ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটির একটি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ফলাফল পুনর্গণনার আদেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু অডিট কার্ড গায়েব হয়ে যাওয়ায় ভোটের দিন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দেওয়া ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারলো না সংশ্লিষ্ট কমিটি।
ফলে একই ফলাফল দুই বার গুনলেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা।
ইভিএমের ফলাফল পুনর্গণনা নিয়ে যখন প্রশ্ন বিরোধী দলগুলোসহ বিভিন্ন মহলে, তখন এই ধরনের একটি ঘটনা যন্ত্রটিতে ভোটগ্রহণের সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অডিট কার্ডে পুরো কেন্দ্রের ফলাফল সংরক্ষিত থাকে। তাই অডিট কার্ড গায়েব হওয়ার বিষয়টি ইচ্ছাকৃত হতে পারে। আবার প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ভুলেও হতে পারে। তবে অডিট কার্ড ছাড়াই ফলাফল গণনায় প্রশ্ন থেকে যায়।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের হলে আদালত ফলাফল ফের গণনার আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর নির্বাচন কমিশন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ফলাফল পুনর্গণনা সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সেই কমিটির প্রধান ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মো. আবদুল বাতেন বলেন, সিলগালা করা বস্তায় অডিট কার্ড প্লাস প্রিজাইডিং অফিসারে রেজাল্ট শিট, ইভিএম থেকে বের হওয়া ফলাফলের প্রিন্ট কপি থাকবে, এটাই নিয়ম। আমরা সিলগালা করা বস্তাগুলো প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীদের সামনেই খুলেছি কোর্টের আদেশ অনুসারে। তিনটা বা চারটা অডিট কার্ড মিসিং আছে। তবে ওখানে আবার প্রিজাইডিং অফিসারের যে রেজাল্ট শিট, সেটা ছিল এবং ইভিএম থেকে ফলাফলের যে প্রিন্ট কপি থাকে, ভোটের দিন যেটা বস্তার ভেতর দিয়েছিল সেটা পেয়েছি। সবাই সামনেই ওটা কাউন্ট করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের কমিশন, কোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে আমাদের কাজ হলো, যে ফাইন্ডিংস পেয়েছি তা দাখিল করা। আমরা যেটা পেয়েছি বা যেটা পায়নি হুবহু তা কমিশন এবং কোর্টের কাছে দাখিল করবো। আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
তাহলে তো কেন্দ্রের ফলাফল আপনারা পুনর্গণনা করতে পারেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, আমরা তো গণনা করিনি। যেইটা অডিট কার্ড পাইনি, ওইটা আমরা ফাইন্ডিংস দেবো। শুধু অডিট কার্ড দিয়ে পুনর্গণনা হয় না। যেখানে অডিট কার্ড পেয়েছি, সেখানে তো অবশ্যই অডিট কার্ডের তথ্য নিয়েছি, ইভিএমের প্রিন্টেট কপি এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তা স্বাক্ষর করা ফলাফলের কপিও নিয়েছি। আর যেটার অডিট কার্ড পাইনি, সেখানে বাকি দু’টোর ফলাফল মিলিয়ে দেখেছি।
অডিট কার্ড ছাড়া বিষয়টি কী স্বচ্ছ হলো জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, স্বচ্ছতার বিষয়টি আদালত বলবেন।
অডিট কার্ড ছাড়া আগের ফলাফলই দেখাতে পারেন, পুনর্গণনা তো হয় না—এমন বিষয় তুলে ধরলে আবদুল বাতেন আরও বলেন, অডিট কার্ড একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু অডিট কার্ডের বাইরেও যে নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ওইদিন যেমন অডিট কার্ডে রেজাল্টটা সংরক্ষিত আছে, তেমনি ইভিএম থেকে যে প্রিন্ট কপি নিয়েছে সেটাতেও ফলাফল সংরক্ষিত আছে এবং প্রিজাইডিং অফিসারের যে কপি সেটাও সংরক্ষিত আছে। একটা অডিট কার্ড পাওয়া যায়নি, সেখানে অবশ্যই আমরা বলবো যে অডিট কার্ড পাওয়া যায়নি।
ইটিআই মহাপরিচালক বলেন, এটা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ভুলে হতে পারে। ইনটেনশনালি হতে পারে। কিন্তু বস্তাগুলো সিলগালা ছিল। আমাদের কমিটির কাজ হলো যা যা পেয়েছি, তা দেবো। এরপর আইন অনুযায়ী কোর্ট সিদ্ধান্ত দেবেন। ৫৪টি কেন্দ্রে ৫৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার ছিল। একজন প্রিজাইডিং অফিসার যেমন বলেছেন—অডিট কার্ড বস্তার ভেতরে দেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়নি। বাকিরা তো দিয়েছেন। তখন তিনি বলতে পারেননি কিছু। এটা হয়তো ভুল হতে পারে। হয়তো অন্য কোথাও দিয়েছেন। আবার ইনটেনশনালিও হতে পারে। যে বস্তাগুলোর বাইরে সিলগালা ছিল না, সেগুলোর ভেতরের প্যাকেটগুলো সিলগালা করা ছিল। এতে সমস্যা ছিল না। অডিট কার্ডে কেন্দ্রের টোটাল ফলাফল। আর পোলিং কার্ডে প্রতিটা বুথের ফলাফল থাকে।
অডিট কার্ড গায়েব হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, না, এই ধরনের কোনো ইনফরমেশন আমাদের কাছে নেই। সিলগালা করা বস্তা থেকে অডিট কার্ড গায়েব হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি হয়ে থাকে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখতে পারি। ওই বস্তা প্রিজাইডিং অফিসার দিয়েই খোলাতে হয়। এই রকম যদি কার্ড হারিয়ে থাকে অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেবো। এটা মোটেই স্বাভাবিক নয়, এটা অস্বাভাবিক ঘটনা।
তিনি বলেন, শতের মধ্যে, হাজারের মধ্যে দুই একটা ঘটনা ঘটলেই যে ইয়ে হয়ে যায়, তা না। একটা দুইটা ভুল হতেই পারে। আবার সবাই যে ভালো লোক তাও তো নয়। খারাপ লোক দু’এক জন। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের সব লোক খারাপ। দুই পক্ষের প্রার্থী, এজেন্ট সবার সামনেই কমিটি কাজ করেছে। রিপোর্টটা তো আদালতে যাবে। আদালত নিশ্চয় তার ওপর একটা আদেশ দেবেন।