বাজেটে বিনিয়োগের হাতছানি

0

budget[ads1]বিশাল বাজেটে সবার প্রত্যাশা পূরইে কম-বেশি উপকরণ রয়েছে। রয়েছে আশার আলো। বিশেষ করে এই বাজেটকে কৃষিবান্ধব কিংবা শিল্পবান্ধব বলে অভিহিত করা যায়। তবে পুরোপুরি জনবান্ধব করতে গিয়ে বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এই বাজেট শিল্পবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব। বড় অঙ্কের বাজেট ভারসাম্য বজায় রাখবেন কিভাবে? আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এই টাকা জোগান দিতে ব্যাংক ঋণ আর সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা তো রয়েছেই, পাশাপাশি বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন হবে। এরপরও এবারের বাজেট প্রমাণ করল বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী। বাজেটে পাখির চোখ করা হয়েছে কৃষি ও গ্রামীণ বিকাশকে। এই বাজেটে কর জাল বাড়িয়ে সরকার রাজস্ব আয়ের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর করের জালে কিছুটা অস্বস্তি এনে দিতে পারে করদাতাদের। রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, বিনিয়োগের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে সরকার। একইভাবে উদ্যোক্তাদের জন্য থাকছে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা। যার অপর নাম প্রণোদনা। এর পাশাপাশি দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার দিকে এবার বাজেটে মনোযোগ দেয়া হয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করভার কমানো হয়েছে। আর অস্বস্তির বিষয় হলো, অনিশ্চিত স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা। যে কারণে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বত্তৃদ্ধতায় বলেছেন, স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার গুণগত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। তবে এই বাজেটের সুসংবাদ হচ্ছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশের মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে। এই বাজেটে সরকার ব্যবসায়ী মহলের চাপ সামলানোর চেষ্টা করেছে। নতুন অর্থবছরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে তা আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। একই সঙ্গে প্যাকেজ ভ্যাট বহাল থাকলেও, ভ্যাটের পরিমাণ অঞ্চলভেদে বাড়ানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমন এক সময় বাজেট পেশ করলেন যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। তবে নতুন অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, আগামীতে জ্বালানি তেলসহ পণ্যমূল্য কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তদের ওপর চাপ আসতে পারে। আবার ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোর ফলে অনেকে করের জালে আটকে যাবে। শুধু তাই নয়, মধ্যবিত্তদের ব্যবহার করা অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এরপরও অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চান রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।[ads2]
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে তার ১১৮ পৃষ্ঠার বাজেট বত্তৃদ্ধতা শুরু করেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে নিয়ে সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল একটি কালো ব্রিফকেস। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বত্তৃদ্ধতার আগে অর্থ বিভাগের তৈরি করা একটি ৬ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর অনুমতি নেন। অনুমতি সাপেক্ষে প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর পর অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। প্রথমে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়ার পর স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে বসে বক্তৃতা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। সংসদে এ সময় বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা তাদের নির্ধারিত চেয়ারে বসে বাজেট বত্তৃদ্ধতা প্রত্যক্ষ করেন।
বাজেট উপস্থাপনের আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতি অর্থ বিলে সম্মতি দেন। বাজেট বক্তৃতা চলাকালে পুরো সময় রাষ্ট্রপতি তার নিজ গ্যালারিতে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন। আসর নামাজের জন্য মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর অর্থমন্ত্রী বাকি সময় বসেই বক্তৃতা করেন। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে অর্থমন্ত্রী ফ্লাস্কে রাখা পানি ও চা পান করেন।
বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই বাজেট প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের একটি দিক দর্শন। আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেন, এটা লুটপাটের বাজেট। অন্যদিকে সাবেক উপদেষ্টা মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এই বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন। সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি মীর নাসির বলেন, এই বিশাল বাজেটে ঘাটতি মেটানো সরকারের জন্য বড় একটা সমস্য হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হবে। পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেট ভালোই হয়েছে। তবে রাজস্ব সংগ্রহ উচ্চাভিলাষী। বিআইডিএসের রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বাজেট সব মিলিয়ে ভালো। তবে নারী উন্নয়নে বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখলাম না।
বাজেটে আকার: এবারে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত কর ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ব্যয়ের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সুদ ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বিশাল বাজেটে অর্থমন্ত্রী অর্জন করতে চান দারিদ্র্যের হার কমানো, দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। তিনি মনে করেন, প্রবৃদ্ধির এ গতিকে সুসংহত করতে ও ত্বরান্বিত করার সময় হচ্ছে এখনই। তবে গতিশীলতা যেন কোনো মতেই শিথিল না হয়। তিনি তার বাজেট বক্তৃতায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে রফতানি বাজারগুলোর প্রবৃদ্ধি গতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য শুভ বার্তা। সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এডিপির আকার ও বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে শ্রমশক্তিকে মূলধন মনে করেন তিনি। অসমতা নিয়েও অর্থমন্ত্রীর আয়ের সুষম বণ্টনকে গুরত্ব দেন।
বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের মূল্য বাড়ানো ও কমানো হয়েছে। তবে কোনো কোনো পণ্যে ভ্যাটের হার বৃদ্ধির ফলে দাম বাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে সিগারেট, তামাকজাত পণ্য, ওয়াশিং মেশিন, হাতে তৈরি বিস্কুট, আমদানিকরা মাধ্যমিক বই ইত্যাদি। কমছে স্ট্যাবলাইজার, স্মার্ট কার্ডের যন্ত্রাংশ, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি, এলপিজি সিলিন্ডার, মোটরসাইকেল তৈরির যন্ত্রাংশ ইত্যাদির দাম।[ads2]

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More