরে গলির মুখে এসে পৌঁছান। ঠিক এর ১৫ সেকেন্ড পর বিপরীত প্রান্তে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা এক যুবক মোবাইলে কথা বলতে বলতে তাকে অনুসরণ করে পেছন পেছন হাঁটতে থাকেন।

৬টা ৩২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে তিনি ওয়েল ফুডের সামনে পৌঁছানোর সাথে ১ সেকেন্ডের ব্যবধানে পেছন থেকে দৌঁড়ে মিতুর দিকে এগিয়ে যায় ঘাতক। ঠিক একই সময়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আগে থেকেই নিরিবিলি হোটেলের সামনে  দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবক মিতুর উপর হামলা করে। হামলা শুরু এবং শেষ করে মোটরসাইকেলে উঠতে ঘাতকরা সময় নিয়েছে মাত্র ১৭ সেকেন্ড! এর মধ্যে মাহমুদা খানম মিতুর শরীরে করা হয়েছে ৮টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও দুটি গুলি।[ads2]

মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অনুসরণ করছে ঘাতক[ads1]

৬টা ৩৩ মিনিট ০৫ সেকেন্ডে খুনিরা কিলিং মিশন শেষ করে মোটরসাইকেলে চেপে বসে। তবে মোটরসাইকেলটি চালু হতে সময় নেয় ১৯ সেকেন্ড। ৬টা ৩৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে তিন খুনি মোটর সাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। ৬টা ৩৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থলে, পাঁচ সেকেন্ডের মত ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চলা শুরু করে মাইক্রোবাসটি। পরে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যায়। কালো কাঁচের এ মাইক্রোবাসটির চালকের আসনের পাশের জানালাটা খোলা ছিল। অন্যসব জানালা বন্ধ দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের কিছুটা অদুরে একটি কালো মাইক্রোবাস অবস্থান করছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘাতকদের ‘ব্যাকআপ’ এর জন্য ওই মাইক্রোবাসে ভারী অস্ত্র ও গ্রেনেড বহন করা হয়েছিল। কোন রকম বাধা আসলে, তা মোকাবেলা করার জন্য ওই মাইক্রোবাসটি আনা হয়েছিল। ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জেএমবি এভাবে কালো মাইক্রোবাস ‘ব্যাকআপ’ রেখেছিল।[ads1]

বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা মোটর সাইকেল

কেননা, যখন মিতুর ওপর হোন্ডায় থাকা ওই দুইজন ও অনুসরণকারী যুবক আক্রমণ করে এর আগে প্রায় এক মিনিট সময় ধরে ওই কালো মাইক্রোটি ওয়েল ফুডের সামনে আড়াআড়িভাবে রেখে এই সময়ে কোন গাড়ি জিইসি থেকে গোল পাহাড়ের দিকে অাসতে দেয়নি। মিশন শেষে যখন হোন্ডায় করে তিন ঘাতক পালিয়ে যায় তখনই পিছন পিছন ওই কালো মাইক্রোটি হোন্ডার পেছন পেছন চলে যায় গোল পাহাড়ের দিকে।[ads1]

নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, হত্যার ধরণ দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা আগে থেকেই ঘটনাস্থল রেকি করেছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে বাসা থেকে বের হয়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে কখন আসবেন, তা নিশ্চয় দুর্বৃত্তরা আগে থেকে খোঁজখবর রাখছিল।

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী তাঁর ছেলে মাহমুদ আকতার মাহিরকে নিয়ে জিইসি মোড় পৌঁছার আগেই ওয়েল ফুড নামক দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে করে তিন আরোহী আসে। যে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার মাথায় হেলমেট ছিল। বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫। তার পেছনে দুজন বসা ছিল। মাঝখানে বসা যুবকের হাতে ছুরি ছিল। পেছনে বসা তৃতীয়জনের হাতে একটি পিস্তল ছিল।[ads2]

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের পাশাপাশি জিইসি ও আশপাশ সহ হোন্ডাটি কোন পথ দিয়ে এসেছিল, কোন স্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল সেটি নিশ্চিত হতে নগরীর সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার। এছাড়া হোন্ডার পাশাপাশি মাইক্রোটির সম্পৃক্ততাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা।[ads2]

এদিকে শুলকবহরের বড় গ্যারেজ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটে রয়েছে ‘চট্ট মেট্রো-ল-১২-৯৮০৭’ বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য মতে, এই নম্বরের গাড়ির মালিক মো. আবদুর রহিম। পিতা-মৃত সৈয়দ আহমেদ। ঠিকানা-১৮/১৯ টেরিবাজার, সিটি টাওয়ার, চট্টগ্রাম। ২০১৪ সালে মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন করা হয়।

অথচ টেরি বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানিয়েছেন এই নম্বরের গাড়িটি তার কাছেই রয়েছে। পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন নম্বর (আইপি ৫০ এফএমজি-২-এ-১২৯৯৪৬৫) এবং চেসিস নম্বর হলো (বিআরবিএই-১০১০০০০৪২)। বিআরটিএ নিবন্ধন অনুযায়ী মোটরসাইকেলটি নম্বর হচ্ছে চট্ট মেট্রো-হ-১৩-১৫৯৭। অথচ ঘটনার দিন দুর্বৃত্তরা গাড়িটিতে (চট্ট মেট্রো-ল-১২-৯৮০৭) নম্বর প্লেট ব্যবহার করেছিল।[ads1]

নিহত মাহমুদা খানম মিতু

সেই গাড়ির আসল মালিক বলছেন, তার গাড়ির নম্বর লাগিয়ে এই হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে। বিআরটিএ নিবন্ধন অনুযায়ী চট্টমেট্রো-হ-১৩-১৫৯৭ নম্বরের মোটরসাইকেলটির মালিক নগরের জামাল খান এলাকার মৃত গোলাম শরীফের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন। ২০১০ সালে গাড়িটি নিবন্ধন করা হয়। আর দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, ২০১১ সালে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মোটরসাইকেলটি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।[ads1]

এরপর তিনি গাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তিনি বিআরটিএকে জানায়নি। যার কারণে আইনগতভাবে এই মোটর সাইকেলের মালিক এখনও দেলোয়ার। সেকারণে প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডে দেলোয়ারের কোনও সম্পৃক্তা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে গতকাল রাতেই উদ্ধার হওয়া মোটর সাইকেলের মূল মালিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

তবে মিতু হত্যায় জেএমবির পাশাপাশি শিবিরেরও সম্পৃক্ততা থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। তবে সুনির্দিষ্টভাবে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলতে না পারলেও এটির রহস্য উদঘাটনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় সোমবার দুপুরে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বাবুল অাক্তার। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়নি পুলিশ।[ads1]

সূত্রঃ বাংলা মেইল

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More