গাজীপুর: ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই বিএনপি-জামায়াত দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে। আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছি। আর তারা পেট্রোলবোমা মেরে সাধারণ মানষকে হত্যা করছে। মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। যারা অকারণে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, তারা কি মানুষ, না দানব? এটা কি রাজনীতি? বিএনপি জামায়াত জোট যা করছে তা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। আমরা এই দানবদের কোনো ছাড় দেবনা। দানবের কাছে মানুষ হারতে পারে না।’
বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাংলদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৫তম জাতীয় সমাবেশের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই দানবদের প্রতিহত করে দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনবো। বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোনো ছাড় দেবনা। যারা মারা যাচ্ছেন, তারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, খালেদা জিয়ার কাছে এসব সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য নাই। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের পবিত্র দায়িত্ব।’
এ সময়ে অন্যদের উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মো. এনামুল বারী, সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌ বাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিড়াল এম ফরিদ হাবিব, বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, গাজীপুর জেলা আনসার কম্যান্ডান্ট মীর মো. আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়তের প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা ধর্মের কথা বলে কিন্তু তারা বিশ্ব ইজতেমা, মহানবীর জন্ম-ওফাত দিনেও হরতাল-অবরোধ দিয়েছে। ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এরা দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘গত বছর সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী যে নজিরবিহীন নাশকতা চালানো হয় তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথ রক্ষায় আনসার বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের পর তা কমে যায়। রেলপথের নাশকতা কমাতে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে আনসার সদসদেরও দায়িত্ব দেয়া হয়।’
আনসারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আনসার বাহিনীর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এই বাহিনীকে জাতীয় পতাকা প্রদান করা হয়। ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকরি স্থায়ীকরণের সময়সীমা ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ৯ বছর করা হয়েছে। আরো কমানো যায় কী-না তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সকলের মনে রাখা প্রয়োজন দেশের জনগণ সবার উপরে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণের জানমালের হেফাজত করা সকলের পবিত্র দায়িত্ব। সকলের সহযোগিতায় ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরমুক্ত ও প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে উন্নয়নের পথ ধরে সন্মুখে এগিয়ে যাবো। কোনো বাধাই আমাদের রুখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে আনসার একাডেমির একটি মাঠে অবতরণ করেন। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান। সেখানে তিনি খোলা জিপে করে আনসার বাহিনীর প্যারেড গ্রাউন্ড পরিদর্শন, আনসার বাহিনীর সালাম গ্রহণ করেন এবং মনোজ্ঞ সম্মিলিত কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে উপভোগ করেন। তিনি বক্তব্য শেষে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৫তম জাতীয় সমাবেসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ২ জনকে বাংলাদেশ আনসার পদক (সাহসিকতা), ১৫ জনকে রাষ্ট্রপতি আনসার পদক (সাহসিকতা), ২ জনকে রাষ্ট্রপতি ভিডিপি পদক (সাহসিকতা), ৭ জনকে বাংলাদেশ আনসার (সেবা) পদক, ৩৮ জনকে রাষ্ট্রপতি আনসার (সেবা) পদক, ৮ জনকে বাংলাদেশ ভিডিপি (সেবা) পদক ও ২৫ জনকে রাষ্ট্রপতি ভিডিপি (সেবা) পদক তুলে দেন।