বিএনপির সংলাপ-আহ্বানে আগ্রহ নেই আ. লীগের

0

28f88033c4072d85dcc2cf72fd57b894-বিএনপির সংলাপ-আহ্বান আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির আহ্বানে সাড়া দেওয়া কিংবা দলটিকে ছাড় দেওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই ক্ষমতাসীনদের ভেতরে। অথচ, চলতি বছরের শুরুতেই হঠাৎ নমনীয় রাজনৈতিক আচরণ শুরু করে বিএনপি। আর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৫ জানুয়ারি দলটির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত জনসভায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যে। সেখানে তিনি ‘চলমান সংকট’ নিরসনের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান। এছাড়া, ওই সময় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কর্মসূচিরও ঘোষণা দেননি। বিএনপির এ নমনীয় অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হলেও ক্ষমতাসীনরা এ ব্যাপারে ভাবলেশহীন।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ‘এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না’ ঘোষণায় অনড় আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষনেতারা মনে করেন, দেশে কোনও সংকট নেই, তাই সংলাপেরও প্রয়োজন নেই। বরং বিএনপির সংলাপের আহ্বানকে আওয়ামী লীগ নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ৫ জানুয়ারি জনসভা থেকে খালেদা জিয়া সংলাপের আহ্বান করে নিজেকে সৎ বানানোর চেষ্টা করেছেন মাত্র। তিনি বলেন, বিএনপি যত ইতিবাচক বক্তব্যই দিক, বিএনপির ৯২ দিনের জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যা করার যে ঘৃণিত কাজ, সেটা জনগণ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষেও বিএনপির সেই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং তাদের যত প্রস্তাবই আসুক, আওয়ামী লীগের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।

নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো মনে করে, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে, জনগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, সরকার শক্তিশালী। এখন কেন তাদের ডাকে সাড়া দিতে হবে। এছাড়া, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এখন মৃত। মৃত দলের আহ্বানে সাড়া দিলে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে দুর্বল দল হিসেবে প্রমাণিত হবে। কোনও প্রয়োজনীয়তা ছাড়া সংলাপ-সমঝোতার উদ্যোগ আওয়ামী লীগের জন্যে আত্মঘাতী হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, এদেশে অপরাজনীতির ধারা শুরু করেছে বিএনপি। জ্বালাও-পোড়াও, নির্বিচারে মানুষ খুন, জনগণের সম্পদহানি ঘটেছে তাদের অপরাজনীতির কারণে। এগুলোর বিচার ছাড়া তাদের ডাকে সাড়া দিলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারা বলেন, বিএনপি আগে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করতে হবে, জনগণের কাছে মাপ চাইতে হবে। তারপর বিবেচনা করা হবে, তাদের প্রস্তাব বা আহ্বানে সাড়া দেওয়া হবে কি না।  অপরাধ স্বীকারের পরই বোঝা যাবে বিএনপির প্রকৃত অবস্থান। এত কিছুর পর তাদের মুখে সংলাপের আহ্বান মানায় না। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সংলাপ আহ্বান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, দেশে এ মুহূর্তে কোনও সংকট নেই, যা নিয়ে সংলাপ হতে পারে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও সংলাপে বিশ্বাস করে। কিন্তু এ মুহূর্তে দেশে কোনও সংকট নেই। সুতরাং সংলাপেরও দরকার নেই।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। সংলাপের সময় ও প্রয়োজনীয়তা দুটোই চলে গেছে। তিনি বলেন, এখন কেন সংলাপ করতে যাব। আলোচনার প্রস্তাব তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া তো সংলাপে রাজি হননি।

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, যখন কোনও সংকট-সমস্যা থাকে, তখন সমাধানের পথ বের করতে আলোচনা, সংলাপ এ সব করতে হয়। এখন তো তেমন কোনও কিছু দেখছি না। তাহলে এই আহ্বান কেন? তিনি বলেন, বিএনপি মৃত। মৃতদের সঙ্গে জীবিতদের সংলাপ কী করে হবে। মৃত মানুষ কি কথা কইতে পারে।

সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে রাজনীতি করে। তিনি বলেন, সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তুলে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। আর আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাই বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সংলাপের প্রয়োজন জনগণের নেই, আওয়ামী লীগেরও নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More