গত বছর সারাদেশে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

0

সারাদেশে ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ জন, কলেজ পর্যায়ের ১০৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮৬ জন শিক্ষার্থী।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রী ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন।

আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে ২১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ৩৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন।

আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা

সারাদেশের মোট আট বিভাগে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। এরপরই চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

আবারো এগিয়ে নারীরা

আত্মহত্যা করা স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ছাত্র ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ছাত্র ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। একই পথে পা বাড়ানো শুধু কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ছাত্র ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।

আত্মহত্যার পেছনের কারণ

আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় নানা বিষয়ের সম্মুখীন হন। যা তাদের আত্মহননের পথে ঠেলে দিতে বাধ্য করে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায় মান-অভিমানের বশে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ অভিমান করে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এদের বড় অংশেরই অভিমান ছিলো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্য কারণগুলোর মধ্যে প্রেমঘটিত কারণও অন্যতম। প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ত হয়ে ২ দশমিক ০১ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছেন ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পেছনে প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।

তবে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আরো বেশ কিছু কারণের তথ্য পেয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। এরমধ্যে আছে- আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪ জন, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হয়ে ৬ জন, মোবাইল গেম খেলায় বাধা দেওয়ায় ৭ জন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। এছাড়া আত্মহত্যার অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফলাফল না করতে পারা, পড়াশোনার চাপ অনুভব এবং পারিবারিক চাপ।

এ বিষয়ে সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ২০২২ সালের এ জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কী কারণে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি তা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসব বিষয় জানা প্রয়োজন।

Pp

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More