‘মুখ ঢেকে’ হল ছেড়েছেন অভিযুক্তরা, মামলার প্রস্তুতি ফুলপরীর

0

ইসলামী বিশবিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের দ্বারা র‍্যাগিংয়ের নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটিগুলো। প্রতিবেদন, অভিযুক্ত, ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, আবাসিক শিক্ষার্থীরাসহ সবাই ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশেই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন।

ইতোমধ্যে ‘ঘটনার সত্যতা পেয়েছে’ উল্লেখ করে পাঁচ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত অন্তরা ও তাবাসসুম ইসলাম হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আগে থেকেই হলের বাইরে ছিলেন।

সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অন্য দুই অভিযুক্ত ইসরাত জাহান মিম ও মোয়াবিয়া জাহান ‘মুখ ঢেকে’ হল ছেড়েছেন। অন্যদিকে তাবাসসুমও দুপুরে ক্যাম্পাসে এসে জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছেন।

এছাড়া হালিমা আক্তার উর্মি ঘটনার পর থেকেই হলের বাইরে অবস্থান করছেন। এর আগে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হল প্রভোস্ট কর্তৃক করা তদন্ত কমিটি ঘটনার সতত্যা পেয়েছে জানিয়ে পাঁচ ছাত্রীর আবাসিকতা বাতিল করে হল কর্তৃপক্ষ। বুধবারের (১ মার্চ) মধ্যে তাদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে হাইকোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শারমিন আক্তার লিমার নাম উঠে এসেছে। এ বিষয়ে লিমা বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সেখানে আমি ছিলাম না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। ’ তবে অন্য দুই প্রতিবেদনে এই নাম আসেনি বলে জানিয়েছে সূত্র।

আদালতে উপস্থাপন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য, ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশেই ফুলপরীকে র‌্যাগিং ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি হালিমা আক্তার উর্মি, ইসরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জাহান জড়িত ছিলেন।

এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন হুমকি দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অন্তরার নির্দেশে নির্যাতন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আগে অভিযুক্ত পাঁচজন ছাড়াও শারমিন আক্তার লিমার নাম উঠে এসেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও বলা হয়।

এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের কোনো রকম অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না। অভিযোগ পাওয়া মাত্র তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতাও পেয়েছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে ইতোমধ্যে স্থায়ীভাবে হলের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। ’

এদিকে এতদিন চুপচাপ থাকলেও মুখ খুলেছেন অভিযুক্তরা। তবে নেত্রী অন্তরার ভয়ে নাম প্রকাশ করতে চায়নি অভিযুক্তরা। তারাও জানিয়েছে, অন্তরার নির্দেশেই সব ঘটনা ঘটেছে। একাধিক অভিযুক্ত বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি এখনো অস্বীকার করেই যাচ্ছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী। সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তাহলে আমি তাদের কীভাবে বাধ্য করলাম?’

অপরদিকে নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর বাবা ও আইনজীবী সিরাজ প্রমাণিক।

সিরাজ প্রমাণিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভিকটিম তার বাবা আতাউর রহমান, ভাই হজরত আলীকে সঙ্গে নিয়ে চেম্বারে আসেন। মামলার কাগজপত্র প্রস্তুতের কাজ চলছে। বুধবার কুষ্টিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে। তবে মামলার আগে এদিন হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টিও দেখা হবে। ’

ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি মামলার জন্য কুষ্টিয়ায় গিয়েছিলাম। আবার কাল (বুধবার) যেতে পারি। ’ ভুক্তভোগীর বাবা আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, নির্যাতনকারীদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহ, পেপার কাটিংসহ সাক্ষীদের নাম ঠিক করতে সময় লাগছে। ’

উৎসঃ   বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More