গরম আসার আগেই ডলার সংকটে বহুল আলোচিত রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ

0

বাংলাদেশে বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। কয়লা আমদানি জন্য ডলার সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ডলারের যে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে সেটি এখন প্রভাবিত করছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে।

এমন প্রেক্ষাপটে শীতকালেও রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে।

শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কম থাকার পরেও যদি লোডশেডিং হয়, তাহলে গ্রীষ্মকালে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? সেটি ভেবে অনেকে উদ্বিগ্ন হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে পারে। তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তারা আশা করছেন।


রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

সংকট কতটা গভীর?

রামপালে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট অর্থাৎ ৬৬০ মেগাওয়াটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছিল। আরেকটি ইউনিটের নির্মান কাজ এখনো চলছে।

এখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ঢাকা এবং খুলনায়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আসার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আকরাম উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ডলারের সংকটের জন্য কয়লা আনা যাচ্ছিল না। যার কারণে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।

ডলারের সংকট থাকায় কয়লার দাম পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। ফলে কয়লা আনতে ‘ঝামেলা হচ্ছিল’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ডলার সংকটের কারণ লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা হওয়ার কারণে কয়লা আনা বিঘ্নিত হয়েছিল এবং এটি আসতে দেরি করেছে।

যে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের পর সেখানে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য রামপালে কয়লা আনা হয়েছিল। সেটি দিয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা হয়।

তবে ডলার সংকট কেন হয়েছিল সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষনিকভাবে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কয়লা কতদূর?

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেল- দুটি প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে যে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সংকটের পর সেটি সমাধানে এরইমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরে জন্য কয়লা আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং যে পেমেন্টগুলো বাকি ছিল সেগুলো দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইএফপিসিএল-এর এমডি সৈয়দ আকরাম উল্লাহ।

একই কথা জানিয়েছেন মি. হোসাইনও। তিনি বলেন, এলসির বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং কয়লা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

“দে হ্যাভ ওভারকামড ইট(তারা এটি নিরসন করেছে), এবং আমার মনে হয় এখন আর সমস্যা হবে না।”

এরইমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা জাহাজে তোলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে এগুলো দেশে পৌঁছাতে আরো ১৫-২০ দিন সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন মি. হোসাইন।



রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে

গরমে কী অবস্থা হবে?

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৭ই জানুয়ারি সারা দেশে দিনে সর্বোচ্চ নয় হাজার মেয়াওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। আর সন্ধ্যায় এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল সর্বোচ্চ দশ হাজার দুইশ মেগাওয়াটে।

বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে একহাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে। এজন্য ঢাকা শহরে গত কয়েক দিন ধরেই লোডশেডিংয়ে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

তবে পাওয়ার সেল বিভাগের মহাপরিচালক দাবি করছেন, বিদ্যুতের এই ঘাটতি একেবারেই সাময়িক। তার মতে, বিডিপিবি হয়তো প্রস্তুতই ছিল না যে রামপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ফার্নেস অয়েল এবং গ্যাস রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশের হাতে।

“এটাকে বিবেচনা করে ভবিষ্যতে আশঙ্কার কোন কারণ নাই,” বলেন মি. হোসাইন।

গরমকালে বিদ্যুতের ব্যবহার আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মার্চ মাসে গরমকাল হওয়ায় এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। আবার এ মাসেই রমজান শুরু ও ঈদ এবং সেচ প্রকল্পের কারণেও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যাবে।


গরমকালে বিদ্যুতের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়

একই সাথে ডলারের সংকটও রয়েছে। এই সংকট নিরসনে আপাতত কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তেল এবং কয়লা আমদানি করতে বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। কারণ, গত বছর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে সংকট সামাল দেবার জন্য লোডশেডিং করতেই হবে।

এবার গরমকালে লোডশেডিং কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটি নিয়ে এখন অনেকে চিন্তা করছেন।

পাওয়ার সেল বলছে যে, মার্চ মাসে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে।

এই চাহিদা পূরণের জন্য গ্যাস, কয়লা ও অন্যান্য উৎস থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তা হিসাব করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি এই সংস্থাটি।

পাওয়ার সেল বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, “এটা আমরা কিভাবে জেনারেট করবো, গ্যাস থেকে কতো নেবো, কয়লা থেকে কত নেবো, লিকুইড থেকে কত পাবো, সেটা আমরা একটা ওয়ার্কআউট অলরেডি করে রাখছি।”

রামপাল নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক আলোচনা এবং সমালোচনা হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের মধ্যে অন্যতম। পরিবেশবাদীরা বলেছিলেন, সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হওয়ায় সেখানকার জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

কিন্তু নানা প্রতিবাদ এবং সমালোচনা উপেক্ষা করে সরকার এ প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যায়।

২০১০ সালে ভূমি অধিগ্রহণ শুরুর পর ২০১২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ ৮৯.৫৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি নির্মাণে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

উৎসঃ   বিবিসি বাংলা
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More