শেখ হাসিনার ৩৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

0

hasinaআজ ১৭ মে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৩৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের এদিন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
দলীয় সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সাড়ম্বরে পালন করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সাত দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে এ সময়ে রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তার দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে লন্ডনে রেখে এ দেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন তিনি।
কিন্তু সেদিনের দিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিল না। শেখ হাসিনার চলার পথও ছিল না কুসুমাস্তীর্ণ। রাজনীতির ময়দানের কঠিন পথের পাশাপাশি প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। দিনটি ছিল রোববার। সেদিন কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি আর দুর্যোগও গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিলকে। অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা সেদিন গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। তাদের একমাত্র আশার প্রদীপ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে আকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে ও এক নজর দেখতে। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা কখন আসবেন সেই প্রতীক্ষায়। অবশেষে বিকেল চারটায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। তখন জনসমুদ্রের জোয়ারে ছিল উত্তাল ঢেউ। গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। জনস্রোত তখন কুর্মিটোলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বিস্তৃত। গোটা এলাকা জনসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর দেশের মাটিতে পা রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পিতা-মাতা, ভাই-ভাবি হারানো পরিবারের বড় কন্যা শেখ হাসিনা।
দেশের মাটিতে পা দিয়ে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’
তার আগমন উপলক্ষে স্বাধীনতার অমর স্লোগান জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত ছিল ঢাকার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ  নিনাদে ঘোষিত হয়েছিল হাসিনা তোমায় কথা দিলাম পিতৃ হত্যার বদলা নেব।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম এক প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত প্রবাসী জীবন কাটাতে হয় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার বিদেশে থাকাকালেই ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে তুলে দেন দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। এরপর থেকে শেখ হাসিনা দলীয় কাউন্সিলে বারবার নির্বাচিত হয়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারসহ তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ সম্পন্ন করে জাতির কাছে করা ওয়াদা পূরণ করেছেন। জাতির কলঙ্ক মোচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তিনি হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে ইস্পাত দৃঢ় মানসিকতায় চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথাযোগ্য মর্যাদায় দলীয় সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপনের জন্য দলের সব স্তরের নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কর্মসূচি: স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সাত দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন স্বেছাসেবকলীগ, যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পৃথকভাবে দিবসটি পালনে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সস্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আযোজন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় দেশের বরেণ্য নাগরিক ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করবে। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় শেষ হবে। যুবলীগ শিল্পকলা একাডেমিতে সপ্তাহব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More