শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

0

deshআজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাগরণ ও অধিকার আদায়ের প্রথম ধাপে উত্তীর্ণের অনন্য দিন আজ। আজকের দিনটি বাঙালির মহামিলনের দিন হয়ে আছে সেই ১৯৫২ সাল থেকে। বছর ঘুরে এ দিনটি বাঙালি জীবনে ঐক্য আর দ্রোহের, সত্য আর মিথ্যার লড়াইয়ের, অধিকার আদায়ে আত্মাহুতির প্রেরণা নিয়ে আসে। দলমত নির্বিশেষে আজ বাঙালি জাতি খালি পায়ে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের। গতকাল দিবাগত রাত থেকে একুশে প্রথম প্রহরের সূত্র ধরে আজ সারাদিন রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার সব পথ মিশে যাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেদিমূল ভরে উঠবে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অর্ঘ্য।ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের পাশাপাশি দৃপ্ত পায়ে ফুল হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনস্রোত জুড়ে উচ্চারিত হবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’
বাঙালি তাদের অস্থিমজ্জায় মিশে থাকা ভাষা শহীদদের ভোলেনি বলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা বা ইউনেস্কো এই ঘোষণা দেয়। ২০০০ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বের প্রতিটি দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা বিশ্ব আজ মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে।
এদিকে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে জাতির উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
একুশের প্রথম প্রহর: গতকাল দিবাগত রাতে একুশের প্রথম প্রহরে মহান ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে জাতি। ভাষা শহীদদের স্মরণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, তিন বাহিনী প্রধান, বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকরা, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গতকাল দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া এই স্মরণানুষ্ঠান চলবে আজ দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত। এদিকে ভোরে খালি পায়ে প্রভাত ফেরির মাধ্যমে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারমুখী হবে দেশের অগণিত জনতা। এই কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একুশের প্রথম প্রহরে সারাদেশে, অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিদেশেও বাঙালিরা যে যেখানে রয়েছেন সেখানেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছেন। দিনব্যাপী স্মরণানুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ভুলবে না জাতি।
১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। বাংলা ভাষার মান রক্ষার দাবিতে সেদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণরা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। অসীম সাহসের সঙ্গে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামে ছাত্ররা। বাংলার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, সফিউর, রফিকসহ নাম না জানা অনেক ছাত্রযুবা। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা মা তার সন্তানের রক্তে সিক্ত হয়েছিল। রক্তের কালিতে লেখা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনা এবং চিরগৌরবদীপ্ত ও অহঙ্কারে মহিমান্বিত এই দিন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি স্মরণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সব সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিও ব্যাপক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপসমূহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বর্ণমালা সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। আলপনা আর তোরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদরাসাসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে স্ব স্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্য উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা হবে।  সব জেলা ও উপজেলা সদরে দিবসটি জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পালিত হবে। বিদেশে অবস্থিত মিশনসমূহে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথভাবে উদযাপিত হবে। একুশের অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশের সর্বত্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে ভাষার মাসকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বইমেলা চলছে। এবার বইমেলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৫ উদযাপন করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More