প্রশ্ন : কেমন আছেন?
শাহ মোয়াজ্জেম : জ্বি, ভালো আছি।
প্রশ্ন : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
শাহ মোয়াজ্জেম : দেখুন, রাজনীতি বলে কিছু নেই। বর্তমানে রাজনীতির পরিস্থিতিই নাই। এখানে একটা দল বা একজন লোক জবর দখল করে দেশ চালাচ্ছে।
উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, রাজনীতি কোথায়? রাজনীতি তো রাজার নীতি। ফকিরনির নীতি কখনও রাজনীতি হয় না। রাজা থাকলে রাজ্য, তাহলে রাজনীতি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ায়। আমরা রাজনীতি পড়ে যাচ্ছি। কিন্তু যা হচ্ছে এটাকে কোনো অবস্থাতেই রাজনীতি বলা যায় না।
প্রশ্ন : তাহলে আপনি বলতে চাইছেন রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে নেই?
শাহ মোয়াজ্জেম : রাজনীতিবিদ কারা? হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা) রাজনীতি করেছে? বহু লোক আছে আমি কারো নাম বলতে চাই না। আজকে উনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রীতে আছে। আমি জানি না উনার কতটুকু ধৈর্য্য আছে।প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য্য থাকা উচিত।
আল্লাহকে আমরা তুই বলে ডাকি না? আল্লাহ কী বেজার হয়? আপন লোককে তুই বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশ শাসন করছে। সমস্ত কিছুর জন্য মানুষতো তার কথাই বলবে। উনি তো একজন বড় মানুষের সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালির সন্তান। রাজনীতি তো উনি করেন নাই জীবনে। রাজনীতির জন্য তাকে বসানো হয়েছে।
প্রশ্ন : ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে গত বছরের চিত্র আর এবারের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন, এটাকে কিভাবে দেখছেন?
শাহ মোয়াজ্জেম : কার মধ্যে আপনি উগ্রতা দেখছেন। যারা ক্ষমতায় আছে তারা বিরোধী দলকে পেটায়, খুন ও গুম করে। আপনি উগ্রতা কোথায় দেখতে পেলেন? এ তো একতরফা। তারপর বদনাম হয় ওরা গোলমাল করছে। খালেদা জিয়ার বিচার হবে। খালেদা জিয়া মানুষ পুড়াইছে? খালেদা জিয়া বলছে মানুষ পুড়াইতে?
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলে মানুষ পোড়ানোর জন্য খালেদা জিয়ার বিচার হবে। খালেদা জিয়া সংলাপের কথা বললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে সংলাপ নেই। খালেদা জিয়া কী মানুষ হত্যা করেছে বা মানুষ হত্যার হুকুম দিয়েছে? এতো এতো মিটিং আপনারা শোনেন। শান্তি ছাড়া, মানুষের মঙ্গল ছাড়া, মানুষের ভালো হয় সেই পথেই তো তিনি (খালেদা) বক্তৃতা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি ক্ষমতায় আছি, লাঠি দিয়ে মেরে বললাম এটা শান্তির জন্য দিলাম! শান্তির জন্য আপনি মানুষ খুন করে ফেললেন। প্রত্যেক দিন শত শত মানুষ গ্রেফতার করছেন শান্তির জন্য! রেপ (ধর্ষণ) হইতেছে শান্তির জন্য! চুরি রাহাজানি কী হচ্ছে না এই দেশে। আপনি সেই দেশে রাজনীতির কথা বলবেন?
প্রশ্ন : আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন তা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
শাহ মোয়াজ্জেম : উত্তরণের পথ আল্লাহ করে দেবে। উত্তরণের কথা আমরা বলতে পারবো না। আমরা দু’আ করতে পারি। আমার নেতা তো শেখ সাহেব ছিলেন, সোহরাওয়ার্দী ছিলেন কোনো সময়ই এসব দেখিনি। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান ও মোনায়েম খানকে হটিয়েছি। গ্রেফতার হয়েছি, হাইকোর্টে গেছি জামিন হয়েছে। গুম, খুন হয় নাই। আজকে যা হচ্ছে তা কোনো মতেই রাজনৈতিক আবহাওয়া রাজনৈতিক পরিম-ল বলা চলে না। যত তাড়াতাড়ি আল্লাহ এগুলো থেকে মুক্তি দেয় ততই মঙ্গল।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আপনি কিভাবে দেখছেন?
শাহ মোয়াজ্জেম : এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। গণজাগরণ মঞ্চ কী বললো এ নিয়ে আপনি হইচই করবেন এটা তো রাজনীতি না। আমি শুধু একটা কাগজে (পত্রিকায়) দেখলাম পাকিস্তানের একজন কর্মকর্তাকে রিপোর্ট করা হয়েছে। এর কী কারণ তা বলা হয়নি, কাগজে আমি দেখিনি। কাগজে না আসলে আমি তো ফরেন অফিসে গিয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করতে পারবো না। পাকিস্তান বা কী করলো, আমরা বা কী করলাম তা আমার জানা নেই।
যুদ্ধের সময় কী হয়েছে এতদিন পর এর জবাব আমি দিতে পারবো না। যুদ্ধের সময় তো তারা আসলেই অন্যায় করছে। খুন করছে, জখম করছে, এই দেশে জ্বালাইছে, পুড়াইছে। আমি ২০ বছর জেল খাটছি, প্রধানমন্ত্রী ২০ দিনও জেল খাটেননি। আমি এ দেশের জন্য কষ্ট করছি।
প্রশ্ন : ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছেদ খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য?
শাহ মোয়াজ্জেম : সংখ্যা নিয়ে তো বিতর্ক থাকতেই পারে। আমরা মুসলমানেরা বলি ১ লাখ ৬০ হাজার পয়গম্বর। মতান্তরে ২ লাখ ৬০ হাজার পয়গম্বর। কোনো লিস্ট আছে? হিন্দুরা বলে ৪০ কোটি দেব-দেবী আছে। প্রশ্নটা অপ্রয়োজনীয়, ওনার (খালেদা) বিরুদ্ধে কিছু বলতে হবে তাই বলা।
“আমি তো পরপর দুইবার চীফ হুইপ ছিলাম। এ পরিসংখ্যান নেয়ার মতো কোনো মন্ত্রণালয় ছিলো না। যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের অনেককে দুই হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আমরা গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, জেলায় যদি দেখি তাহলে তো খুব বেশি লোক পাই না। কাজেই প্রশ্ন তো থাকতেই পারে।”
“শেখ সাহেব (শেখ মজিবুর রহমান) ৩০ লাখ (শহীদের সংখ্যা) কিভাবে বলেছেন আমি জানি। উনি দুনিয়াতে নেই। আমি এ বিষয় তর্কে আনবো না। উনি যেটা বলছেন সেটাই চলছিলো। তবে প্রশ্ন থাকতেই পারে। সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন আছে। স্বয়ং আল্লাহ আছে কি না তা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন আছে। কিছু লোক তো আল্লাহকে বিশ্বাসও করে না, নাস্তিক তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এমন কোনো কথা বলেন নাই, যে তাকে অপবাদ দিয়ে বলতে হবে পাকিস্তানে ফেরত যাও।”
“খালেদ জিয়াকে নিয়ে যে এসব কথা বলছে তার নাম বলবো না সে তো তখন মায়ের গর্ভে ছিল। খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জেল খাটছে। যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে বীর উত্তম টাইটেল পেয়েছে। তার স্ত্রীকে যদি বলা হয় তুমি পাকিস্তানে চলে যাও এটা তো বেয়াদবি ছাড়া কিছু নয়।”
প্রশ্ন : খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, তাহলে এতোদিন পরে এসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলেছেন?
শাহ মোয়াজ্জেম : এটা উনাকে (খালেদা জিয়া) জিজ্ঞেস করেন। আমি জানি না। যতটুকু কাগজে দেখেছি। তাতে এমন কিছু ভুল দেখিনি। সব জিনিস নিয়েই বিতর্ক থাকে। কে কখন কী বক্তৃতা দিবে এটা বলা যায় না। আর সব সময় সব কিছু নিয়ে কথা বলা যায়। এতোদিন ততদিন কথা না, মানুষ যতদিন আছে ততদিন কথা থাকবে এবং অতীতের কর্মকা-ের হিসেব নিকেশ তর্ক বিতর্ক থাকবেই।
আপনাকে ধন্যবাদ।
শাহ মোয়াজ্জেম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
জাগো নিউজ