‘গুমের দেশে’ গিয়ে বাবাকে ফিরিয়ে আনতে চায় ছোট্ট হৃদি

0
ফাইল ছবি : খালেদা জিয়ার কাছে বাবার কথা জিজ্ঞেস করছে ছোট্ট হৃদি
ফাইল ছবি : খালেদা জিয়ার কাছে বাবার কথা জিজ্ঞেস করছে ছোট্ট হৃদি

[ads1]ঢাকা : ‘গুমের দেশে’ গিয়ে বাবাকে ফিরিয়ে এনে তার সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করতে চায় গুম হওয়া বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে হৃদি। এ জন্য সরকারের কাছে ‘গুমের দেশে’ যাওয়ার একটি টিকিট চায় ছোট্ট নিষ্পাপ এই মেয়েটি।

রোববার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলে হৃদি। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করা হয়।

মায়ের কোলে উঠে মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে ছোট্ট হৃদি বলে, ‘আমার বাবা গুমের দেশে গেছে। আমিও সেখানে যাবো। সেখানে গিয়ে বাবাকে খুঁজে নিয়ে আসবো। বাবাকে ছাড়া ভালো লাগে না। বাবাকে নিয়েই ঈদ করবো। আমায় গুমের দেশে যাওয়ার একটি টিকিট দাও।’

নিষ্পাপ হৃদির এমন আবেগঘন কথা মিলনায়তনে উপস্থিত সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তারা।[ads2]

গুম হওয়া ৭৯নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খালিদ সোহেলের স্ত্রী শাম্মিন সুলতানা বলেন, ‘ঈদের কোনো খুশি এখন আমাদের আর স্পর্শ করে না। পরিবার থেকে সুখ হারিয়ে গেছে। পেছনের ‍দিনগুলি বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলি কিভাবে পার করবো, তা জানি না। কারণ, স্বামী ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দয়া করুন। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে দয়া করুন।’

২০১৩ সালে গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন আঁখি বলেন, ‘ভাইকে গুম করার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবারের আশাকেও গুম করে ফেলা হয়েছে। আমাদের সামনে এখন ঘোর অন্ধকার। ভাইকে হারিয়ে আমরা কিভাবে দিনযাপন করছি, তা আপনারা (উপস্থিত নেতাকর্মী) জানেন না। চরম দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে আমাদের দিনযাপন করতে হচ্ছে।’ এ সময় ভাইকে ফিরে পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

গুম হওয়ার পর ফিরে আসা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন বলেন, ‘দীর্ঘদিন গুম করে রেখে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়া হয়েছে। আমি যেদিন বের হবো সেদিন রাতে ফরিদপুরের একটি নির্জন বাড়িতে আমাকে বেঁধে রাখা হয়। তখন আমার মনে হয়েছিল- ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সুমন ভাই- এদের সাথে হয়তো দেখা হয়ে যাবে। কিন্তু হলো না।’[ads1]

এ সময় গুম হওয়াদের ফিরিয়ে আনতে নেতাকর্মীদের ঘরে বসে না থেকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার জঙ্গি পালে, পোষে ও তৈরি করে। অথচ আমাদের দেশে কোনো জঙ্গি ছিল না। এই সরকার আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখাতে চায়, এখানে জঙ্গি আছে। আর এই জঙ্গি দমন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকা দরকার।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই সরকার জঙ্গি তৈরি করেছে। কিন্তু এখন তা আর সামলাতে পারছে না।’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনে অনেক কষ্ট। তবু সান্ত্বনা, খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। তাই বিএনপির নেতাকর্মীদের যারা গুম করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেইসব সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের ব্যবস্থা করুন। কারণ, যেভাবেই হোক আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি সেটা না করেন, তাহলে এর (গুম) দায়-দায়িত্ব আপনাকেই (প্রধানমন্ত্রী) নিতে হবে। আজ নয়তো কাল, ২০৪১ সালের পরে হলেও তা নিতে হবে, মাফ হবে না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন প্রমুখ।[ads1]

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More