বিএনপি-জামায়াত সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে

0
hasinaবিএনপি-জামায়াত জোট বর্তমান সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীকে ষড়যন্ত্রকারীদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে যেমন ষড়যন্ত্র করে চলেছে তেমনি ইসলামের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে অবস্থানকালীন সময়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এখন এতোটাই বেপরোয়া যে তারা সকলে মিলে এখন আমাকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না। তারা (বিএনপি-জামায়াত) যাদের সাথে হাত মিলিয়েছে, তারা প্রতিনিয়তই ফিলিস্তিনে নারী ও শিশু হত্যা করে যাচ্ছে।’
ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ বিষয়ে বাংলা প্রবাদ উদ্বৃত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘রতনে রতন চেনে।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফের সভাপতিত্বে সভায় আরও অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান। সর্ব-ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি অনিল দাশগুপ্ত ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুদ্দিন খান এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুচক্রী ও ঘাতকচক্র দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, ইসলামের বিরুদ্ধেও তাদের ষড়যন্ত্র চলছে। তারা আসলে বাংলাদেশ চায় না এবং তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে অসংখ্য মানুষ হত্যা এবং সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটতরাজ করেছে। এখনও তাদের সেই চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও সরকার উৎখাতের জন্য গত বছরের প্রথম ৩ মাসে বিএনপি-জামায়াতের মানুষ হত্যা ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পোড়া মানুষের লাশের ওপর দিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ঘোষণা দিয়েছিলেন—সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না এবং তার আন্দোলন ছিল, মানুষ হত্যার আন্দোলন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে সে সময় সাধারণ মানুষ এমনকি নারী, শিশু, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পর্যন্ত রেহাই পায়নি। সেই দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বেগম জিয়া আজ পর্যন্ত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ জনগণ বিএপি-জামায়াতের সেই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণের প্রতিরোধের মুখে বিএনপি-জামায়াত তাদের সন্ত্রাস বন্ধ করে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়।’ ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’, বলেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াত অপরাধী চক্র ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে সারাদেশে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যা করেছে—উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেনি, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও না।’
দেশের সাস্প্রতিক কিছু গুপ্তহত্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তারা মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার পাদ্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেছে বেছে খুন করছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা সম্প্রতি ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাজিনকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করেছে।’
বিএনপি-জামায়াত মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলায় ও একের পর এক রায়ে তাদের ফাঁসি কার্যকর হতে থাকায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি মোটেও স্বস্তিতে নেই বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং গণহত্যা চালায় তারাই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালতে চিহ্নিত হয়েছে এবং বিচারের রায়ে তাদেরই ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি-জামায়াতের মন্ত্রিত্ব প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা এসব মানবতাাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল তাদেরও বিচার করা হবে। তারাও সমান অপরাধে অপরাধী।’
আমাদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকাকে পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেয়া চক্রকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির ঘৃণা করা উচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা এমনভাবে হওয়া উচিত যেন পরাজিত শক্তি এই ঘৃণাটা উপলব্ধি করতে পারে।’
১৯৮১ সালের এই দিনে (১৭ মে) প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সে সময় বিদেশে অবস্থানকালীন পরিবারের দুজন মাত্র জীবিত সদস্য বঙ্গবন্ধুর বড়মেয়ে শেখ হাসিনা ও ছোটমেয়ে শেখ রেহানাকে আর দেশে ফির‡তে দেয়া হয়নি। দুজনেই ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় সংঘটনের সময় জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তার অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিঃশেষ করার জন্য দলের অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়।’
তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছয়বছর প্রবাসে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এক ঝঞা-বিক্ষুব্ধ দিনে দেশে ফিরে আসি। ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ, দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়।’
শূন্য হাতে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন—এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সাহস এবং প্রেরণা ব্যতীত কোনো সম্পদ ছিল না তার কাছে।’

তিনি বলেন, ‘যখন দেশে ফিরে আসলাম, লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা আমাকে সিক্ত করলো। কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যার ভালোবাসাই সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত ছিল—তিনি সেখানে ছিলেন না।’
জাতির পিতা ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ, পরিবারের ভাগ্যহত সদস্যদের স্মরণ করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রবাসী বাংলাদেশি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, বুদ্ধিজীবী এবং দেশের সাধারণ জনগণকে তার পরিবার এবং দলের দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এটা আপনাদের সাহস ও ভালোবাসারই ফল, যে কারণে আজ আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।’
পঁচাত্তর পরবর্তী স্বৈরশাসকদের ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তারা পরাজিত শক্তির সঙ্গে মিলে দেশের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিস্মাৎ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় সরকারের নানাবিধ সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না।’ খবর-সমকাল
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More