সাকার রায় আপিল বিভাগের কার্যতালিকায়

0

downloadমানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের ওপর রায় বুধবার ঘোষণা হবে। আপিল বিভাগের বুধবারের কার্যতালিকার এটি এক নম্বরে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেমস রিচার্ড ক্রশ বলেন, মামলাটি রায়ের জন্য কার্যতালিকায় আনা হয়েছে। আগামীকাল চূড়ান্ত রায়ের জন্য মামলাটি কার্যতালিকার এক নম্বরে রাখা হয়েছে।

  প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
  এ রায়ের মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত হবে সাকা চৌধুরীর ভাগ্য। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ বিএনপি নেতার শেষ পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ বহাল থাকবে নাকি অন্য কোনো সাজা ভোগ করতে যাচ্ছেন।
 ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে এ দণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া হত্যা, গণহত্যার পরিকল্পনায় সহযোগিতা এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো তিনটি অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্যকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। অপহরণ ও নির্যাতনের দুটি ঘটনায় তাকে দেয়া হয় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড।
 রায়ে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি (২ থেকে ৮, এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সালাউদ্দিন কাদেরের খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করেন তার আইনজীবীরা। আপিল আবেদনে মোট ১ হাজার ৩২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রের ডকুমেন্টসহ দাখিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা হয়নি। ১৬ জুন থেকে সাকা চৌধুরীর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ ১৩ কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ শেষে আপিল বিভাগ ৭ জুলাই রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী বুধবার এ রায় ঘোষণা করা হবে। সাকা চৌধুরীর রায় ঘোষণার আগেই শুরু হয়েছে নানা কানা-ঘুষা। একটি পত্রিকায় সাকা চৌধুরীর পরিবার একজন বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন মর্মে খবর ছেপেছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের বিচার কার্যক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেল নিজ কার্যালয়ে আরও বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় নিয়ে কোনো বিচারপতি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন এরকম খবর আমি বিশ্বাসই করি না। গুজবের ওপর ভিত্তি করে কোনো রিপোর্ট হতে পারে না।’
 তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করাই এর লক্ষ্য, এটা কারও কাম্য নয়। এ ধরনের লেখা বিচারিক কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক সময় ক্ষতি হয় শত্র“র দ্বারা, আবার অনেক সময় ক্ষতি হয় অতি উৎসাহী বন্ধুর দ্বারা। সুষ্ঠু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এ ধরনের স্পর্শকাতর মামলা নিয়ে কলাম লেখা উচিত নয়। তাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়। আমি কোনো দিনই বিশ্বাস করতে পারি না যে সাকার মামলার রায় নিয়ে এ ধরনের বৈঠক হতে পারে। তিনি বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের চিনি। তাদের সততা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে আমার ধারণা আছে, তারা সবাই দৃঢ়চরিত্রের অধিকারী। তিনি বলেন, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।
 তাহলে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পত্রিকার বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি বলেন, ব্যবস্থা নিতে হবে আমি এরকম আশা করি না। তিনি বলেন, সাকাকে ৪টি অভিযোগে ফাঁসি দিয়েছেন এবং সে রায় সঠিক। আরও যে ৫ অভিযোগে তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তার মধ্যে সাকার ২-৩টিতে ফাঁসি হতে পারত। যেহেতু আমরা সেসব বিষয়ে আপিল করিনি সেহেতু এ ধরনের আশা করি না। তিনি বলেন, সাকার অপরাধের পরিমাণ এত বেশি যে, ট্রাইব্যুনাল তাকে যে সাজা দিয়েছেন সেগুলো বহাল থাকবে। মুজাহিদের রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অচিরেই মুজাহিদের রায় পাব। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে মুজাহিদের রায় প্রকাশ হতে পারে। এটা আমার অনুমান। যেহেতু এবার আপিলের রায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে সেহেতু একজন বিচারক রায় লিখবেন। অন্য বিচারপতিদের এখানে ভিন্নমত পোষণ করে রায় দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমি এ আদালতের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। আশা করছি, আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে মুজাহিদের রায় পাব।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More