রাষ্ট্রীয় সিমেন্ট কারখানা “ছাতক” দুর্নীতির কারনে আবারো বন্ধ

0

Satok[ads1]দেশের প্রাচীনতম সিমেন্ট উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কারখানা আবারো বন্ধ হয়ে পড়েছে। কারখানার মুল এফএলএস ক্রাসারটি নষ্ট হওয়ায় কাঁচামাল ভাঙ্গা চুনা পাথরের সমস্যাজনিত কারনে গত ২৪ মে রাত থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত কারখানাটি পড়েছে চরম অস্থিত্ব সংকটে। সম্প্রতি ২০ কোটি টাকার সংস্কার কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও কারখানাটি সামর্থ অনুযায়ি উৎপাদনে যেতে পারছিল না।

কারখানার দু’টি কিলনের মধ্যে এইচইসি কিলনটি রানিংয়ে থাকলেও এফএলএস কিলনটি এখনো চালু করতে পারছেননা কর্তৃপক্ষ। এর জন্য অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করছেন কারখানার সাধারন শ্রমিকরা। প্রায় চারমাস আগে কারখানার উভয় কিলন চালু ও উৎপাদন উপযোগি করে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে চালু অবস্থায় হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্যাথওয়েল্ড কনষ্ট্রাকশন তা করতে পারেনি। এ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের মালামাল সরবরাহে বিলম্ব হওয়াকে দায়ি করছে ক্যাথওয়েল্ড কনষ্ট্রাশন। প্রতিষ্ঠার ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় পরিস্থিতি বর্তমানে অতিক্রম করছে দেশের প্রাচীনতম সিমেন্ট উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ব এ প্রতিষ্ঠান।[ads2]

ফলে প্রতিদিন কারখানাটি লক্ষ-লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে জানা যায়, ডেনমার্ক থেকে সংগ্রহ করা কারখানার এফএলএস ক্রাসার বিগত ৫০বছর ধরে পাথর ক্রাসিং করে আসছে। ফলে কারখানায় প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ মেট্রিকটন সিমেন্ট উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। পুরনো এফএলএস ক্রাসারটি সংস্কারে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের জন্য ২০১৪ সালে খোলা দরপত্র আহবান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এসময় উচ্চ মুল্যের অজুহাতে ক্রাসারের মুল কোম্পানী ডেনমার্কের এফএলএস’র দরপত্র বাতিল করে সাড়ে ৩ কোটি টাকা মুল্যের যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্যে দেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শ্রীজা মেটালকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ি প্রায় একবছর পর সম্প্রতি টেকনিক্যালি সম্পূর্ন অগ্রহনযোগ্য ও নিম্মমানের ভারতীয় যন্ত্রাংশ কারখানায় সরবরাহ করে শ্রীজা মেটাল।[ads1]

এসব যন্ত্রাংশ কোয়ালিটি ও বুয়েট টেষ্ট ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে ক্রাসারে স্থাপনের কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশের ফলে কারখানায় নিয়োজিত টেকনিশিয়ানরা পরিমাপ জনিত সমস্যার কারনে ক্রাসারে তা স্থাপন করতে পারেননি। পরবর্তীতে কারখানার নিজস্ব ওয়ার্কসপে সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশ মেরামত করে ফিটিং যোগ্য করে ক্রাসারে স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে গত এপ্রিলে এফএলএস ক্রাসারের মুল যন্ত্রাংশ ফ্লাইহুইল রহস্যজনকভাবে ভেঙ্গে যায়। ফ্লাইহুইল ভেঙ্গে যাওয়ায় শ্রীজা মেটালের সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশ ক্রাসারে স্থাপন করা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। বিগত ৫০ বছর ধরে সচল থাকা ৮ইঞ্চি ব্যাস ও ৪ইঞ্চি পুরু প্রায় ৮টন ওজনের ফ্লাই হুইলটি হঠাৎ ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে সাধারন শ্রমিকরা মনে করছেন। এলয় ষ্টীলের তৈরী ফ্লাই হুইল ভেঙ্গে যাওয়ায় ক্রাসারটি মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার জনৈক শ্রমিক জানান, ক্রাসার অচল হওয়ায় শ্রীজা মেটালের সরবরাহকৃত সাড়ে ৩ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ ক্রাসারে আপাতত ব্যবহার করতে হচ্ছে না।

ক্রাসার নষ্টের অজুহাতে সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশের সাড়ে ৩ কোটি টাকার বিলও উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যেমে আত্মসাৎ করার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এফএলএস কিলনের ৫নং ফাউন্ডেশনের ২টি রোলার চাঁদপুর বিটাক থেকে সংস্কার করে আনার পর প্রয়োজনের তুলনায় মাপে বড় হওয়ায় তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এভাবে পর পর দু’বার চাঁদপুর বিটাকে আনা-নেয়া করা হয়েছে রোলার দু’টি। চাদপুর বিটাকে রোলার বারবার আনা-নেয়ার কারনে কারখানার কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এভাবে কারখানার অভ্যন্তরে চলছে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবহেলা। ২০ কোটি টাকার সংস্কার কাজের আগে এফএলএস কিলন দিয়েই উৎপাদন সচল রাখা হয়েছিল।

বর্তমানেও যান্ত্রিক ত্র“টির কারনে এফএলএস কিলন বন্ধ থাকায় এইচইসি কিলন দিয়ে চলছিল উৎপাদন। কিন্তু ক্রাসার নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে ভাঙ্গা পাথরের অভাবে তৈরী করতে না পারায় ৩ দিন ধরে কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে আছে। কারখানার মুল এফএলএস ক্রাসারটি নষ্ট হওয়ায় মারাত্মক অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে ছাতক সিমেন্ট কারখানা। ফলে কারখানা সংস্কারের কাজে সরকার প্রদেয় ২০কোটি টাকায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হয়নি। ২০১৪ সালের ১৭ডিসেম্বর থেকে কারখানায় ২০কোটি টাকার সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছিল।[ads2]

শুরুর ৮ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৫সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এইচইসি কিলন মেরামত কাজ সম্পন্ন করে পরীক্ষামুলকভাবে চালু করার শর্তে কাজের দায়িত্ব ভার গ্রহন করেছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্যাথওয়েল্ড কনস্ট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ি ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে কিলন চালুর জন্যে ৮ঘন্টা গ্যাস পার্জিং করে কিলন রুটেশনে দেয়ার পর কিলনে মারাত্মক ক্রটি দেখা দেয়। পরে ৯ নভেম্বর রাতে ২শ’৫০ মেট্রিক টন ক্লিংকার উৎপাদনকারী এইচইসি কিলনটি অবশেষে চালু করা সম্ভব হয়েছিল। বর্তমানে মুল ক্রাসারের ফ্লাইহুইল ভেঙ্গে যাওয়ায় কারখানায় উৎপাদন ৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

এ পরিস্থিতির জন্য কারখানার কতিপয় কর্মকর্তাদের দায়ি করছেন সাধারন শ্রমিকরা। তাদের দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় কারখানাটি স্থায়িভাবে বন্ধেরও আশংকা করছেন স্থানীয়রা। কারখানার দুর্নীতি বন্ধে উচ্চতর তদন্তের প্রয়োজন বলে সাধারন শ্রমিকরা দাবী তুলেছেন। এফএলএস কিলন হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার প্রশ্নে ক্যাথওয়েল্ড কনষ্ট্রাকশনের পিএম গোলাম কিবরিয়া আজাদ জানান, প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহে বিলম্বজনিত কারনে হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসনাত চৌধুরী কারখানার আভ্যন্তরিন কোন বিষয় নিয়ে বিসিআইসির চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া গন-মাধ্যমের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এদিকে কারখানাটিকে সংস্কার ও আধুনিকায়নে সরকার কর্তৃক সম্প্রতি বরাদ্দকৃত ৬৬৭ কোটি টাকার কাজ শুরুর আগে দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তাদের কারখানা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবী তুলেছেন সাধারন শ্রমিকরা।[ads1]

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More