নতুন বছরের শুরু থেকেই খারাপ সময় পার হচ্ছে জামায়াতের। রাজনীতির মাঠে এখন পর্যন্ত কোনো নিরাপদ রুট পাচ্ছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ভূমিকা রাখাসহ যুদ্ধচলাকালীন স্বদেশি সাধারণ মানুষকে গণহত্যার অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করার পর থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দলটি। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য পার্টির ডজনখানেক শীর্ষ নেতার বিচার সম্পন্ন ও কয়েক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর মনোবল ভেঙে পড়েছে ইসলামী অনুকরণ ও অনুসরণ দাবিদার এ দলটির নেতাকর্মীদের।
এদিকে হাইকোর্ট কর্তৃক পার্টির নিবন্ধন বাতিল, নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা থেকে সংগঠনটির নাম মুছে ফেলা, জাতীয়, পৌর, উপজেলা ও আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় রাজনীতিতে এক্সিট রুট চাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে আপস না করে বিকল্পভাবে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন চিন্তাভাবনা চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের নীতি-নির্ধারণী মহল। দলটির কয়েক প্রভাবশালী ও বিত্তশালী সমর্থকের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে নেতাদের বিচারের ব্যাপারে টুঁ-শব্দ না করে শুধু রাজনীতির পথটাকে পরিষ্কারভাবে ব্যবহারের সুযোগ চাচ্ছেন পার্টির চিন্তাশীল নেতাকর্মীরা। তারা মানবকণ্ঠকে বলেন, নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারটুকু পাওয়া গেলে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিতে পারবেন। তাহলে জামায়াত রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হলেও বিকল্পভাবে ঘুরে দাঁড়াবার আশা জাগিয়ে রাখবে।
অপরদিকে দলটির নীতিনির্ধারণী মহলের কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এসব তথ্য সরাসরি না পাওয়া গেলেও মাঠের নেতাকর্মীদের কাছে এ ধরনের তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েক নেতা জানিয়েছেন, আগামী দিনে জামায়াতের মাঠে রাজনীতি করা খুব কঠিন হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াতকে সরকার নানা ধরনের মিথ্যা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত করে অপপ্রচার চালিয়ে সুনাম ক্ষুণ্নে অব্যাহত রাখছে। যার ফলে দেশ-বিদেশে জামায়াতের রাজনীতি এখন প্রশ্নবিদ্ধ। একইভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার টার্গেট হয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক সদস্য বলেন, রাষ্ট্রীয়যন্ত্রের শিকার জামায়াতের ঘুরে দাঁড়াতে অনেক সময় লাগবে। বিগত ৫ বছরে জামায়াতের যে ক্ষতি হয়েছে, অতীতে এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি দলটির নেতাকর্মীদের। এ অবস্থা থেকে কেটে না উঠলে অদূর ভবিষ্যতে জামায়াত নামে সংগঠনের পরিচয় সংকটে ভুগতে পারে। আর এ পরিচয় ধরে রাখতে হলে যে কোনো কৌশলে হোক, দলকে সব ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবে কোন ধরনের কৌশলে তা পরিষ্কারভাবে কিছু বলতে চাননি জামায়াত নেতারা।
এদিকে জামায়াতের একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই এ কৌশলে হাঁটতে যাচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতারা। এতে করে জোটেও ফাটল ধরবে না, রাজনীতির মাঠ থেকেও ছিটকে পড়বে না জামায়াত। প্রয়োজনে জামায়াতের কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে আপসের কথা বললেও শীর্ষ নেতারা এ মুহূর্তে তা বিবেচনায় রাখছেন বলে জানিয়েছেন। জামায়াত সূত্রে আরো জানা গেছে, গেল বছরও দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল বিপর্যস্ত। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিলেও রাজপথে প্রভাব দেখাতে সক্ষম হয়নি। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে বেশি। এখন পর্যন্ত সে অবস্থায়ই রয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। দিন যতই ঘনিয়ে যাচ্ছে ততই জামায়াতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে। মাঠে হারাচ্ছে সাংগঠনিক ভিত্তি।
এদিকে দলটির নেতাদের মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধের ভয় পুরোপুরি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের কয়েকজন সুহৃদ। তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের বিচার সম্পন্ন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দল নিষিদ্ধ হলে লাখ লাখ নেতাকর্মী হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর তাদের ধরে রাখতে দল নিষিদ্ধ হলেও সরকারের দূর-নিকটবর্তী থেকে রাজনীতিতে বিকল্প এক্সিট রুট চাচ্ছে জামায়াত।
Prev Post
Next Post