আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসের ৫০ বছর

0
6 dofa 50 yers[ads1]আজ ঐতিহাসিক ৭ই জুন, ছয় দফা দিবস। ৫০ বছরে পা রাখল এই ঐতিহাসিক দিনটি। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদী আত্মত্যাগে ভাস্বর একটি দিন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনটি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে। আর এ ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লি­ষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন। সেদিন পাকিস্তানের তত্কালীন সেনাশাসক জেনারেল আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফা মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছয় দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভায় ৭ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মাসব্যাপী ৬ দফা প্রচারে ব্যাপক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। ৭ জুন তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া পাকিস্তান স্বৈরশাসকের গুলিতে প্রাণ হারান। এতে বিক্ষোভের প্রচণ্ডতা আরো বাড়ে। তেজগাঁওয়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আজাদ এনামেল এ্যালুমিনিয়াম কারখানার শ্রমিক আবুল হোসেন ইপিআরের গুলিতে শহীদ হন।[ads2]
একই দিন নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের কাছে পুলিশের গুলিতে মারা যায় আরো ৬ শ্রমিক। আন্দোলনের প্রচণ্ডতায় লাখো বাঙালি মাঠে নেমে পড়ে। সন্ধ্যায় জারি করা হয় কারফিউ। রাতে হাজার হাজার আন্দোলনকারী বাঙালিকে গ্রেফতার করা হয়। এমনিভাবে ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের রক্তে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন।
[ads1]
ছয় দফার মধ্যে যা ছিল
১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফার প্রথম দফা হলো— ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যার ভিত্তিতে হবে। দ্বিতীয় দফা, কেন্দ্রীয় বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণক্ষমতা থাকবে। তৃতীয় দফা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময়যোগ্য। এ ক্ষেত্রে দুঅঞ্চলে স্বতন্ত্র বা পৃথক পৃথক স্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে। চতুর্থ দফা, সকল প্রকার রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। কেন্দ্রীয় তথা প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান আঞ্চলিক তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই ফেডারেল তহবিলে জমা হয়ে যাবে। এতে সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকে।
পঞ্চম দফায় বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিম্নরূপ সাংবিধানিক বিধানের সুপারিশ করা হয়, (ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। (খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে থাকবে এবং অঙ্গরাজ্যের প্রয়োজন অঙ্গরাজ্য কর্তৃক ব্যবহূত হবে। (গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত নির্দিষ্ট হারে অঙ্গরাজ্যগুলো মিটাবে। (ঘ) অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোনো বাধা থাকবে না। (ঙ) সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের এবং স্ব স্ব স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে। ষষ্ঠ দফার মধ্যে ছিল— (ক) আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা-সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে। (খ) কেন্দ্রীয় সরকারের সকল শাখায় বা চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিট থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করতে হবে। (গ) নৌ-বাহিনীর সদর দপ্তর করাচি থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হবে।[ads1]
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি ছয় দফা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কাজে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৯৬৬’র ছয় দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক। ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন শুধু বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারাবিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনেও তা সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাবে। তাই আসুন, আমরা ছয় দফা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করি।’ আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতার অবদান অপরিসীম। মূলত বাংলা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণে তথা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিক সাত জুনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে তার সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, গত সাড়ে সাত বছরে সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে। আমরা দেশকে আরো এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। ??রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সাত জুনের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সাত জুন এক অবিস্মরণীয় দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের সাত জুন নতুন মাত্রা পায়।[ads2]
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।[ads2]
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More