রাত ৮টার পর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে তোলা হয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা

0

ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলন করা যায়। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা রাত ৮টার পর এক গ্রাহককে নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে গত ২৮ ডিসেম্বর।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নির্ধারিত সময়ের পর নগদ লেনদেন করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুতর অনিয়ম করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ভাগ্যবান যে গ্রাহক এই সুবিধা পেয়েছে, সেই কোম্পানির নাম ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, যার কর্ণধার আলী হায়দার রতন। ২৮ ডিসেম্বর বিকেলে ব্যাংকটির পর্ষদে গ্রাহকের ঋণ নবায়ন হয়। এরপর ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত শাখায় পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে তোলা হয় টাকা।

জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ–সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে জবাব দেওয়া হবে।’

জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদের ৪৭৫তম সভায় ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ঋণ নবায়নের প্রস্তাব ওঠে। প্রস্তাবে বলা হয়, সীমাতিরিক্ত ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ঋণপত্র খোলা হয়েছে। অন্য ব্যাংকে এই গ্রাহকের ঋণ খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। ঋণ নবায়ন হলে গ্রাহক ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবে।

পর্ষদের আলোচ্যসূচি দেখেই ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে নিযুক্ত সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুজ্জামান ভূঁইয়াসহ ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ই-মেইলে ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ঋণ নবায়নের বিষয়ে আপত্তি জানান। এরপরও ঋণ অনুমোদন হয়। তবে সাইফুল ইসলামের আপত্তির বিষয়টি ব্যাংকটির কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়নি।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভিন হক সিকদারও ওই দিনের সভায় যোগ দেননি। অন্য পরিচালকদের উপস্থিতিতে ২৮ ডিসেম্বরের সভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির পরিচালক রিক হক সিকদার। সভায় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়কের আপত্তির কথা জানালেও ঋণ নবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে যায়।

সেদিনই গ্রাহক গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা তুলে নেয়। গ্রাহকের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২৮ ডিসেম্বর ৪ দফায় ৫ কোটি টাকা করে ও ১ দফায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা তোলা হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘আপনাদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৭৫তম সভা শেষে গ্রাহক ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ঋণ নবায়নসংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের চূড়ান্ত কার্যবিবরণী ব্যাংকের বোর্ড বিভাগ বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ই–মেইলের মাধ্যমে ব্যাংকের সিআরএম-১ বিভাগে প্রেরণ করে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, সিআরএম-১ বিভাগ গ্রাহকের ঋণ নবায়নসংক্রান্ত অনুমোদনপত্র সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ই–মেইলের মাধ্যমে ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় প্রেরণ করে। গ্রাহকের ঋণ হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনসংক্রান্ত লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য হতে দেখা যায়, ২৮ ডিসেম্বর রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে ৫টি লেনদেনের মাধ্যমে ২২ কোটি ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়।

রাত ৮টার পরে নগদ লেনদেন সম্পন্ন করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুতর অনিয়ম সংঘটন করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে, ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের অনুমোদিত ১০০ কোটি টাকা ঋণপত্র সীমার বিপরীতে কীভাবে সীমাতিরিক্ত ঋণপত্র স্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে। এ ছাড়া অফিস সময়সূচির বাইরে রাত ৮টার পর হিসাব থেকে ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংকটিকে আগে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে, এমন সুযোগ আর দেওয়া হবে না।

উৎসঃ   প্রথমআলো
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More