[ads1]নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম গিয়াস উদ্দিন আহসান ও তাঁর সহযোগীরা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং হামলা করতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত গিয়াস উদ্দিন আহসান ও তাঁর দুই সহযোগী এবং মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার স্কুলশিক্ষককে আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া সাভার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া স্কুলশিক্ষককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে তাঁদের সবাইকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়, কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় নয়।
গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের বাসা ভাড়া দেওয়া এবং তাদের বিষয়ে তথ্য না রাখার অভিযোগে গত শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে নুরুল ইসলাম নামের এক বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নুরুল ইসলাম মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আশুলিয়া থানার পুলিশ গত শনিবার মিলন হোসাইন নামের আরেক স্কুলশিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল রোববার তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম গিয়াস উদ্দিন আহসান, তাঁর ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান এবং ভাগনে আলম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয় গত শনিবার বিকেলে। গিয়াস উদ্দিন এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন।
আদালত প্রতিবেদক জানান, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির এই অধ্যাপকসহ চারজনকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় (সন্দেহজনক) গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠান। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, তাঁরা জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দিয়েছেন, কিন্তু ভাড়াটের কোনো তথ্য থানাকে দেননি। বাড়িভাড়ার আড়ালে জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে তাঁরা সহযোগিতা করেছেন। পুলিশ ভাড়াটেদের কক্ষ থেকে বালুভর্তি কার্টন, পোশাকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছে। এসব কার্টনে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মো. তসরুজ্জামান আসামিদের জামিনের আবেদন নাকচ করে আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শেওড়াপাড়ায় অভিযান: শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একটি দল পশ্চিম শেওড়াপাড়ার শামীম সরণি-সংলগ্ন ৪৪১/৮ নম্বর শাপলা সরণির তিনতলা বাড়ির নিচতলায় অভিযান চালায়। পুলিশ সেখান থেকে একটি হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা এই বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকত। কিন্তু বাড়ির মালিক নুরুল ইসলাম তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য রাখেননি। এই অভিযোগে বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে শাপলা সরণিতে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা বাড়ির নিচতলায় তালা ঝুলছে, বাইরে পুলিশি পাহারা। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন বলেন, শনিবার রাতে পুলিশ বাড়ির মালিকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে
ভেতরে ঢোকে। বাসার রান্নাঘরের তাকের ওপর থেকে পুলিশ একটি গ্রেনেড উদ্ধার করে বালতিতে করে বাইরে নিয়ে আসে। পুলিশ ভাড়াটেদের তথ্য ফরম চাইলে বাড়ির মালিক একজনের একটিমাত্র তথ্য ফরম পুলিশকে দেখান। এতে পুলিশ সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁকে আটক করে।
পাশের বাসার মহিউদ্দিন ও মো. মামুন বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ২২-২৩ বছরের চার তরুণ নিজেদের বাঙলা কলেজের ছাত্র পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন। পরদিন ওই বাসায় তিনি এক তরুণকে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে দেখেছেন। বাকি পাঁচজন মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে ছিলেন। তাঁরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে কম কথা বলতেন। বেশির ভাগ সময় ওই বাসায় তালা লাগানো থাকত। ঈদুল ফিতরের দু-তিন দিন আগেও তাঁদের দেখা গেছে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে বাড়ি থেকে ফিরে বাসাটি তালাবদ্ধ দেখতে পান তাঁরা।[ads1]
[ads2]সাভারে গ্রেপ্তার: পুলিশ জানায়, সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা মিলন লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বেতকিবাড়ি গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি সর্বশেষ আশুলিয়া থানা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) পাশে পবনারটেক এলাকায় পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন। এর আগে তিনি পাশের এলাকা ভাদাইলে মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক ছিলেন। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় জড়িত বলে চিহ্নিত পাঁচ জঙ্গির একজন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল দীর্ঘদিন ঢাকার আশুলিয়ার ভাদাইলে একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেছেন। মিলন হোসাইন নামের আরেক শিক্ষক তাঁকে এই চাকরি জোগাড় করে দিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অধ্যাপকের বাড়িটি যেভাবে চলছিল: বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ব্লক ই-এর একটি ফ্ল্যাট অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের। গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিরা গত মে মাসে এই বাসা ভাড়া নেয়। গতকাল বসুন্ধরার ওই বাসায় গেলে ভবনটির প্রধান ফটকে একটি সাদা কাগজে ‘অত্র ভবনে ব্যাচেলর (ছেলে/মেয়ে) বা মেস ভাড়া দেওয়া হয় না’ লেখা ফটকের ওপর সাঁটানো দেখা যায়। আশপাশের ভবনগুলোতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও এই ভবনে নেই। আইয়ুব খান নামের একজন ফ্ল্যাটমালিক বলেন, এই ভবনে ৪৮ জন ফ্ল্যাটমালিক আছেন। কিন্তু নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা তাঁর ভাগনেকে তিনি কখনো দেখেননি। ওই ফ্ল্যাটে কারা উঠেছিল, এ বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা নেই বলে জানান।
পুলিশের প্রতিবেদন: আদালতে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা থেকে উদ্ধার করা বালুভর্তি কার্টনে গ্রেনেড রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। আর শেওড়াপাড়া থেকে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা গ্রেনেডের সঙ্গে হলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের মিল রয়েছে।
১৬ দিন লাশ মর্গে: হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ গতকাল পর্যন্ত তাদের পরিবারগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তাদের লাশ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও হলি আর্টিজানের বাবুর্চি সন্দেহভাজন সাইফুল চৌকিদার। পুলিশ বলেছে, লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাউদ্দিন খান। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের নেতৃত্বে সমন্বিত অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের আগে ও পরে উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি ৩২ জনকে।
এদিকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারের পর হাসনাত রেজা করিম ও ব্যবসায়ীপুত্র তাহমিদ হাসিব খানকে ফিরে পায়নি পরিবার। তাঁরা পুলিশি হেফাজতে আছেন কি না, এর জবাবে গত শনিবার ডিএমপির কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তদন্ত দল এটা বলতে পারবে।[ads2]
Shutro: Potomalo