দেশ অচলের মিশনে শিবিরের ৩৭ নেতা, পরিকল্পিত ছকে শিবির

0

CTG Shibirচট্টগ্রাম: দেশের ৩৭টি জেলায় একযোগে বড় ধরনের সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশ অচলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ৩৭ নেতা। আন্দোলনকারী জোটের শীর্ষ পর্যায় থেকে শিবিরকে সহিংসতা সৃষ্টির এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩৭ নেতার মধ্যে একজন এনামুল কবির (৩১) চট্টগ্রামে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলে সতর্ক হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। এতে ভেস্তে গেছে শিবিরের ৩৭ জেলায় সহিংসতার পরিকল্পনা।

নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে থাকা এনামুল জিজ্ঞাসাবাদে ৩৭ নেতা, নির্দেশদাতা এবং সমন্বয়কারীর নাম প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রামে সহিংসতার পরিকল্পনার বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে এনামুল। তিনি জানিয়েছেন,৩৭ কেন্দ্রীয় নেতা ৩৭টি জেলায় বসে স্থানীয়দের মাধ্যমে সহিংসতা সৃষ্টির বিষয়টি সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সহিংসতার মধ্য দিয়ে সারা দেশ উত্তপ্ত করা গেলে সরকারের পতন ঘটত বলে তারা মনে করেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, এনামুল কিছু কিছু নেতার নাম আমাদের জানিয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দিয়েছে। আমরা তার দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করছি। এনামুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি আসলে উচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।

২০ ফেব্রুয়ারি এনামুলকে নগরীর বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বাসে আগুন দেয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারটি টিম গঠন করে নগর পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত, অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বন্দর) মোস্তাক আহমেদ এবং কোতয়ালি জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফের নেতৃত্বে পৃথক চারটি টিম গঠন করা হয়। প্রত্যেক টিমে একজন করে পরিদর্শক ও একজন করে উপ-পরিদর্শক রাখা হয়।

সূত্র জানায়,রিমান্ডে প্রথম দু’দিন মুখ খুলেননি এনামুল। তবে পুলিশের ‘ঘুমাতে না দেয়ার’ কৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানেন তিনি। মঙ্গলবার থেকে এনামুল মুখ খুলতে শুরু করেন।

বড় দলের চাপে শিবির
পুলিশ সূত্রমতে,জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী ২০ দলের মধ্যে বড় দলগুলো দেশে হরতাল-অবরোধ চাঙা হচ্ছেনা কেন, তা নিয়ে চিন্তিত। বর্তমান সরকারের আমলে ‘জঙ্গি’ আন্দোলনে যেহেতু শিবিরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে, সেজন্য তাদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপ দেয়া হয়। শিবিরকে সেই পরিকল্পনায় ছাত্রদলকেও সঙ্গে নেয়ার কথা বলা হয়।

নগর পুলিশ কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, এনামুল জানিয়েছে, আন্দোলনকারী বড় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে তারা দেশের ভেতরে নাশকতা সৃষ্টি করতে রাজি হয়েছে। তবে দল কিংবা নেতৃত্বের বিষয়ে ডিটেইলস কিছু এখনও বলেনি। আস্তে আস্তে বিষয়টি এনামুল পরিস্কার করবে বলে আশা করছি।

দায়িত্ব বাগেরহাটে,বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে চট্টগ্রামে
পুলিশ সূত্রমতে,জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল জানিয়েছে,কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে নির্বাচিত জামায়াতের সাবেক সাংসদ হামিদুর রহমান আজাদ আন্দোলনকারী জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনিই মূলত শীর্ষ নেতৃত্বের ম্যাসেজ শিবিরকে এনে দেন। এরপর শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় ৩৭ নেতাকে ৩৭টি জেলায় সহিংসতা সৃষ্টির বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়।

সূত্র জানায়,এনামুল কবির বর্তমানে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমাজসেবা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শিবিরের শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন। কর্মপরিষদ থেকে তাকে বাগেরহাটে সহিংসতা সৃষ্টির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব চট্টগ্রামে আন্দোলন চাঙা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ। এজন্য এনামুলকে বিশেষ বার্তা ও দায়িত্ব নিয়ে বন্দরনগরীতে পাঠানো হয়।

সূত্রমতে,৩৭ কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে মেহমান ও আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাইমিনুল কবির চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা।

সংস্কৃতি সম্পাদক মোস্তফা মনোয়ার দক্ষিণ চট্টগ্রাম,কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। তার বাড়ি বগুরায়।

নোয়াখালীতে সহিংসতা সৃষ্টির কাজ সমন্বয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো.রিয়াদ। তার বাড়ি শেরপুর জেলায়।

সিলেটে দায়িত্ব পেয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম মাশরুর হোসাইন। তার বাড়ি চট্টগ্রামে।

মাগুরায় শিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা সম্পাদক মো.মহিউদ্দিন দায়িত্ব পেয়েছেন। তার বাড়ি বগুড়ায়।

বাকি জেলায় যাদের নাম এসেছে তাদের নাম ও পদবি পুলিশ যাচাইবাছাই করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, চট্টগ্রামে মোহাইমেনের নেতৃত্বে কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন মহানগর (উত্তর) শাখা শিবিরের সভাপতি নূরুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, মহানগর (দক্ষিণ) শাখার সভাপতি এম এইচ সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক রাজেকুল ইসলাম বাপ্পি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বায়তুল মাল সম্পাদক রাকিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আদিলুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি রাসেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান।

এছাড়া সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাবেক সাংসদ ও প্রভাবশালী জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে রাজি করাতে পারলে তাকে এবং তার অনুসারীদেরও সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা ছিল এনামুলের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার ‍বাংলানিউজকে বলেন, এনামুল অনেকের নাম বলেছে। আমরা যাচাইবাছাই করছি।

তেলের ডিপোতে আগুন, বন্দর অচলের পরিকল্পনা
সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল জানিয়েছেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা ডিপো থেকে তেল সরবরাহ না করতে প্রথমে দুইদিন তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হুমকি দেবে। এতে যদি কাজ না হয় তৃতীয় দিন ডিপোতে আগুন দেয়া হবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটির গেইটে পণ্যবোঝাই গাড়িতে আগুন দেয়ার পরিকল্পনা ছিল শিবিরের। এতে বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেয়া বন্ধ হয়ে যেত বলে ভেবেছিলেন শিবির নেতারা।

নগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে হুমকি, তারপর আগুন-এই কৌশল নিয়ে এগুচ্ছিল শিবির। এনামুলকে যদি আমরা সঠিক সময়ে গ্রেপ্তার করতে না পারতাম, তাহলে সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে বড় ঘটনা ঘটে যেত।

সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল জানিয়েছেন, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপোতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের নিজস্ব লোকজন আছে। তাদের মাধ্যমে ডিপোতে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, তেলের ডিপোতে জামায়াত-শিবিরের সোর্স আছে। ইন্টারনাল কানেকশন ব্যবহার করে ডিপোতে আগুন দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল শিবির।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More