তিন বছর পেরিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট মেয়াদে সম্ভব হচ্ছে না ৪৫টি যাত্রীবাহী রেলকোচ সংস্কারকাজ। এই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় ফের বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন করে একটি কোচ মেরামতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অথচ শুরুতে প্রতিটি কোচ মেরামত বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৪ লাখ ১১ হাজার টাকা। নির্দিষ্ট মেয়াদে কোচগুলো মেরামত না করায় নতুন করে কোচপ্রতি গচ্চা দিতে হচ্ছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ১০০ কোচ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ধরা হলেও এখন ব্যয় বেড়ে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে। অথচ চাহিদা অনুযায়ী কোচের অপ্রতুলতা থাকায় বিশেষ করে ঈদসহ যে কোনো দীর্ঘ ছুটির সময় অতিরিক্ত কোচ প্রয়োজন হয়। এ সব দিক বিবেচনায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। অথচ সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না নির্দিষ্ট সময়ে।
প্রকল্পের রুটিন দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া বলেন, ‘১০০টির মধ্যে ৫৫টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। এই জন্য চলমান প্রকল্পের সময়-ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তবে প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব এখনও পাস হয়নি।’
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: যাত্রীবাহী গাড়ির মেরামত ব্যাকলগ দূর করা, যাত্রীবাহী গাড়ির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা, পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন করা এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পের কার্যক্রম: প্রকল্পের আওতায় ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা, পাহাড়তলীতে কর্মরত রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের দ্বারা স্বাভাবিক কর্মসময়ের পর পুনর্বাসন করা। প্রকল্পের অনুকূলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১৩ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ আবারও বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, করোনার কারণে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডিপিপিভুক্ত অধিকাংশ মালামালের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রকল্প প্রস্তাবকালীন মালামালের দরে অধিকাংশ মালামাল সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ মালামাল উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সংগ্রহ করায় দরদাতাদের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী কোনো কোনো প্যাকেজের মূল্য কমেছে আবার কোনো কোনো প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এমএস সিটের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে কোনো দরদাতা না পাওয়ায় এই মালামাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের সংস্থান রাখা হয়েছে। মূল ডিপিপিতে মালামাল সংগ্রহের জন্য মোট ১২৮টি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংশোধিত প্রস্তাবনায় মোট ১১৭টি প্যাকেজ সম্বলিত প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি না পাওয়ায় গাড়ি সংগ্রহের প্যাকেজ বাদ দেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক বিভাগের মালামালের স্পেসিফিকেশন কিছু পরিবর্তন ও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রকল্পটি সংশোধনের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কোচের সংখ্যা ১০০ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কিন্তু কোচের ধরন পরিবর্তন করা হয়েছে। অনুমোদিত ডিপিপিতে কোচের সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে ধরনের পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কোচের ধরন পরিবর্তনের কারণে মালামালের স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোটখাটো হলেও নতুন আইটেম প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন না হলেও আইটেম এবং ব্যয়ের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। যার জন্য প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। সাধারণভাবে প্রকল্প সংশোধনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে বিধায় ভবিষ্যতে পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত কোচের ধরন পরিবর্তন করা যৌক্তিক হবে না।
প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকাল শুরুর প্রায় সাত মাস পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে মেরামত কারখানার স্বাভাবিক কর্মসময়ের পর কারখানার নিজস্ব জনবল দিয়ে চুক্তিভিত্তিক ক্যারেজ পুনর্বাসন করা হচ্ছে বিধায় বছরে ৪৫টির বেশি কোচ পুনর্বাসন করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, জুন ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৫৫টি কোচ পুনর্বাসন করা হবে এবং বাকি ৪৫টি পরবর্তী অর্থবছর পুনর্বাসন করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন। প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ করা হচ্ছে।