স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ধ্বংসাবশেষ পদ্মা নদীতে ভেসে উঠেছে। ঈশ্বরদীর পাকশী অংশে ভেসে উঠা এই ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য প্রতিদিনই শত শত মানুষ নদীর তীরে ভিড় জমাচ্ছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ প্রান্তে দেশের সর্ববৃহৎ এবং এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজের’একটি স্প্যান বোমার আঘাতে নদীতে খসে পড়ে। নদীতে ভেসে উঠা এই লৌহ খণ্ডটি হার্ডিঞ্জ সেতুর ধ্বংসপ্রাপ্ত স্প্যানের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় মাসখানিক আগে নদীর দক্ষিণে লক্ষীকুন্ডা এলাকায় জেলেরা মাছ ধরার সময় তাদের জাল পানির নীচে ব্রিজে অংশ আটকে যায়। জাল ছাড়াতে জেলেরা নদীতে ডুব দিয়ে এই বিশাল লৌহ খণ্ডের অস্তিত্বের সন্ধান পায়। ইতিমধ্যে শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে পানি অনেক কমে গেছে। ফলে এখন উপর হতেই এই লৌহখণ্ডের অংশবিশেষ দৃশ্যমান হয়। এরমধ্যে জেলেরা আরও দুটি স্প্যানের অংশের সন্ধান পায়। এগুলোও এখন পানির উপরে ভেসে উঠেছে।
শুক্রবার সরেজমিনে নৌকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে যেয়ে দেখা যায়, নদী তিনটিতে লৌহখণ্ডের অংশবিশেষ পানির উপরে ভেসে উঠেছে। একটি বড় আকারের এবং দুটি ছোট আকারের খণ্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। অনেকেই নৌকা ভাড়া করে হাডিঞ্জ ব্রিজর এই খণ্ড দেখার জন্য প্রতিদিনই ভিড় করছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক পাকশীর অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭১ সালে যশোরে পাকহানাদার বাহিনীর পতন হলে তারা ১৪ ডিসেম্বর একটি ট্রেনে করে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও রসদ নিয়ে ঈশ্বরদীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। উদ্দেশ্য ঈশ্বরদীতে সমবেত হয়ে প্রতিরোধ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। পাকবাহিনী এসময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভেড়ামারা প্রান্তে এসে থামে এবং পাকসেনাদের অনেকেই পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য পাকশীর পাকসেনারা আগে থেকেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর একটি ট্যাংক রেখে দিয়েছিল। এছাড়াও পাকবাহিনী ব্রিজে ডিনামাইটও সেট করে রেখেছিল। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে ভারতীয় মিত্র বাহিনী পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য বিমান থেকে ব্রিজর উপর বোমা বর্ষণ শুরু করে।
অধ্যাপক কালাম আরও জানান, মিত্র বাহিনীর বোমা বর্ষণ ও পাকবাহিনীর ডিনামাইটের ডাবল চার্জে ব্রিজের ১২ নম্বর এবং পাকশী প্রান্তের ৪ নম্বর স্প্যানটি এসময় ভেঙ্গে পড়ে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারের অফিস, ব্রিজর মোট ১৫টি স্প্যানের ১২ নং এবং পাকশী প্রান্তের ৪নং স্প্যানটি বোমার আঘাতে নদীতে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এব্যাপারে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে জানান, স্প্যানের অংশ তিনি সরেজমিনে দেখে এসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Prev Post
Next Post